একসময় সংসার, সন্তান আর জীবনের টানাপোড়েনে নিজের স্বপ্নটা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। দিন চলত, কিন্তু মনে হতো কিছু একটা অপূর্ণ। মনে হতো, জীবনটা শুধু দায়িত্বের ঘূর্ণিতে ঘুরে চলেছে। নিজের জন্য, নিজের ভালো লাগার কিছু করার সময় যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। কিন্তু ঠিক সেই জায়গা থেকেই তার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা— নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার আলো জ্বেলে তোলার যাত্রা। উচ্চশিক্ষিত এই নারী জানতেন, জীবনে কেবল চাকরি করাই সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড নয়। বরং সত্যিকারের স্বাধীনতা আসে তখনই, যখন নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়। নিজের হাতে, নিজের চিন্তায়, নিজের পরিশ্রমে। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় শামীমা নাসরিনের উদ্যোগ— ‘Riha’s Wardrobe’।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুকে শামীমা বলেছেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শামীমা একজন নারী, যিনি জীবন ও সমাজের বাস্তবতাকে ভয় না পেয়ে, বরং তা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। ঘরে বসে শুরু করেছিলেন কাজ, হাতে গোনা কয়েকটি দেশীয় পোশাক ও কারুশিল্প নিয়ে। লক্ষ্য ছিল একটাই— দেশীয় ঐতিহ্যের সৌন্দর্যকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুনভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা।
শামীমা নাসরিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। চাকরি করতে পারিনি, কিন্তু নিজের উদ্যোগ শুরু করার মাধ্যমে সেই ইচ্ছার একটি বড় অংশ পূরণ হয়েছে। এখন মনে হয়, নিজের হাতে গড়ে তোলা স্বপ্নই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’
এভাবেই এক সময়ের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। শামীমা নাসরিনের গল্প শুধু একজন উদ্যোক্তা হওয়ার ঘটনা নয়— এটি এক নারীর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প, নিজের ভিতরের আলোকে চিনে নেওয়ার গল্প।
সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শামীমা নাসরিন সবসময় ভাবতেন— নিজের মতো করে কিছু করবেন। তবে সময়, সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতার বাস্তবতা তাকে প্রথমদিকে কিছুটা দ্বিধায় ফেলেছিল। চাকরির প্রতিযোগিতায় তিনি যেমন ছিলেন সক্রিয়, তেমনি মনে গেঁথে ছিল নিজের কিছু করার স্বপ্ন। জীবনের নানা ওঠানামা পেরিয়ে একদিন সেই ইচ্ছেটাই তাকে টেনে নেয় সৃজনশীলতার জগতে। আর সেই আলো থেকেই জন্ম নেয় তার উদ্যোগ— ‘Riha’s Wardrobe’।
শামীমা বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি, জীবন মানে এগিয়ে চলা। যখন নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বিশ্বাস করা যায়, তখনই শুরু হয় নতুন পথচলা।’
ছোট পরিসর থেকে শুরু করা এই যাত্রায় প্রথমদিকে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ— পুঁজির স্বল্পতা, অভিজ্ঞতার অভাব, বাজার বুঝে ওঠার কঠিন সময়। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। পরিবারের সহযোগিতা এবং নিজের দৃঢ় মনোবলই ছিল তার বড় শক্তি।
প্রতিটি সাফল্যের পেছনে কিছু না কিছু ব্যর্থতার গল্প থাকে— শামীমার ক্ষেত্রেও তাই। ‘শুরুর দিকে অনেক ভুল করেছি। কোন পণ্য মানুষ বেশি চায় তা বুঝতে পারিনি, মার্কেটিং– এ ঘাটতি ছিল। কিন্তু প্রতিটি ভুলই ছিল শেখার সুযোগ। আমি শিখেছি, হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই আসল শক্তি’, বলেন তিনি।
বর্তমানে তার এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকজন নারী। তারা কেউ ছাত্রছাত্রী, কেউ গৃহিণী— সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে এখন ‘Riha’s Wardrobe’ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে।

