নজরুল জয়ন্তী আয়োজন ২০২৪

কাজী নজরুল ইসলাম : জাতীয় কবির স্বীকৃতি কোথায়?

Post Thumbnail

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর জন্মদিন আজকে নাকি গতকাল ছিল? ২৪শে মে হিসেবে গতকাল অনেকেই জন্মদিন উদযাপন করছেন। ১১ই জ্যৈষ্ঠ হিসেবে আজ উদযাপন করছে অনেকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহও আজ উদযাপন করছে। তবে এই দ্বন্দ্বের কি সমাধান আছে কোনো?

শুরুতে যে বললাম, জাতীয় কবি– এই স্বীকৃতিও তো কেবলই মুখেমুখে। সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তো স্বীকৃতি মেলেনি। জাতীয় পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আয়োজনে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে লেখা হয়। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কোথাও নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা সংক্রান্ত সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো দলিল নেই। লোকমুখে প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কাগজে-কলমে প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে নন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবার ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশে আসার পর কবির জন্য ধানমন্ডিতে সরকারি উদ্যোগে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘কবি ভবন’। সেখানে কবিকে রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়। এসকল সম্মানই তাঁকে দেয়া হয়েছে ঠিকই। তবে জাতীয় কবি স্বীকৃতিটা এখনো মুখে মুখেই রয়ে গেছে।

এটা সত্যি যে সরকারি দলিলে বিভিন্ন প্রসঙ্গে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে জাতীয় কবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশও প্রণীত হয়েছে। এটি পরোক্ষ স্বীকৃতি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কেবল মৌখিক বিষয় নয়, আনুষ্ঠানিকতা ও সার্বভৌম শক্তির দাপ্তরিক ঘোষণার বিষয়টিও এর সঙ্গে যুক্ত। ভবিষ্যতের জন্য স্বীকৃতি সংরক্ষণের বিষয় থাকে। এসব বিবেচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

২০১৯ সালে এ বিষয়ে তৎকালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছিন, তাঁর মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করার কথা বলেছেন তিনি। খুব শিগগির এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু তার দুইবছর পর ২০২১ সালে তিনি মত পাল্টে বললেন, ‘জাতীয় কবির স্বীকৃতি সম্মানের, গেজেটভুক্তির বিষয় নয়’। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে যেমন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে, তেমনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তার কর্মের স্বীকৃতি ও সম্মানস্বরূপ ‘জাতীয় কবি’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি যেমন অবিচ্ছেদ্য, তেমনি ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ ও ‘জাতীয় কবি’ উপাধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জাতীয় কবির স্বীকৃতি সম্মানের, গেজেটভুক্তির বিষয় নয়।

জাতীয় কবি স্বীকৃতির জন্য তৎকালীন মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না আমাদের কাছে। ভালোবাসার সম্বোধন আর রষ্ট্রের ‘জাতীয়’ কোনো বিষয়ের স্বীকৃতিকে এক মাপকাঠিতে বিচারের কোনোরকম সুযোগই নেই। বরং প্রশ্নটা হলো, এই স্বীকৃতি গেজেট আকারে দিতে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সব সরকারেরই সংকোচ কেনো? সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। এই স্বীকৃতির বিষয়টি অবশ্যই গেজেট আকারে প্রকাশ করা উচিত।

বর্তমান সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের কাছে দাবি জানাই, এ বিষয়ে দ্রুত প্রযোজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।