হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারে নতুন বছরের লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাসদীখ হাবীব।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসকর্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের চতুর্থ জেনারেল মেম্বারশিপ মিটিং (জিএমএম) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তার নাম ঘোষণা করা হয়। মিটিংয়ে ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মোল্লা, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ, ২০২৪ সালের মেন্টর এবং ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে মুনিব এবং ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি আহমেদ সহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের এলপিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন- এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন নবী হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ উসওয়াত ইমাম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. শরিফুল ইসলাম, জেনারেল লিগাল কাউন্সিল মোহতারিমা রহমান, ট্রেজারার পারভেজ, ডিজিটাল কমিটি চেয়ার আপেল মাহমুদ রিয়াদ, পিআর ও মিডিয়া কমিটি চেয়ার জোবায়ের ইসলাম, ডিরেক্টর দাবিরুল ইসলাম দীপু, ডিরেক্টর আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের নতুন বোর্ডের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. তাসদীখ হাবীব বলেন, “আমি পাইওনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সক্রিয় সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়াদকালে পাইওনিয়ারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এই বছর অনেক কিছু অর্জন করেছি, যা নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অর্জনকে আরও বড় সাফল্যে রূপান্তর করবে।”
স্কুল শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন সিনথিয়া রূম্পা। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সাথে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে উপহার আদান-প্রদানের আনন্দ থেকে তার মাথায় উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা আসে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। ছোটদের পছন্দের উপহার এবং খেলনা পণ্য নিয়ে শুরু করলেন Token of Love নামে অনলাইন ব্যবসা। পরে Desire Dairy of Sinthia নামে আরও একটি ব্যবসাও করছেন।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবন ও ভাবনা জানিয়েছেন সিনথিয়া। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
ঢাকার পুরান ঢাকা লালবাগে জন্মগ্রহণ করা সিনথিয়া রূম্পা জানান, তার শিক্ষা জীবনের শুরু আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। এরপর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে গৃহিণী হলেও দুটি অনলাইন ব্যবসা চালাচ্ছেন তিনি—‘Token of Love’ এবং ‘Desire Dairy of Sinthia’। ২০২১ সালে ‘Token of Love’-এর মাধ্যমে তিনি উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
সিনথিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার, এবং সেই স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি জানান, “পরিবারের সহযোগিতায় আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর স্কুল শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করি। ছোটদের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা ছিল, তাই প্রথমে ‘লিটল বার্ডস্ কিন্ডার গার্টেন’ স্কুলে যোগদান করি।” শিক্ষকতার পাশাপাশি, সিনথিয়া বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন।
তার উদ্যোক্তা জীবনের সূত্রপাত ঘটে ছোটদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই। স্কুলে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার জন্য উপহার নিয়ে আসতো এবং তিনিও তাদের জন্য উপহার নিয়ে যেতেন। সিনথিয়া বলেন, “ছোটদের মধ্যে সেগুলোর আনন্দ দেখে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু নতুন করব। আর তখনই ‘Token of Love’ শুরু করি।”
এটি ছিল তার প্রথম উদ্যোগ, যা তিনি একেবারে কম পুঁজি দিয়ে শুরু করেন। মাত্র ১০০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন সিনথিয়া। প্রথমে কিছু হাতের তৈরি কার্ড, সফট টয় এবং ইমোজি পিলো সংগ্রহ করেন। “আমি পণ্যগুলোর মধ্যে পিলো, দেয়াল ঘড়ি, টেডিবিয়ার, সফট টয়, হাতের তৈরি কিছু কার্ডসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী রাখতাম। সব কিছুতেই ছিল এক অনন্য ভালোবাসা,” বলেন তিনি।
এরপর সিনথিয়া তার দ্বিতীয় উদ্যোগ শুরু করেন, Desire Dairy of Sinthia। নতুন পেজে নারীদের বিভিন্ন পণ্য এবং শীতকালীন পোশাকের সংগ্রহ আনেন। পণ্য এবং সেবার মান নিয়ে তিনি অত্যন্ত সচেতন। “আমি সবসময় চেষ্টা করেছি প্রোডাক্টের দাম রিজেনেবল রাখার, যাতে সাধারণ মানুষও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে পারে,” বলেন সিনথিয়া।
শুরুতে সেল কম ছিল এবং অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, তবে তিনি হতাশ হননি। “ফেইক কাস্টমাররা বিরক্ত করতো এবং লাভ থেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো কোয়ালিটি এবং সার্ভিসের বিকল্প নেই,” বলেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই তার সেল বেড়ে যায় এবং তিনি ব্যবসায় এগিয়ে যেতে সাহস পান।
সিনথিয়া তার পরিবারের এবং স্বামীর সহযোগিতা ও দোয়ায় তার উদ্যোগের উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন। “আমার কাস্টমাররা সন্তুষ্ট এবং তারা আমার প্রোডাক্টস ও সার্ভিসে খুশি,” জানান তিনি।
তবে সিনথিয়ার পরবর্তী পরিকল্পনা অনেক বড়। “আমার লক্ষ্য, একদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে শোরুম খুলবো এবং হাজারো বেকার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবো,” বলেন তিনি।
সিনথিয়া নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “আমাদের জীবনে বাধা আসবেই। কিন্তু লক্ষ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে যত বাধাই আসুক, তা অতিক্রম করে যেতে হবে।”