‘Riha’s Wardrobe’-এ এখন তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের হাতে বানানো পোশাক, ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ ও ডিজাইননির্ভর সামগ্রী। প্রতিটি পণ্যের মধ্যে তিনি রাখতে চান নিজের শিল্পবোধ আর স্বকীয়তার ছোঁয়া। শামীমা বলেন, ‘আমার কাছে পোশাক মানে শুধু কাপড় নয়— এটা একটা গল্প, একটা অনুভূতি। আমি চাই, যারা আমার পণ্য ব্যবহার করেন তারা যেন সেই গল্পের অংশ হন।’

তরুণদের উদ্দেশে শামীমা বলেন, ‘চাকরি ভালো, কিন্তু সবাই চাকরি পাবে, তা সম্ভব নয়। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা হলে শুধু নিজের নয়, অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।’
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ খুব বাস্তবধর্মী— ‘প্রথমেই ধৈর্যশীল হতে হবে, বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। পণ্যের মান, গ্রাহকের আস্থা আর সঠিক মার্কেটিং— এই তিনটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের উদ্যোগকে শুধু ব্যবসা নয়, সমাজে পরিবর্তনের এক অংশ হিসেবেই দেখেন তিনি। ‘দেশীয় ঐতিহ্যের পণ্যকে নতুনভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা একটা সামাজিক ভূমিকা। আর আমার মতো ঘরে বসে থাকা মেয়েরা যদি অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে সেটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শামীমা বলেন, ‘আমি চাই ‘Riha’s Wardrobe’-কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। ভবিষ্যতে অনলাইন থেকে শোরুম পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। চাই, আমার উদ্যোগ থেকে আরও অনেক নারী নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস পাক।’
শামীমার লক্ষ্য শুধু ব্যবসা নয়, বরং অন্য নারীদেরও অনুপ্রাণিত করা। তার কথায়, ‘আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে পারি। শুধু সাহস করে শুরুটা করতে হয়।’

বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ অপরিসীম। তিনি বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও দেশীয় পণ্যের বাজারকে বিশ্বে পরিচিত করতে। একইসাথে আরও কর্মসংস্থান তৈরি করে সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে চাই।’

