অর্থ ও বাণিজ্য, নির্বাচিত

অর্থ ও বাণিজ্য, নির্বাচিত

হাতের ছোঁয়ায় রঙিন স্বপ্নের গল্প বুনছেন রাফিয়া

ছোটবেলায় সেলাই-ফোড়াই, কাগজ কাটা, পুতুল বানানো— এসব কাজেই বুঁদ হয়ে থাকতেন রাফিয়া আক্তার। অন্য বাচ্চারা খেলাধুলা করলেও তিনি ব্যস্ত থাকতেন কাপড়ের টুকরো জোড়া লাগিয়ে কিছু একটা বানানোর কাজে। তখন হয়তো নিজেও জানতেন না, সেই শখ একদিন তার জীবনের দিকটাই বদলে দেবে।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প বলেছেন Rafia Crafts and Creation-এর উদ্যোক্তা রাফিয়া আক্তার। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

‘আমি মূলত কাজ করি ব্লক, টাই ডাই, ম্যাকরাম, সেলাই আর হ্যান্ডমেইড জুয়েলারি নিয়ে,’— বলছিলেন রাফিয়া। তার চোখেমুখে দৃঢ়তার ছায়া, যেন বহু প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়েও তিনি নিজের তৈরি করা এক আলোকিত পথের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

রাফিয়া জানালেন, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল তিনি ডাক্তার হবেন। কিন্তু বাস্তবতা অন্য পথে নিয়ে যায় তাকে। ইন্টারমিডিয়েটের পর বিজ্ঞান থেকে আর্টসে চলে আসেন, আর সেই মুহূর্ত থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়। ‘ডিগ্রিতে পড়ার সময়ই বিয়ে হয়ে গেল। কোনো রকমে ডিগ্রি শেষ করেছিলাম, তারপর শুরু হলো সংসার জীবন। তখন মনে হলো, আমার নিজের জন্য কিছুই রইল না,’ বলেন তিনি।

সংসারের ব্যস্ততার মধ্যেও রাফিয়ার মাথায় তখন ঘুরছিল আরেকটা স্বপ্ন— শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু সেখানেও পথ আটকাল বাস্তবতা। তবু হার মানেননি তিনি। বরং নিজের শখকেই তিনি বেছে নেন নতুন করে বাঁচার উপায় হিসেবে। বলেন, ‘টিচিং প্রফেশনে যেতে না পারলেও ভাবলাম, আমি তো শেখাতে পারি আমার এই কাজগুলো। সেই ভাবনা থেকেই ব্র্যাকের ব্লক-বাটিক ট্রেনিংয়ে ট্রেইনার হিসেবে কাজ শুরু করি।’

তবে পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। নারী হয়ে উদ্যোগ নেওয়া মানেই সমাজের অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া— এই বাস্তবতাটা খুব ভালোভাবেই জানেন রাফিয়া। ‘প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। পরিবার থেকেই শুরু। লোকে কী বলবে— এই কথাটাই বারবার শুনতে হয়। সংসার সামলে কাজ করা, প্রি-অর্ডারের কাজ শেষ করা— সবই করতে হয় একা হাতে।’

২০১৮ সালে সেলাই দিয়েই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। এরপর ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণ নেন। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজের একটি দোকানও। সেখানেই কাজের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিতেন মেয়েদের। ‘একটু একটু করে ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনা এসে সব থামিয়ে দিল,’ জানালেন রাফিয়া। দোকান বন্ধ, কাজ বন্ধ, আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে যোগ হলো অসুস্থতা।

২০২১ সালে নতুন করে শুরু করার প্রত্যয়ে তিনি চলে এলেন ঢাকায়। কিন্তু এখানেও প্রতিযোগিতা, অনিশ্চয়তা, টিকে থাকার লড়াই। ‘ঢাকায় এসে দেখলাম, সবাই কোনো না কোনোভাবে কাজ করছে। কিন্তু নিজেদের জায়গা তৈরি করা খুব কঠিন। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কাজ শেখাতে ভালো লাগে— সেটাই করছি এখন।’

