‘একাত্তরের পরি’র কথা

Post Thumbnail

২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় ‘একাত্তরের পরি’ নামে আমার লেখা আর একটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এখানে আমি গ্রন্থটি সম্বন্ধে দুই একটি কথা বলতে চাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, ‘২৩ বছরের করুণ ইতিহাস, বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষ নর নারীর আর্তনাদের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’

এই উপন্যাসের পরতে পরতে উঠে এসেছে পাকিস্তানের অবাঙালি শানসকদের শাসনের নামে বাঙালিদের উপর শোষণ আর নির্যাতনের চিত্র। তাছাড়াও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখের চরম আত্মত্যাগ, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শদীদের চরম আত্মত্যাগ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির গৌরবময় ইতিহাস এখানে উঠে এসেছে।

আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। আমার উপন্যাসে সেই সব ঘটনাসমূহ বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সর্বোপরি আমার উপন্যাসটি লেখা হয়েছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে। এই গ্রন্থটিতে সেই মুক্তিযোদ্ধার জীবনের দুঃখ, বেদনা ও তার জীবনের নানা টানপোড়েনের কাহিনী উঠে এসেছে।

কাহিনী সংক্ষেপ : গ্রামের একজন কৃষক আজিম দেশপ্রেমে উদ্বুৃদ্ধ হয়ে বাড়িতে বিধবা মা, যুবতী স্ত্রী ও ১১ মাসের কন্যা পরিকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতে চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার সারা অন্তর জুড়ে থাকা প্রিয় কন্যার কথা মনে পড়ার পর সে যেন দুঃখের সাগরে ভেসে যায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফাঁকে ফাঁকে তার মনের জানালায় ভেসে ওঠে প্রিয় কন্যার মুখ। তবুও যুদ্ধ বলে কথা। সকল দুঃখকে মাটি চাপা দিয়ে সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারপর ভংঙ্কর যুদ্ধ এবং প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে কেটে যায় ৯ মাস।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়ি ফিরে আজিম জানতে পারে গত ভাদ্র মাসের বন্যার সময় তার প্রিয় কন্যা পরি কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। দুঃখের কাহিনি এখানেই শেষ না। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে গাঁয়ের সব লোক পালিয়ে থাকায় পরিকে দাফন করাও সম্ভব হয়নি। একখণ্ড কাপড়ে জড়ায়ে অভাগা মা তাকে বানের পানিতে ভসিয়ে দিয়েছিল। এই কথা শুনার পর আজিম পাগলের মত প্রলাপ বকতে বকতে বলতে থাকে, যুদ্ধে বন্ধু আবুলসহ কত সহযোদ্ধা শহীদ হলো। আমি কেন শহীদ হলাম না। শহীদ হলে আজ আমাকে এতো নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হতো না। আমার মতো অভাগা মুক্তিযোদ্ধা বুঝি বাংলাদেশে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই হৃদয়ভাঙা ব্যথা আমি কেমনে সইবো? এই হলো আমার উপন্যাসের মূল ঘটনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রিয় কন্যা হারানোর দুঃখ বুকে নিয়ে আজও সেই হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধা এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে।

উপন্যাসটি যদি পাঠক মহলের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।