তার এই যাত্রা প্রমাণ করে— যেখানে ইচ্ছা, সেখানে পথ হয়। আর সেই পথেই একদিন জন্ম নেয় নতুন সম্ভাবনা, নতুন গল্পের।
করোনাকালের স্থবির দিনগুলো যেন অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কেউ প্রিয়জন, কেউ বা হারিয়েছেন জীবনের গতি। কিন্তু সেই থেমে যাওয়া সময়েই নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন সুলতানা মুক্তা। দীর্ঘ ১৭ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম — ‘ঋক্ষশৈলী’।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে সুলতানা মুক্তা তুলে ধরেন তার ‘ঋক্ষশৈলী’র গল্প, সংগ্রাম আর স্বপ্নের কথা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
‘ঋক্ষশৈলী’ মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা আয়োজনের একটি সংগঠন। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ঘরোয়া নারী উদ্যোক্তা, হাতে বানানো পণ্যের কারিগর— সবাইকে এক ছাতার নিচে এনে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করেছে মুক্তার এই উদ্যোগ।
‘আমি শিক্ষকতা করতাম অনেক দিন। ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। মনে হচ্ছিল, জীবনে কিছু একটা নিজের মতো করে করতে চাই,’— বলছিলেন মুক্তা। ‘সেই সময় অনলাইনে Tuna-Tunyy নামে একটি বুটিক পেজ খুলি। উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত থাকা, কিন্তু ধীরে ধীরে কাজটাই ভালোবাসায় পরিণত হলো।’
ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া— সেই স্বপ্ন তিনি পূরণও করেছেন। কিন্তু উদ্যোক্তা জীবনের এই অধ্যায় যেন মুক্তার জীবনের দ্বিতীয় প্রেরণা। ‘শিক্ষকতা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, আর উদ্যোক্তা জীবন দিয়েছে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ,’— বললেন তিনি।
শুরুতে পরিবার থেকেই এসেছিল শঙ্কা, সন্দেহ আর কিছু নিরুৎসাহ। “পরিবার বলত— ‘তোমাকে দিয়ে হবে না।’ তখন ভাবতাম, কেন পারব না?”— স্মৃতি হাতড়ে বললেন মুক্তা। ধীরে ধীরে সেই অবিশ্বাসই হয়ে উঠেছে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।
তবে মুক্তার গল্প একা লড়াইয়ের নয়— বরং একসঙ্গে এগিয়ে চলার গল্প। ২০২২ সালে অনলাইনে পরিচিত চারজন বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো একটি মেলার আয়োজন করেন তারা। নাম দেন ‘ঋক্ষশৈলী’। প্রথম আয়োজনেই মেলে অভাবনীয় সাড়া। ‘সেই মেলাতেই বুঝলাম— একা নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই সফলতা সম্ভব,’ বলেন মুক্তা।
এখন পর্যন্ত ১৭টি মেলা আয়োজন করেছে ঋক্ষশৈলী। প্রতিটি মেলাতেই সুযোগ পেয়েছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা, যারা হয়তো কখনও দোকানের বাইরে নিজেদের পণ্য দেখানোর সাহস পাননি। মুক্তা বলেন, ‘আমরা এমন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিই, যারা শুরু করছেন একদম নতুন করে। তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’
তবে সহজ ছিল না এই যাত্রা। সংসার, সন্তান, ঘর সামলে উদ্যোক্তা জীবনে সময় দেওয়া— শুরুতে ছিল অসম্ভব কঠিন। মুক্তা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঘর সামলে নিজের জন্য সময় বের করা। ধীরে ধীরে পরিবার বুঝেছে, আমিও ব্যালান্স করতে শিখেছি।’
ব্যর্থতাও এসেছে পথে। মূলধনের অভাব, পণ্য সংগ্রহে সমস্যা, অনলাইন পেজের প্রচার না পাওয়া— সবই পেরিয়ে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা। তার মতে, ‘সফল হতে গেলে বারবার পড়তে হবে, আবার উঠতেও হবে। জানার শেষ নেই, শেখার শেষ নেই। এই মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়।’

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরতে থাকা তরুণদের তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হলে শুধু নিজের জীবিকার পথ তৈরি হয় না, আরও কয়েকজনের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। এখন অনেক তরুণ পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোগ নিচ্ছে— এটা ভালো লক্ষণ।’
নতুনদের জন্য তার পরামর্শ, ‘ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ একদিনে সফল হয় না। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। নিজের কাজের বিষয়ে জানতে হবে সব কিছু এবং কখনও হাল ছাড়া যাবে না।’
ঋক্ষশৈলীর সাফল্যের পেছনে মুক্তা ও তার দলের যে নিষ্ঠা, তা এখন অনেক নতুন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা। মুক্তা বলেন, “আমরা ৬৪ জেলায় কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুযোগ তৈরি করা। আর একদিন আমরা যেন দেশের বাইরেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-্এর গর্ব ছড়িয়ে দিতে পারি।”
সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়েও তিনি সচেতন। বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যবসা নয়, কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। যেন দেশের তরুণ-তরুণীরা কাজের সুযোগ পায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’
শেষে তিনি বললেন একটাই কথা— ‘কোনো কাজেই হাল ছাড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে— আমি পারি, আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’
উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জনপ্রিয় অনলাইন উদ্যোক্তা কমিউনিটি ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।
রাজধানীর আগারগাঁও লায়ন’স ক্লাবে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠান ছিল আনন্দ, বন্ধন ও ভালোবাসার এক মহাসমারোহ।
উৎসবের সূচনায় সঞ্চালক অতিথি ও সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এম্বাসেডর স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান সাদিক। এরপর শিশু রাহনুমা বিনতে তারিকের ছড়া আবৃত্তি I am a little teapot. শেখ আয়েশা বিনতে নূর আনায়ার প্রাণবন্ত ছড়া গান উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের এমন অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানস্থল হয়ে ওঠে এক পারিবারিক আনন্দভুবন।