রাফিয়ার কথায় দৃঢ়তা— ‘কোনো কাজই ছোট না। নিজের যা ভালো লাগে, সেটাই নিয়ে এগোতে হবে। লোকের কথা শুনে থেমে গেলে জীবনও থেমে যাবে।’

তিনি বিশ্বাস করেন, পরিকল্পনা, ধৈর্য, পরিশ্রম আর সততাই উদ্যোক্তার আসল পুঁজি। তবে তার পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্যও জরুরি। ‘যদি আর্থিকভাবে দুর্বল থাকো, তাহলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই মেধা খাটাতে হবে, রিস্ক নেয়ার সাহস থাকতে হবে,’ বলেন তিনি।

রাফিয়া আক্তারের স্বপ্ন এখন শুধু নিজের নয়, তার মতো আরও অনেক নারীর। ‘আমরা কয়েকজন মিলে কাজ করছি, যেন আমাদের এই হ্যান্ডক্রাফট কাজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও জায়গা করে নিতে পারে। ম্যাকরাম কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি নতুন কর্মী তৈরি করতে। চাই, আমরা সবাই মিলে একদিন এই কাজকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে পারি।’

তার লক্ষ্য— দেশে বেকারত্ব কমানো এবং ঘরে বসে নারীদের আয়মুখী করে তোলা। ‘আমাদের মতো নারীরা ঘরে বসে দুটো পয়সা রোজগার করতে পারে, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে— এই চেতনা নিয়েই কাজ করছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষম করে তোলাই এখন আমার স্বপ্ন।’

শখ থেকে প্রয়োজন, প্রয়োজন থেকে দায়িত্ব— এই তিন ধাপ পেরিয়ে রাফিয়া আক্তার আজ নিজের হাতে গড়া এক পৃথিবী তৈরি করেছেন, যেখানে প্রতিটি সুতোয় মিশে আছে সংগ্রাম, ভালোবাসা আর নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস।

শেয়ার
পরবর্তী খবর

সুলতানা মুক্তার স্বপ্নযাত্রা ‘ঋক্ষশৈলী’

করোনাকালের স্থবির দিনগুলো যেন অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কেউ প্রিয়জন, কেউ বা হারিয়েছেন জীবনের গতি। কিন্তু সেই থেমে যাওয়া সময়েই নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন সুলতানা মুক্তা। দীর্ঘ ১৭ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম — ‘ঋক্ষশৈলী’।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে সুলতানা মুক্তা তুলে ধরেন তার ‘ঋক্ষশৈলী’র গল্প, সংগ্রাম আর স্বপ্নের কথা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

‘ঋক্ষশৈলী’ মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা আয়োজনের একটি সংগঠন। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ঘরোয়া নারী উদ্যোক্তা, হাতে বানানো পণ্যের কারিগর— সবাইকে এক ছাতার নিচে এনে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করেছে মুক্তার এই উদ্যোগ।

‘আমি শিক্ষকতা করতাম অনেক দিন। ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। মনে হচ্ছিল, জীবনে কিছু একটা নিজের মতো করে করতে চাই,’— বলছিলেন মুক্তা। ‘সেই সময় অনলাইনে Tuna-Tunyy নামে একটি বুটিক পেজ খুলি। উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত থাকা, কিন্তু ধীরে ধীরে কাজটাই ভালোবাসায় পরিণত হলো।’

ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া— সেই স্বপ্ন তিনি পূরণও করেছেন। কিন্তু উদ্যোক্তা জীবনের এই অধ্যায় যেন মুক্তার জীবনের দ্বিতীয় প্রেরণা। ‘শিক্ষকতা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, আর উদ্যোক্তা জীবন দিয়েছে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ,’— বললেন তিনি।

শুরুতে পরিবার থেকেই এসেছিল শঙ্কা, সন্দেহ আর কিছু নিরুৎসাহ। “পরিবার বলত— ‘তোমাকে দিয়ে হবে না।’ তখন ভাবতাম, কেন পারব না?”— স্মৃতি হাতড়ে বললেন মুক্তা। ধীরে ধীরে সেই অবিশ্বাসই হয়ে উঠেছে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।

