আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে আম বাগান ঘুরে গেলেন, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্টদূতরা। রাষ্টদূতদের এ দেশের আম ও আম সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতেই এই ম্যাংগো ট্যুরের আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে দেশের আম রপ্তানী আরো গতি পাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশের দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে একটি আম বাগান পরিদর্শন করেন।
এসময় তাদের সাথে ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ এমপি, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোঃ বখতিয়ারসহ কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা।
এই ম্যাংগো ট্যুরের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ট্যুরিজম ও দেশের আম রপ্তানীতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম উদ্যোক্তরা।
ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে সয়লাব চারদিক। রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রায়শই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে যে ভয়াবহ সব চিত্র বেরিয়ে আসে তাতে বাইরের খাবার খাওয়ার সাহসই হারিয়ে যায়। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে বা বিশেষ দিনে বাইরে থেকে খাবার খাওয়ার বিকল্প তো নেই। মানুষের এই প্রয়োজনের সমাধান দিতে আজকাল অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। তেমনই একজন সেলিনা হক। তার Shelly’s Kitchen থেকে হোম মেইড সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন খাবার তৈরি করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকেও।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতু কথা বলেছেন সেলিনা হকের সাথে। তার উদ্যোগ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তারা।
উদ্যোক্তাদের জীবন, কর্ম ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে আমাদের বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে পাঠকের জন্য আজ থাকছে রোজকার খবরের সাথে সফল উদ্যোক্তা সেলিনার আলাপচারিতার প্রধান প্রধান অংশ।
রোজকার খবর : আপনার উদ্যোগ বিষয়ে বলুন।
সেলিনা : আমি উদ্যোগ শুরু করি ২০২০-এর নভেম্বরের দিকে। দুইটা উদ্যোগ নিই। একটা দেশীয় কাপড়ের, আরেকটা হোম মেইড তেহারির।
রোজকার খবর : কেনো আপনি উদ্যোক্তা হলেন?
সেলিনা : করোনার সময় আমি আমার দিবেন সঙ্গিকে হারিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে একদম একা হয়ে যাই। তখন আমার বোন ও ভাবি অনেক উৎসাহ দিয়ে আমাকে উদ্যোগ শুরু করতে বলেন।
রোজকার খবর : ছোটবেলা থেকে আপনার নির্দিষ্টভাবে কি কিছু হওয়ার করার ইচ্ছা ছিল? সে ইচ্ছা কতটুকু পূরণ হয়েছে?
সেলিনা : ছোটবেলা থেকে আসলে তেমন কিছু ভাবিনি, কিন্তু রান্না নিয়ে কিছু করার আগ্রহটা সবসময় কাজ করতো মনে।
রোজকার খবর : আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে পারিবারিক সমর্থন এবং সহযোগিতা কেমন ছিল?
সেলিনা : আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার বড় বোন ও মেঝ ভাবি অনেক সমর্থন করেছেন। অনেক সহযোগিতাও করেছেন।
রোজকার খবর : উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল? সেসব মোকাবিলা করেছেন কীভাবে?
সেলিনা : চাইলেই আসলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে, অনেক বাধা আসে। ভালো চোখে অনেকেই দেখে না। অনেকেই কটুকথা বলে। আমি যেহেতু হোম মেইড খাবার নিয়ে কাজ করছি তাই অনেক কথাই হজম করতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছি। সবকিছুই পজেটিভভাবে নিয়েছি এবং মোকাবেলা করেছি। হাতে কলমে রান্নার প্রশিক্ষণও নিয়ে নিজেকে আরও দক্ষ ও প্রস্তুত করে তুলেছি।
রোজকার খবর : আজকে আপনি যতটা সফল এর পেছনে ব্যর্থতার গল্প আছে কি? থাকলে সেসব জানতে চাই। ব্যর্থতাগুলো থেকে আপনার উপলব্ধি বা শিক্ষা কী ছিল? কীভাবে সেই ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে আজকের সফলতায় পৌঁছেছেন।
সেলিনা : ব্যর্থতা নেই বললে ভুল হবে। অনেক হোঁচট খেয়েই আজকের এই আমি। সফলতা অর্জন করতে এখনও পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি ভালো রান্না করতাম, তাই এই উদ্যোগ শুরু করি। এখন অনেকেই খাবার নিয়ে কাজ করেন। তখন আমি প্রশ্নের সম্মুখীন হই, আমি কি প্রফেশনাল শেফ নাকি? আমার কাছে মনে হলো, আমি যেন হেরে গেলাম। অনেক ভেঙ্গে পড়ি, কাজ বন্ধ করে দেই। আবার নতুনভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে একবছর পর আবার আমি কাজ শুরু করি এবং এখনো প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলমান। এই ব্যর্থতায় একটা লাইনই মানুষের কানে বাজে আমার, ‘শেলি ভাত বিক্রি করে খায়’। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শিখেছি, কাজ করে খাই, চুরি তো করি না। ইনশাআল্লাহ এখন কোনো কথা আর গায়ে লাগে না।
রোজকার খবর : পড়াশোনা করে চাকরি খোঁজা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে আপনি কতটা উৎসাহিত করবেন বা করেন?