এরপর বক্তব্য রাখেন গ্রুপের সদস্য ফারহানা হোসেন মিতা এবং মডারেটর সুমাইয়া জাহান। তাঁরা ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চার বছরের পথচলা, সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং উদ্যোগী নারীদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। গজল পরিবেশন করেন আফনান সাদিক এবং ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গান গেয়ে উপস্থিত সবাইকে নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে তোলেন গ্রুপের এক্টিভ সদস্য মাকসুদা খান বিনা। দুপুরে শিশুদের মজার খেলা ও গুডি ব্যাগ বিতরণে উৎসবে যুক্ত হয় আরেকটি আনন্দের মাত্রা।
দুপুর ১টার পর অতিথিদের আগমন অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও বর্ণিল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চনদা মাহজাবীন এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর সবুজ আয়াত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আলোকিত নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শারমিন সেলিম তুলি, ব্লু মাল্টিমিডিয়া সল্যুশনের সত্ত্বাধিকারী ও বিটিভির প্ল্যানার আফসানা রুমকি, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল, নাহার কুকিং ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষক হাসিনা আনছার, মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর রিসালাতুন্নাহার, সাংবাদিক রাফিউজাম্মান রাফি, নবেরা ডেন্টাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেক ওসমানী এবং পারফেক্ট ইলেকট্রনিকসের ফাউন্ডার ও সিইও গোলাম শাহরিয়ার কবীর। অতিথিরা গ্রুপের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং নারী উদ্যোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার এই প্রচেষ্টাকে দেশের উদ্যোক্তা সংস্কৃতির জন্য অনুকরণীয় বলে মত দেন।

অনুষ্ঠানে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও এডমিন কাজী নওশীন লায়লা শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘চার বছরের এই যাত্রা ছিল ভালোবাসা, পরিশ্রম আর স্বপ্নের সমন্বয়। এই পরিবার শুধু একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি আমাদের হৃদয়ের বন্ধন।’ তার বক্তব্যে অনুপ্রেরণার সুর ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সবার মনে।
এরপর শুরু হয় র্যাম্প ওয়াক পর্ব, যেখানে খ তে খাঁটি পরিবারের সদস্যরা আত্মবিশ্বাস ও স্টাইলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিকেলে কেক কাটা পর্বে উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে লায়ন’স ক্লাব প্রাঙ্গণ। চার বছরের সাফল্যের প্রতীক সেই কেক কাটার মুহূর্তে উপস্থিত সবার চোখে ছিল গর্ব ও আনন্দের ঝিলিক।

পরে অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। গ্রুপের এডমিন ও মডারেটর টিম সম্মানিত অতিথিদের পাশাপাশি সারাবছরের সেরা বিক্রেতা বা ‘বেস্ট সেলার’ সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয় গ্রুপের বায়ার ও সহযোগীদেরও, যাঁদের অবদানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ ক্রমে শক্তিশালী কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে।
এ বছরের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে কোলাবোরেশন পার্টনার হিসেবে পাশে ছিল একাধিক প্রতিষ্ঠান— শাড়ির ব্র্যান্ড সাটক, গহনার ব্র্যান্ড কাব্যকথা, হিজাব ব্র্যান্ড ট্রেন্ডি লুক বাই ইমা এবং খাবার পার্টনার হিসেবে নীলার হেসেল, দেশজ ও দেশীয় ঐতিহ্য ও ফ্লোক ফুড। তাদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে করেছে আরও প্রাণবন্ত ও বর্ণিল।

দিনভর গান, গজল, খেলা, ফ্যাশন, আলোচনা ও ক্রেস্ট বিতরণের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পরিণত হয় এক সত্যিকারের পারিবারিক মিলনমেলায়। হাসি, ভালোবাসা, বন্ধন আর সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে দিনটি।
চার বছরের পথচলার এই উদযাপন যেন ঘোষণা দিল আরও বড় ভবিষ্যতের— যেখানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ হয়ে থাকবে উদ্যোগ, একতা ও মানবিকতার অনন্য প্রতীক।