সিলভিয়া শুরু করেছিলেন মূলত দেশীয় জুয়েলারি নিয়ে। তবে, পরবর্তীতে তিনি দেশীয় জুয়েলারির পাশাপাশি কিছু ভারতীয় জুয়েলারি এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা লেডিস ব্যাগও তার পণ্য পরিসরে যুক্ত করেন।
তিনি মনে করেন, প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে সঠিক ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করা উচিত। যে কাজটি তাকে আনন্দ দেবে, যেটি তার নিজস্ব পরিচয় দেবে এবং তার সম্মান বাড়াবে, এমন কাজই তার বেছে নেওয়া উচিত। প্রত্যেকেই চায় নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছেন সিলভিয়া।
বাবা-মায়ের সবচেয়ে ছোটমেয়ে হিসেবে একটু বেশি আদর পেয়েছেন সিলভিয়া। ছোটবেলা থেকেই যা চেয়েছেন, তা তিনি পেয়েছেন। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো ছিলেন। সেই সঙ্গে শখের বশে কিছু টিউশনি করতেন। তবে, ছোটবেলা থেকে তার ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন কোনো স্বপ্ন ছিল না। আরও অনেকের মতো কোনো নির্দিষ্ট চাকরির দিকে ঝোঁক ছিল না। বরং তিনি চেয়েছিলেন এমন কিছু একটা করতে, যা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
২০১৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর, সিলভিয়া ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার জন্য পণ্য নির্বাচন করা ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি মনে করেন, ব্যবসা এমন পণ্য নিয়ে করা উচিত যার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে এবং বাজারে তার চাহিদা বেশি থাকে। একদিন হঠাৎ তার মাথায় আসে জুয়েলারি নিয়ে কাজ করার ধারণা। তিনি জানতেন যে, এটি এমন একটি পণ্য, যার চাহিদা হাজার বছর আগেও ছিল এবং এখনও রয়েছে। নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতেও থাকবে।
সিলভিয়া জানান, তার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে তার মা, ভাই, বোন এবং স্বামী অনেক সহায়তা করেছেন। তারা আর্থিকভাবে তাকে সহায়তার পাশাপাশি কাজে সমর্থন দিয়েও পাশে থেকেছেন।
একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে, সিলভিয়া অনেক কিছু জানতেন না। ফলে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। শুরুতে তার মূলধন ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে কিছু জুয়েলারি সংগ্রহ করেন এবং সেগুলোর ছবি তুলে Pot Of Jewellery নামক তার অনলাইন পেইজে পোস্ট করেন। ধীরে ধীরে ভালো মানের পণ্য সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন এবং তার পেইজে মানুষদের আমন্ত্রণ জানান। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা তাকে সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি সিলভিয়া তার পেইজের প্রচারের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করতেন।
তবে, সিলভিয়া কাজের শুরুতে আরও এক সমস্যার সম্মুখীন হন। তা হলো একটি নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি কোম্পানি খুঁজে পাওয়া। অনেক খুঁজে, অনেক মানুষের সাথে কথা বলে, তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে একটি ডেলিভারি কোম্পানি খুঁজে পান। এখনও সেই কোম্পানির সঙ্গে তিনি কাজ করছেন এবং তাদের সার্ভিস ভালো বলে তিনি মনে করেন। ব্যবসার শুরুর সময়, তার অর্ডারের সংখ্যা কম ছিল। ফলে কখনো কখনো সপ্তাহে একটি পার্সেলও পাঠানো হতো না। তবে, তাদের ডেলিভারি কোম্পানি কম পার্সেল হলেও পিক-আপ করতো।
ব্যবসার শুরুর দিকে তার পণ্য বেশিরভাগই অনলাইনে বিক্রি হতো। তবে, হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি তার ব্যবসায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। লকডাউনের কারণে সবাই ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে যায়। ফলে তার সেল কিছুটা কমতে থাকে। সিলভিয়া তখন ছোট পরিসরে পণ্য স্টক করতেন। তাই কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। এছাড়া, কিছু ভুয়া কাস্টমারের কবলেও পড়েছিলেন। তবে, সিলভিয়া কখনোই হতাশ হননি। তার বিশ্বাস ছিল, জীবনযুদ্ধে যত বাঁধাই আসুক, তার লক্ষ্য থেকে সরে আসা যাবে না।
সিলভিয়া বিশ্বাস করেন, একজন সফল উদ্যোক্তার প্রধান গুণ হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তিনি তার প্রবল আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে কঠিন সময়েও সামনে এগিয়ে গেছেন।
আজকের তরুণ সমাজ অনেক মেধাবী, এবং তারা চাইলে নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে ভালো উদ্যোগ নিতে পারে। সিলভিয়া মনে করেন, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য সিলভিয়ার পরামর্শ, উদ্যোক্তা হতে হলে নতুন আইডিয়া আবিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি পরিশ্রম ও ঝুঁকি গ্রহণের সাহস এবং একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা জরুরি। তাকে মনে রাখতে হবে, উদ্যোক্তা হওয়া মানে নতুন নতুন সুযোগের সন্ধান করা এবং এগুলোর উপর কাজ করা। ব্যবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা ও কাস্টমার আকর্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সিলভিয়া অনলাইনে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে তিনি শীঘ্রই ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহরে শোরুম খুলে Pot Of Jewellery-কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছেন।
হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারে নতুন বছরের লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাসদীখ হাবীব।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসকর্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের চতুর্থ জেনারেল মেম্বারশিপ মিটিং (জিএমএম) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তার নাম ঘোষণা করা হয়। মিটিংয়ে ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মোল্লা, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ, ২০২৪ সালের মেন্টর এবং ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে মুনিব এবং ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি আহমেদ সহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের এলপিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন- এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন নবী হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ উসওয়াত ইমাম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. শরিফুল ইসলাম, জেনারেল লিগাল কাউন্সিল মোহতারিমা রহমান, ট্রেজারার পারভেজ, ডিজিটাল কমিটি চেয়ার আপেল মাহমুদ রিয়াদ, পিআর ও মিডিয়া কমিটি চেয়ার জোবায়ের ইসলাম, ডিরেক্টর দাবিরুল ইসলাম দীপু, ডিরেক্টর আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের নতুন বোর্ডের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. তাসদীখ হাবীব বলেন, “আমি পাইওনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সক্রিয় সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়াদকালে পাইওনিয়ারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এই বছর অনেক কিছু অর্জন করেছি, যা নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অর্জনকে আরও বড় সাফল্যে রূপান্তর করবে।”