অর্থ ও বাণিজ্য

অর্থ ও বাণিজ্য

খাবারের মান ভালো রেখে কাজ করে যেতে চাই : সেলিনা হক

ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে সয়লাব চারদিক। রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রায়শই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে যে ভয়াবহ সব চিত্র বেরিয়ে আসে তাতে বাইরের খাবার খাওয়ার সাহসই হারিয়ে যায়। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে বা বিশেষ দিনে বাইরে থেকে খাবার খাওয়ার বিকল্প তো নেই। মানুষের এই প্রয়োজনের সমাধান দিতে আজকাল অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। তেমনই একজন সেলিনা হক। তার Shelly’s Kitchen থেকে হোম মেইড সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন খাবার তৈরি করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকেও।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতু কথা বলেছেন সেলিনা হকের সাথে। তার উদ্যোগ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তারা।

উদ্যোক্তাদের জীবন, কর্ম ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে আমাদের বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে পাঠকের জন্য আজ থাকছে রোজকার খবরের সাথে সফল উদ্যোক্তা সেলিনার আলাপচারিতার প্রধান প্রধান অংশ।

রোজকার খবর : আপনার উদ্যোগ বিষয়ে বলুন।

সেলিনা : আমি উদ্যোগ শুরু করি ২০২০-এর নভেম্বরের দিকে। দুইটা উদ্যোগ নিই। একটা দেশীয় কাপড়ের, আরেকটা হোম মেইড তেহারির।

রোজকার খবর : কেনো আপনি উদ্যোক্তা হলেন?

সেলিনা : করোনার সময় আমি আমার দিবেন সঙ্গিকে হারিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে একদম একা হয়ে যাই। তখন আমার বোন ও ভাবি অনেক উৎসাহ দিয়ে আমাকে উদ্যোগ শুরু করতে বলেন।

রোজকার খবর : ছোটবেলা থেকে আপনার নির্দিষ্টভাবে কি কিছু হওয়ার করার ইচ্ছা ছিল? সে ইচ্ছা কতটুকু পূরণ হয়েছে?

সেলিনা : ছোটবেলা থেকে আসলে তেমন কিছু ভাবিনি, কিন্তু রান্না নিয়ে কিছু করার আগ্রহটা সবসময় কাজ করতো মনে।

রোজকার খবর : আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে পারিবারিক সমর্থন এবং সহযোগিতা কেমন ছিল?

সেলিনা : আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার বড় বোন ও মেঝ ভাবি অনেক সমর্থন করেছেন। অনেক সহযোগিতাও করেছেন।

রোজকার খবর : উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল? সেসব মোকাবিলা করেছেন কীভাবে?

সেলিনা : চাইলেই আসলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে, অনেক বাধা আসে। ভালো চোখে অনেকেই দেখে না। অনেকেই কটুকথা বলে। আমি যেহেতু হোম মেইড খাবার নিয়ে কাজ করছি তাই অনেক কথাই হজম করতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছি। সবকিছুই পজেটিভভাবে নিয়েছি এবং মোকাবেলা করেছি। হাতে কলমে রান্নার প্রশিক্ষণও নিয়ে নিজেকে আরও দক্ষ ও প্রস্তুত করে তুলেছি।

রোজকার খবর : আজকে আপনি যতটা সফল এর পেছনে ব্যর্থতার গল্প আছে কি? থাকলে সেসব জানতে চাই। ব্যর্থতাগুলো থেকে আপনার উপলব্ধি বা শিক্ষা কী ছিল? কীভাবে সেই ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে আজকের সফলতায় পৌঁছেছেন।

সেলিনা : ব্যর্থতা নেই বললে ভুল হবে। অনেক হোঁচট খেয়েই আজকের এই আমি। সফলতা অর্জন করতে এখনও পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি ভালো রান্না করতাম, তাই এই উদ্যোগ শুরু করি। এখন অনেকেই খাবার নিয়ে কাজ করেন। তখন আমি প্রশ্নের সম্মুখীন হই, আমি কি প্রফেশনাল শেফ নাকি? আমার কাছে মনে হলো, আমি যেন হেরে গেলাম। অনেক ভেঙ্গে পড়ি, কাজ বন্ধ করে দেই। আবার নতুনভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে একবছর পর আবার আমি কাজ শুরু করি এবং এখনো প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলমান। এই ব্যর্থতায় একটা লাইনই মানুষের কানে বাজে আমার, ‘শেলি ভাত বিক্রি করে খায়’। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শিখেছি, কাজ করে খাই, চুরি তো করি না। ইনশাআল্লাহ এখন কোনো কথা আর গায়ে লাগে না।

রোজকার খবর : পড়াশোনা করে চাকরি খোঁজা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে আপনি কতটা উৎসাহিত করবেন বা করেন?