তবে মুক্তার গল্প একা লড়াইয়ের নয়— বরং একসঙ্গে এগিয়ে চলার গল্প। ২০২২ সালে অনলাইনে পরিচিত চারজন বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো একটি মেলার আয়োজন করেন তারা। নাম দেন ‘ঋক্ষশৈলী’। প্রথম আয়োজনেই মেলে অভাবনীয় সাড়া। ‘সেই মেলাতেই বুঝলাম— একা নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই সফলতা সম্ভব,’ বলেন মুক্তা।

এখন পর্যন্ত ১৭টি মেলা আয়োজন করেছে ঋক্ষশৈলী। প্রতিটি মেলাতেই সুযোগ পেয়েছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা, যারা হয়তো কখনও দোকানের বাইরে নিজেদের পণ্য দেখানোর সাহস পাননি। মুক্তা বলেন, ‘আমরা এমন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিই, যারা শুরু করছেন একদম নতুন করে। তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’

তবে সহজ ছিল না এই যাত্রা। সংসার, সন্তান, ঘর সামলে উদ্যোক্তা জীবনে সময় দেওয়া— শুরুতে ছিল অসম্ভব কঠিন। মুক্তা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঘর সামলে নিজের জন্য সময় বের করা। ধীরে ধীরে পরিবার বুঝেছে, আমিও ব্যালান্স করতে শিখেছি।’

ব্যর্থতাও এসেছে পথে। মূলধনের অভাব, পণ্য সংগ্রহে সমস্যা, অনলাইন পেজের প্রচার না পাওয়া— সবই পেরিয়ে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা। তার মতে, ‘সফল হতে গেলে বারবার পড়তে হবে, আবার উঠতেও হবে। জানার শেষ নেই, শেখার শেষ নেই। এই মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়।’

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরতে থাকা তরুণদের তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হলে শুধু নিজের জীবিকার পথ তৈরি হয় না, আরও কয়েকজনের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। এখন অনেক তরুণ পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোগ নিচ্ছে— এটা ভালো লক্ষণ।’

নতুনদের জন্য তার পরামর্শ, ‘ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ একদিনে সফল হয় না। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। নিজের কাজের বিষয়ে জানতে হবে সব কিছু এবং কখনও হাল ছাড়া যাবে না।’

ঋক্ষশৈলীর সাফল্যের পেছনে মুক্তা ও তার দলের যে নিষ্ঠা, তা এখন অনেক নতুন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা। মুক্তা বলেন, “আমরা ৬৪ জেলায় কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুযোগ তৈরি করা। আর একদিন আমরা যেন দেশের বাইরেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-্এর গর্ব ছড়িয়ে দিতে পারি।”

সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়েও তিনি সচেতন। বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যবসা নয়, কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। যেন দেশের তরুণ-তরুণীরা কাজের সুযোগ পায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’

শেষে তিনি বললেন একটাই কথা— ‘কোনো কাজেই হাল ছাড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে— আমি পারি, আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’

শেয়ার
পরবর্তী খবর

‘খ তে খাঁটি’র বর্ষপূর্তি উৎসবে প্রেরণার মিলনমেলা

উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জনপ্রিয় অনলাইন উদ্যোক্তা কমিউনিটি ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।

রাজধানীর আগারগাঁও লায়ন’স ক্লাবে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠান ছিল আনন্দ, বন্ধন ও ভালোবাসার এক মহাসমারোহ।

উৎসবের সূচনায় সঞ্চালক অতিথি ও সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এম্বাসেডর স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান সাদিক। এরপর শিশু রাহনুমা বিনতে তারিকের ছড়া আবৃত্তি I am a little teapot.  শেখ আয়েশা বিনতে নূর আনায়ার প্রাণবন্ত ছড়া গান উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের এমন অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানস্থল হয়ে ওঠে এক পারিবারিক আনন্দভুবন।