সেলিনা : আমি সব শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদেরই বলবো, চাকরি খোঁজার পাশাপাশি অবশ্যই নিজের একটা ছোট উদ্যোগ শুরু করা উচিত। ছোট উদ্যোগই একদিন বড় হবে। আজকের জেনারেশন অনেক মেধাবী। ওরা চাইলেই ওদের বুদ্ধি দিয়ে ভালো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে।
রোজকার খবর : নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কী কী বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করা উচিত? নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সেলিনা : নতুনদের জন্য একটা কথাই বলবো, ছাত্রজীবন থেকেই উদ্যোগ শুরু করা উচিত। পড়ার পাশাপাশি পার্ট-টাইম জব করলে পুঁজি জমালে ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে সাহায্য হবে। আর নতুন যারা আছেন অবশ্যই ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। হতাশ হয়ে কাজ বন্ধ করা যাবে না।
রোজকার খবর : আপনি উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে তো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আপনার এই উদ্যোগ বা কার্যক্রম দেশের বা সমাজের জন্য কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
সেলিনা : আসলে কতটুকু সফল হতে পেরেছি জানি না। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। কাজের প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। আমার কাজ দেখে অন্যরা যদি অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে সেটাই হবে আমার সার্থকতা। কেউ যদি আমার কাছে কাজ শিখতে চায়, সেটাও সম্ভব। আমার জন্য কারও জীবনে যদি একটু পরিবর্তনও আসে তাহলেই আমি খুশি। অবশ্যই এই হোম মেইড খাবারের উদ্যোগটা আমাদের দেশে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ কর্মজীবী ভাই বোনদের অনেক সমস্যার সমাধান এই হোম মেইড খাবার।
রোজকার খবর : নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যেতে চান? সে লক্ষ্যে আপনার পরিকল্পনা কী?
সেলিনা : নিজেকে একজন প্রফেশনাল শেফ হিসেবে দেখতে চাই। নিজের উদ্যোগটা ভালো কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সে লক্ষ্যে আমি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।
রোজকার খবর : বাংলাদেশের জন্য কী করতে চান বা কীভাবে অবদান রাখতে চান?
সেলিনা : আসলে আমি আমার রান্না বাংলাদেশের প্রতিটা জায়গায় দেখতে চাই। বিশুদ্ধ সুন্দর পরিবেশে খাবারের মান ভালো রেখে কাজ করে যেতে চাই।
রোজকার খবর : রোজকার খবরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
সেলিনা : রোজকার খবরকেও অনেক ধন্যবাদ।
সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের উপর থেকে সব আমদানি ও নিয়ন্ত্রক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজস্ব কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এসআরও) জারি করেছে।
এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর দেশের সামগ্রিক চালের মজুদ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চালের দাম পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
দু’টি প্রতিবেদনেই চালের ওপর সব ধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য গত ২০ অক্টোবর এনবিআর আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে।
আমদানি ও নিয়ন্ত্রক শুল্কের উপর এই মওকুফ চালের দাম স্থিতিশীল করতে এবং সাধারণ গ্রাহকদের কাছে এটি আরও সহজলভ্য করতে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।