সেলিনা : আমি সব শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদেরই বলবো, চাকরি খোঁজার পাশাপাশি অবশ্যই নিজের একটা ছোট উদ্যোগ শুরু করা উচিত। ছোট উদ্যোগই একদিন বড় হবে। আজকের জেনারেশন অনেক মেধাবী। ওরা চাইলেই ওদের বুদ্ধি দিয়ে ভালো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে।

রোজকার খবর : নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কী কী বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করা উচিত? নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

সেলিনা : নতুনদের জন্য একটা কথাই বলবো, ছাত্রজীবন থেকেই উদ্যোগ শুরু করা উচিত। পড়ার পাশাপাশি পার্ট-টাইম জব করলে পুঁজি জমালে ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে সাহায্য হবে। আর নতুন যারা আছেন অবশ্যই ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। হতাশ হয়ে কাজ বন্ধ করা যাবে না।

রোজকার খবর : আপনি উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে তো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আপনার এই উদ্যোগ বা কার্যক্রম দেশের বা সমাজের জন্য কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

সেলিনা : আসলে কতটুকু সফল হতে পেরেছি জানি না। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। কাজের প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। আমার কাজ দেখে অন্যরা যদি অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে সেটাই হবে আমার সার্থকতা। কেউ যদি আমার কাছে কাজ শিখতে চায়, সেটাও সম্ভব। আমার জন্য কারও জীবনে যদি একটু পরিবর্তনও আসে তাহলেই আমি খুশি। অবশ্যই এই হোম মেইড খাবারের উদ্যোগটা আমাদের দেশে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ কর্মজীবী ভাই বোনদের অনেক সমস্যার সমাধান এই হোম মেইড খাবার।

রোজকার খবর : নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যেতে চান? সে লক্ষ্যে আপনার পরিকল্পনা কী?

সেলিনা : নিজেকে একজন প্রফেশনাল শেফ হিসেবে দেখতে চাই। নিজের উদ্যোগটা ভালো কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সে লক্ষ্যে আমি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।

রোজকার খবর : বাংলাদেশের জন্য কী করতে চান বা কীভাবে অবদান রাখতে চান?

সেলিনা : আসলে আমি আমার রান্না বাংলাদেশের প্রতিটা জায়গায় দেখতে চাই। বিশুদ্ধ সুন্দর পরিবেশে খাবারের মান ভালো রেখে কাজ করে যেতে চাই।

রোজকার খবর : রোজকার খবরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

সেলিনা : রোজকার খবরকেও অনেক ধন্যবাদ।

পরবর্তী খবর

পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তিতে সফলতার এক অদম্য যাত্রী ‘সোমা’

গফরগাঁওয়ের এক অধ্যাপকের স্বপ্ন ছিল প্রশাসক হওয়া। কিন্তু জীবন তাকে ভিন্ন পথে নিয়ে গেছে— তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বহু আগে থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন পথচলা। আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী। N S P House নামে গড়ে তুলেছেন নিজের বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবন ও ভাবনা জানিয়েছেন জুলেখা খাতুন সোমা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অর্থনীতি পড়ানোর পাশাপাশি তিনি আইসিটি বিষয়েও শিক্ষকতা করতেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনেক আগেই বুঝতে পারেন। তাই এইচএসসি পাস করার পরই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর ২০০৬ সালে নিজেই একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল, তবু এখান থেকেই তার ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনার শুরু।

এরপর ধীরে ধীরে তিনি ইট-বালুসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। ব্যবসার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য অফলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে থাকেন, যাতে একসময় বড় উদ্যোক্তা হতে পারেন।

২০১৪ সালে তিনি ফেসবুকে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন গ্রুপে লেখালেখির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং তৈরি করেন, যা পরবর্তী সময়ে তার ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০১৮ সালে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি একটি শপ খোলেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তার চেয়েও বেশি সফলতা পেতে থাকেন। ঠিক এই সময়েই তিনি পরিচিত হন ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে, যা তার উদ্যোক্তা জীবনকে আরও গতিশীল করে তোলে।

তবে পথচলা সহজ ছিল না। প্রথমদিকে পরিবার থেকেও কোনো সমর্থন পাননি, বরং একাই পথ চলতে হয়েছে। পরে তার বড় সন্তান পাশে দাঁড়ায় এবং ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সমর্থন দিতে বাধ্য হন।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতেই তিনি এক বড় সংকটের মুখোমুখি হন। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অনলাইন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পেলেও হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি কেবল একটি ছোট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে নিজের অবস্থান তৈরি করবেন।

এই কঠিন সময়ই তাকে আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তিনি নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান এবং আজ তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা একসময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারাই একসময় ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু তিনি নীরব থেকে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।

এ শুধু একজন নারী উদ্যোক্তার সফলতার কাহিনি নয়, বরং এটি এক অদম্য মানসিকতার গল্প। প্রতিকূলতাকে জয় করে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, তা তিনি নিজেকে দিয়েই প্রমাণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোই তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া।

তার ভাষায়, ‘নারীরা যদি নীরব হয়ে যায়, পৃথিবীতে বড় পরিবর্তন ঘটে—আমি তারই প্রমাণ।’ তার এই নিরবতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার বার্তা। যারা তাকে থামাতে চেয়েছিলেন, তারা পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছেন, তারা আসলে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, যার প্রতিটি অর্জন তার কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় সংকল্পের ফসল।

পরবর্তী খবর

নারী এগিয়ে গেলে সমাজ এগিয়ে যাবে : শারমিন সুলতানা

হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।

শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।

তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।

তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।

শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।

শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।

শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।

 

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত