মুন্সিগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ

Post Thumbnail

শামীম-উল-আলম, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ শুক্রবার (৫ই জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শেষ হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের প্রার্থী, কর্মী সমর্থকদের ব্যস্ততা কমলেও সতর্ক অবস্থানে সবাই। নিজ নিজ আসনে ভোটারদের ভোট দানে উৎসাহিত করা, ভোটের আগে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি প্রার্থীর কর্মীরাও বেশ তৎপর।

মুন্সীগঞ্জ জেলার ৩টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩, ৪৩,৭১৩ জন যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬, ৯৪,২৫০ জন এবং নারী ভোটার ৬.৪৯,৪৬৩ জন। এ জেলায় ৩টি আসনে নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী ২৭ জন।

মুন্সিগঞ্জ-১ :

মুন্সীগঞ্জ-১ সিরাজদিখান-শ্রীনগর নিয়ে গঠিত আসনটি জেলার সবচেয়ে বড় এবং বেশি ভোটার রয়েছে এই আসনটিতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে চতুর্মুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদ (নৌকা প্রতীক) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবির (ট্রাক প্রতীক)। এছাড়াও আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী (কুলা প্রতীক) ও তৃণমূল বিএনপির অন্তরা হুদা সেলিনা (সোনালি আঁশ প্রতীক)।

এই আসনে মোট ভোটার ৫,০৮,৯৯১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৬১,৮৫১ জন এবং নারী ভোটার ২,৪৭,১৩৯ জন। এছাড়া একজন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটারও রয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জ-২ :


মুন্সীগঞ্জ-২ আসন লৌহজং ও টংগিবাড়ী উপজেলার ২৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই সংসদীয় আসনে ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৩২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৪ জন।

টংগীবাড়ি ও লৌহজং নিয়ে গঠিত আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি অনেকটা এগিয়ে আছেন। এই আসনটিতেও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নৌকার সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহানা তাহমিনার।

মুন্সিগঞ্জ-৩ :


মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মুন্সীগঞ্জ ৩ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৮০ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৯ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৪২ জন।

জেলার সবচেয়ে সংঘাতপ্রবণ এই আসনটিতে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে মূল প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মৃণালকান্তি দাসের সাথে আরেক বর্ষিয়ান রাজনীতিক, কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রনির্বাচন করা ‍আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ফয়সালের মধ্যে।

মুন্সিগঞ্জ-৩ এলাকায় নির্বাচনী সংঘাতে নৌকার একজন কর্মী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে মুন্সিগঞ্জের তিনটি নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় তৎপর আছেন প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই প্রার্থীরা তাদের কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রত্যেকটি এলাকায় নির্বাচনী সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মুন্সিগঞ্জ সদরে একজন সচেতন ভোটার জিনিয়া ফেরদৌস, যিনি নিজেও এবার নির্বাচনী দায়িত্বে আছেন, তিনি বলেন, মানুষ আসলে্ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশে ভোট দিতে চায়।

সিরাজদিখানের মালখানগরের নৌকার কর্মী সিঁথি এবার তার আসনে (মুন্সিগঞ্জ-১) মহিউদ্দিন আহমদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবিরের ট্রাক প্রতীকের জয়ের ব্যপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সিরাজদিখানের শামীম শিকদার, নাহিদ শেখ জয়, তাঁতীলীগের সভাপতি শেখ রাসেলসহ ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করা বেশ কয়েকজন কর্মী।

জেলার বৌলতলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাইফুর রশিদ চৌধুরি (অসীম) মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির জয় নিয়ে কোন সংশয় প্রকাশ করতে রাজি নন। তিনি বলেন, এই আসনে তিনবারের বিজয়ী, বর্তমান এমপি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমপি যেন প্রতিটি পরিবারের সাথে একাত্ম হয়ে আছেন। তাই সাধারণ ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে আবারও নির্বাচিত করে আনবে। তিনি সবার কাছে এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির জন্যে দোয়া এবং নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।

প্রত্যেক প্রার্থীই সকল ভোটারকে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে এসে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।