দেশীয় তাঁতের গামছা, লুঙ্গি এবং মধু, ঘি, গুড় ও সরিষার তেলসহ অন্যান্য অর্গানিক খাবার নিয়ে কাজ করছেন আবুল হাশিম। ন্যায্য দামে সারাদেশের ক্রেতাদের কাছে সিরাজগঞ্জের তাঁতের গামছা লুঙ্গি পৌঁছে দিচ্ছে তার গড়া হাশিম কালেকশন।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতু কথা বলেছেন আবুল হাশিমের সাথে। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
আবুল হাশিম ঢাকায় থাকেন। চাকরির পাশাপাশি নিজের অঞ্চলের সেরা সব পণ্য নিয়ে শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবন। এক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন–‘মানুষ যেন না ঠকে’। তিনি সিরাজগঞ্জের তাঁতিদের কাছ থেকে সেরা মানের লুঙ্গি, গামছা সংগ্রহ করেন। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে নিজস্ব ডিজাইনের গামছা এবং গামছার বৈচিত্র্যময় ব্যবহার নিয়েও ভাবছেন আবুল হাশিম। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে অর্গানিক খাবার নিয়েও কাজ করছেন।
আবুল হাশিমের ইচ্ছে ছিল পুলিশ হওয়ার। হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। তবে এভাবেই তিনি দেশ এবং মানুষের জন্য ভূমিকা রাখছেন। তাঁত পণ্য জনপ্রিয় করে তোলার মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতকে বিলুপ্তির থেকে রক্ষা করায় কাজ করছেন। একইসাথে বিশুদ্ধ খাবারের মাধ্যমে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভূমিকা রাখছেন তিনি। আর তার এসব কাজে তিনি পরিবারের থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা এবং সমর্থনও পান।
আবুল হাশিমের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথ খুব সহজ ছিল না। মানুষ নানাভাবে তাকে হেয় করতে চেয়েছে। অনেকে বলেছেন, তুমি গামছা বিক্রি করো? খুব ছোট করতো। এ বিষয়ে তার অবস্থান ছিল, ‘আমি শুনতাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিতাম না’। আবার শুরুর দিকে হিসেবের বিষয়ও ভালো বুঝতেন না। কিছুটা বেখেয়ালি ছিলেন। তাই এলোমেলো খরচ করতেন। ফলে মেলা করে অনেক লোকশানের মুখে পড়তে হতো। এখন সেসব বুঝতে শিখেছেন, তাই হিসেব করে চলেন।
পড়াশোনা করে চাকরি খোঁজা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করেন হাশিম কালেকশনের প্রতিষ্ঠাতা। তবে তিনি মনে করেন, শুরুতে ‘আয় ও খরচের বিষয়ে খুব খেয়াল করতে হবে। পণ্য ক্রয়ে যতটা সম্ভব খরচ কম করতে হবে। আর অল্প পণ্য দিয়ে কাজ করা ভালো।’
নিজের উদ্যোগ দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে চান আবুল হাশিম। তিনি বলেন, ‘আমি অসহায়দের কাছে পৌঁছে যাবার চেষ্টা করি।’ তিনি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন হাজার কর্মী নিয়োগ দিতে পারার মতো বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে তার স্বপ্নের হাশিম কালেকশন।
আবুল হাশিমের উদ্যোগের ট্রেড লাইসেন্স আছে। তার টিন সার্টিফিকেট আছে। তিনি আমি বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথভাবে কর দেওয়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখেন। তিনি মনে করেন, সবাই যদি ঠিকমতো কর পরিশোধ করে, তাহলে এভাবেই দেশের জন্য অবদান রাখা যায়।
হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারে নতুন বছরের লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাসদীখ হাবীব।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসকর্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের চতুর্থ জেনারেল মেম্বারশিপ মিটিং (জিএমএম) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তার নাম ঘোষণা করা হয়। মিটিংয়ে ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মোল্লা, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ, ২০২৪ সালের মেন্টর এবং ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে মুনিব এবং ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি আহমেদ সহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের এলপিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন- এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন নবী হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ উসওয়াত ইমাম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. শরিফুল ইসলাম, জেনারেল লিগাল কাউন্সিল মোহতারিমা রহমান, ট্রেজারার পারভেজ, ডিজিটাল কমিটি চেয়ার আপেল মাহমুদ রিয়াদ, পিআর ও মিডিয়া কমিটি চেয়ার জোবায়ের ইসলাম, ডিরেক্টর দাবিরুল ইসলাম দীপু, ডিরেক্টর আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের নতুন বোর্ডের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. তাসদীখ হাবীব বলেন, “আমি পাইওনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সক্রিয় সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়াদকালে পাইওনিয়ারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এই বছর অনেক কিছু অর্জন করেছি, যা নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অর্জনকে আরও বড় সাফল্যে রূপান্তর করবে।”