এরপর বক্তব্য রাখেন গ্রুপের সদস্য ফারহানা হোসেন মিতা এবং মডারেটর সুমাইয়া জাহান। তাঁরা ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চার বছরের পথচলা, সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং উদ্যোগী নারীদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। গজল পরিবেশন করেন আফনান সাদিক এবং ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গান গেয়ে উপস্থিত সবাইকে নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে তোলেন গ্রুপের এক্টিভ সদস্য মাকসুদা খান বিনা। দুপুরে শিশুদের মজার খেলা ও গুডি ব্যাগ বিতরণে উৎসবে যুক্ত হয় আরেকটি আনন্দের মাত্রা।

দুপুর ১টার পর অতিথিদের আগমন অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও বর্ণিল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চনদা মাহজাবীন এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর সবুজ আয়াত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আলোকিত নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শারমিন সেলিম তুলি, ব্লু মাল্টিমিডিয়া সল্যুশনের সত্ত্বাধিকারী ও বিটিভির প্ল্যানার আফসানা রুমকি, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল, নাহার কুকিং ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষক হাসিনা আনছার, মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর রিসালাতুন্নাহার, সাংবাদিক রাফিউজাম্মান রাফি, নবেরা ডেন্টাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেক ওসমানী এবং পারফেক্ট ইলেকট্রনিকসের ফাউন্ডার ও সিইও গোলাম শাহরিয়ার কবীর। অতিথিরা গ্রুপের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং নারী উদ্যোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার এই প্রচেষ্টাকে দেশের উদ্যোক্তা সংস্কৃতির জন্য অনুকরণীয় বলে মত দেন।

অনুষ্ঠানে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও এডমিন কাজী নওশীন লায়লা শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘চার বছরের এই যাত্রা ছিল ভালোবাসা, পরিশ্রম আর স্বপ্নের সমন্বয়। এই পরিবার শুধু একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি আমাদের হৃদয়ের বন্ধন।’ তার বক্তব্যে অনুপ্রেরণার সুর ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সবার মনে।

এরপর শুরু হয় র‍্যাম্প ওয়াক পর্ব, যেখানে খ তে খাঁটি পরিবারের সদস্যরা আত্মবিশ্বাস ও স্টাইলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিকেলে কেক কাটা পর্বে উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে লায়ন’স ক্লাব প্রাঙ্গণ। চার বছরের সাফল্যের প্রতীক সেই কেক কাটার মুহূর্তে উপস্থিত সবার চোখে ছিল গর্ব ও আনন্দের ঝিলিক।

পরে অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। গ্রুপের এডমিন ও মডারেটর টিম সম্মানিত অতিথিদের পাশাপাশি সারাবছরের সেরা বিক্রেতা বা ‘বেস্ট সেলার’ সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয় গ্রুপের বায়ার ও সহযোগীদেরও, যাঁদের অবদানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ ক্রমে শক্তিশালী কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে।

এ বছরের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে কোলাবোরেশন পার্টনার হিসেবে পাশে ছিল একাধিক প্রতিষ্ঠান— শাড়ির ব্র্যান্ড সাটক, গহনার ব্র্যান্ড কাব্যকথা, হিজাব ব্র্যান্ড ট্রেন্ডি লুক বাই ইমা এবং খাবার পার্টনার হিসেবে নীলার হেসেল, দেশজ ও দেশীয় ঐতিহ্যফ্লোক ফুড। তাদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে করেছে আরও প্রাণবন্ত ও বর্ণিল।

দিনভর গান, গজল, খেলা, ফ্যাশন, আলোচনা ও ক্রেস্ট বিতরণের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পরিণত হয় এক সত্যিকারের পারিবারিক মিলনমেলায়। হাসি, ভালোবাসা, বন্ধন আর সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে দিনটি।

চার বছরের পথচলার এই উদযাপন যেন ঘোষণা দিল আরও বড় ভবিষ্যতের— যেখানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ হয়ে থাকবে উদ্যোগ, একতা ও মানবিকতার অনন্য প্রতীক।

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত