নিজের নামের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে জীবনের দর্শন। নাম স্বপ্না, আর স্বপ্নই ছিল তার পুঁজি। কখনো ভেবেছিলেন না, ঘরের এক কোণ থেকে শুরু হওয়া স্বপ্ন তাকে নিয়ে যাবে নিজের তৈরি এক কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দুতে— একটি সেলাই ঘরে, যেখানে আজ প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন বোনা হয়। হাতে ছিল মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু সেই সামান্য পুঁজি আজ পরিণত হয়েছে এক অনুপ্রেরণার গল্পে। তিনি রহিমা আক্তার স্বপ্না— ‘দি বেস্ট কালেকশন’-এর উদ্যোক্তা।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর সঙ্গে কথায় স্বপ্না তুলে ধরেন তার পথচলার গল্প, সংগ্রাম আর স্বপ্নের আলোকরেখা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
স্বপ্না বলছিলেন, ‘২০১৮ সালে ঘরে বসেই শুরু করেছিলাম দি বেস্ট কালেকশন। তখন অনলাইনেই বিক্রি করতাম, মাঝে মাঝে অফলাইনেও কিছু সেল হতো। পরে ধীরে ধীরে বুঝলাম, শুধু অনলাইন নয়— নিজের একটা জায়গা দরকার।’ সেই ভাবনা থেকেই ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি উদ্বোধন করেন নিজের প্রথম শোরুম। সঙ্গে যুক্ত হয় টেইলার্স ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যেখানে মেয়েদের সেলাই ও হাতের কাজ শেখানো হয়। এখন ‘দি বেস্ট কালেকশন’-এ পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি থ্রি-পিস, থান কাপড়, শাড়ি, বিছানার চাদর, লুঙ্গি, হিজাব, প্লাজো, কসমেটিকস ও মেয়েদের ইন্টেরিয়র গার্মেন্টসসহ নানা পণ্য।
কেন উদ্যোক্তা হলেন জানতে চাইলে স্বপ্না বলেন, ‘স্বাধীনভাবে কিছু করার মধ্যে যে মানসিক প্রশান্তি আছে, সেটা চাকরিতে পাওয়া যায় না। পাঁচ বছর চাকরি করে বুঝেছি, চাকরি মানে একরকম পরাধীনতা। তাই ঠিক করেছিলাম, নিজের কিছু করব। সেই চিন্তা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়া।’
ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছে ছিল ডাক্তার অথবা শিক্ষক হওয়ার। পড়েছেন বিজ্ঞান বিভাগে, কিন্তু জীবনের বাস্তবতা দ্রুতই বদলে দেয় পথচলা। ‘এসএসসি পাসের পরই বিয়ে হয়ে যায়। দুই বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। পরে প্যারামেডিকেল কোর্স করি, কিন্তু ডাক্তার হওয়া আর হলো না,’— বলছিলেন স্বপ্না। তবু থেমে থাকেননি। প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন পাঁচ বছর, তারপর এক সময় সাহস করে উদ্যোগ নিয়েছেন নিজের ব্যবসা শুরু করার।
উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পরিবারের সহযোগিতার কথা বলতে গিয়ে স্বপ্নার কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার ছোঁয়া, ‘আমার হাজব্যান্ডের সহায়তাই আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস দিয়েছে। তিনি সব সময় পাশে থেকেছেন, আর্থিকভাবেও, মানসিকভাবেও। দুই ছেলেও বিভিন্ন সময় সাহায্য করে।’
তবে নারী হয়ে উদ্যোগ নেওয়া যে সহজ নয়, তা ভালোভাবেই জানেন তিনি। ‘পরিবার সামলে কিছু করা মানেই চ্যালেঞ্জ। সংসার, বাচ্চা, সামাজিক চাপ— সব সামলে এগোতে হয়। তবে আমার হাজব্যান্ড যেভাবে পাশে থেকেছেন, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি,’ বলেন স্বপ্না।
২০১৮ সালের উদ্যোগ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই আসে করোনা মহামারি। ব্যবসা তখন একেবারে থমকে যায়। “কাস্টমারদের বাসায় নিতে পারতাম না, দোকান ছিল না, বিক্রিও বন্ধ। তখনই আমি খুঁজে পেলাম ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’। সেখানে যুক্ত হয়ে অনলাইনে আবার কাজ শুরু করি। প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ভিডিও দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, হাল ছাড়া যাবে না। আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে।”
স্বপ্না সত্যিই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। করোনার কঠিন সময় পেরিয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি নতুন করে দোকান চালু করেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন করেন নিজের শোরুম, সাথে টেইলার্স ইউনিটও। আজ তার মুখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক, ‘আমি এখন একজন স্মার্ট উদ্যোক্তা হিসেবে গর্ব বোধ করি।’
তরুণদের উদ্দেশে স্বপ্না বলেন, ‘চাকরি করলে শুধু নিজের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু উদ্যোক্তা হলে অন্যদেরও কাজের সুযোগ দেওয়া যায়। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণদের ছোট ছোট উদ্যোগ শুরু করা উচিত। দেশের বেকারত্ব কমাতে উদ্যোক্তাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ— ‘যে কাজটা পারবে, যেটায় ভালো লাগে, সেটাতেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, প্রশিক্ষণ নিতে হবে, বাজার বুঝে চলতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা— ধৈর্য ধরতে হবে। ব্যবসা একদিনে দাঁড়ায় না।’
নিজের উদ্যোগ নিয়ে সমাজে ভূমিকা রাখার কথাও বলেন তিনি। ‘আমার প্রতিষ্ঠানে এখন কয়েকজন কাজ করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে কোনো কাজ জানত না। আমি তাদের সেলাই ও হাতের কাজ শিখিয়েছি। তারা এখন নিজেই আয় করছে— এটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।’
আগামী দিনের স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্না জানান, ‘দি বেস্ট কালেকশন’ একদিন দেশের সেরা ব্র্যান্ড হবে— এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। দেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত পণ্য নিয়েও কাজ করতে চান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় নিজের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি, যেন স্থানীয় পণ্যগুলোকে তুলে ধরা যায়।’
বাংলাদেশের জন্যও তার বিশেষ পরিকল্পনা আছে— ‘দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। আমি চাই, দেশের বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তুলতে চাই, যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে’, বলেন স্বপ্না।
করোনাকালের স্থবির দিনগুলো যেন অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কেউ প্রিয়জন, কেউ বা হারিয়েছেন জীবনের গতি। কিন্তু সেই থেমে যাওয়া সময়েই নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন সুলতানা মুক্তা। দীর্ঘ ১৭ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম — ‘ঋক্ষশৈলী’।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে সুলতানা মুক্তা তুলে ধরেন তার ‘ঋক্ষশৈলী’র গল্প, সংগ্রাম আর স্বপ্নের কথা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
‘ঋক্ষশৈলী’ মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা আয়োজনের একটি সংগঠন। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ঘরোয়া নারী উদ্যোক্তা, হাতে বানানো পণ্যের কারিগর— সবাইকে এক ছাতার নিচে এনে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করেছে মুক্তার এই উদ্যোগ।
‘আমি শিক্ষকতা করতাম অনেক দিন। ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। মনে হচ্ছিল, জীবনে কিছু একটা নিজের মতো করে করতে চাই,’— বলছিলেন মুক্তা। ‘সেই সময় অনলাইনে Tuna-Tunyy নামে একটি বুটিক পেজ খুলি। উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত থাকা, কিন্তু ধীরে ধীরে কাজটাই ভালোবাসায় পরিণত হলো।’
ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া— সেই স্বপ্ন তিনি পূরণও করেছেন। কিন্তু উদ্যোক্তা জীবনের এই অধ্যায় যেন মুক্তার জীবনের দ্বিতীয় প্রেরণা। ‘শিক্ষকতা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, আর উদ্যোক্তা জীবন দিয়েছে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ,’— বললেন তিনি।
শুরুতে পরিবার থেকেই এসেছিল শঙ্কা, সন্দেহ আর কিছু নিরুৎসাহ। “পরিবার বলত— ‘তোমাকে দিয়ে হবে না।’ তখন ভাবতাম, কেন পারব না?”— স্মৃতি হাতড়ে বললেন মুক্তা। ধীরে ধীরে সেই অবিশ্বাসই হয়ে উঠেছে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।
তবে মুক্তার গল্প একা লড়াইয়ের নয়— বরং একসঙ্গে এগিয়ে চলার গল্প। ২০২২ সালে অনলাইনে পরিচিত চারজন বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো একটি মেলার আয়োজন করেন তারা। নাম দেন ‘ঋক্ষশৈলী’। প্রথম আয়োজনেই মেলে অভাবনীয় সাড়া। ‘সেই মেলাতেই বুঝলাম— একা নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই সফলতা সম্ভব,’ বলেন মুক্তা।
এখন পর্যন্ত ১৭টি মেলা আয়োজন করেছে ঋক্ষশৈলী। প্রতিটি মেলাতেই সুযোগ পেয়েছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা, যারা হয়তো কখনও দোকানের বাইরে নিজেদের পণ্য দেখানোর সাহস পাননি। মুক্তা বলেন, ‘আমরা এমন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিই, যারা শুরু করছেন একদম নতুন করে। তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’
তবে সহজ ছিল না এই যাত্রা। সংসার, সন্তান, ঘর সামলে উদ্যোক্তা জীবনে সময় দেওয়া— শুরুতে ছিল অসম্ভব কঠিন। মুক্তা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঘর সামলে নিজের জন্য সময় বের করা। ধীরে ধীরে পরিবার বুঝেছে, আমিও ব্যালান্স করতে শিখেছি।’
ব্যর্থতাও এসেছে পথে। মূলধনের অভাব, পণ্য সংগ্রহে সমস্যা, অনলাইন পেজের প্রচার না পাওয়া— সবই পেরিয়ে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা। তার মতে, ‘সফল হতে গেলে বারবার পড়তে হবে, আবার উঠতেও হবে। জানার শেষ নেই, শেখার শেষ নেই। এই মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়।’

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরতে থাকা তরুণদের তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হলে শুধু নিজের জীবিকার পথ তৈরি হয় না, আরও কয়েকজনের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। এখন অনেক তরুণ পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোগ নিচ্ছে— এটা ভালো লক্ষণ।’
নতুনদের জন্য তার পরামর্শ, ‘ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ একদিনে সফল হয় না। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। নিজের কাজের বিষয়ে জানতে হবে সব কিছু এবং কখনও হাল ছাড়া যাবে না।’
ঋক্ষশৈলীর সাফল্যের পেছনে মুক্তা ও তার দলের যে নিষ্ঠা, তা এখন অনেক নতুন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা। মুক্তা বলেন, “আমরা ৬৪ জেলায় কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুযোগ তৈরি করা। আর একদিন আমরা যেন দেশের বাইরেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-্এর গর্ব ছড়িয়ে দিতে পারি।”
সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়েও তিনি সচেতন। বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যবসা নয়, কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। যেন দেশের তরুণ-তরুণীরা কাজের সুযোগ পায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’
শেষে তিনি বললেন একটাই কথা— ‘কোনো কাজেই হাল ছাড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে— আমি পারি, আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’
উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জনপ্রিয় অনলাইন উদ্যোক্তা কমিউনিটি ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।
রাজধানীর আগারগাঁও লায়ন’স ক্লাবে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠান ছিল আনন্দ, বন্ধন ও ভালোবাসার এক মহাসমারোহ।
উৎসবের সূচনায় সঞ্চালক অতিথি ও সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এম্বাসেডর স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান সাদিক। এরপর শিশু রাহনুমা বিনতে তারিকের ছড়া আবৃত্তি I am a little teapot. শেখ আয়েশা বিনতে নূর আনায়ার প্রাণবন্ত ছড়া গান উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের এমন অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানস্থল হয়ে ওঠে এক পারিবারিক আনন্দভুবন।

এরপর বক্তব্য রাখেন গ্রুপের সদস্য ফারহানা হোসেন মিতা এবং মডারেটর সুমাইয়া জাহান। তাঁরা ‘খ তে খাঁটি পরিবার’-এর চার বছরের পথচলা, সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং উদ্যোগী নারীদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। গজল পরিবেশন করেন আফনান সাদিক এবং ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গান গেয়ে উপস্থিত সবাইকে নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে তোলেন গ্রুপের এক্টিভ সদস্য মাকসুদা খান বিনা। দুপুরে শিশুদের মজার খেলা ও গুডি ব্যাগ বিতরণে উৎসবে যুক্ত হয় আরেকটি আনন্দের মাত্রা।
দুপুর ১টার পর অতিথিদের আগমন অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও বর্ণিল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চনদা মাহজাবীন এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর সবুজ আয়াত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আলোকিত নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শারমিন সেলিম তুলি, ব্লু মাল্টিমিডিয়া সল্যুশনের সত্ত্বাধিকারী ও বিটিভির প্ল্যানার আফসানা রুমকি, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল, নাহার কুকিং ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষক হাসিনা আনছার, মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর রিসালাতুন্নাহার, সাংবাদিক রাফিউজাম্মান রাফি, নবেরা ডেন্টাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেক ওসমানী এবং পারফেক্ট ইলেকট্রনিকসের ফাউন্ডার ও সিইও গোলাম শাহরিয়ার কবীর। অতিথিরা গ্রুপের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং নারী উদ্যোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার এই প্রচেষ্টাকে দেশের উদ্যোক্তা সংস্কৃতির জন্য অনুকরণীয় বলে মত দেন।

অনুষ্ঠানে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও এডমিন কাজী নওশীন লায়লা শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘চার বছরের এই যাত্রা ছিল ভালোবাসা, পরিশ্রম আর স্বপ্নের সমন্বয়। এই পরিবার শুধু একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি আমাদের হৃদয়ের বন্ধন।’ তার বক্তব্যে অনুপ্রেরণার সুর ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সবার মনে।
এরপর শুরু হয় র্যাম্প ওয়াক পর্ব, যেখানে খ তে খাঁটি পরিবারের সদস্যরা আত্মবিশ্বাস ও স্টাইলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিকেলে কেক কাটা পর্বে উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে লায়ন’স ক্লাব প্রাঙ্গণ। চার বছরের সাফল্যের প্রতীক সেই কেক কাটার মুহূর্তে উপস্থিত সবার চোখে ছিল গর্ব ও আনন্দের ঝিলিক।

পরে অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। গ্রুপের এডমিন ও মডারেটর টিম সম্মানিত অতিথিদের পাশাপাশি সারাবছরের সেরা বিক্রেতা বা ‘বেস্ট সেলার’ সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয় গ্রুপের বায়ার ও সহযোগীদেরও, যাঁদের অবদানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ ক্রমে শক্তিশালী কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে।
এ বছরের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে কোলাবোরেশন পার্টনার হিসেবে পাশে ছিল একাধিক প্রতিষ্ঠান— শাড়ির ব্র্যান্ড সাটক, গহনার ব্র্যান্ড কাব্যকথা, হিজাব ব্র্যান্ড ট্রেন্ডি লুক বাই ইমা এবং খাবার পার্টনার হিসেবে নীলার হেসেল, দেশজ ও দেশীয় ঐতিহ্য ও ফ্লোক ফুড। তাদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে করেছে আরও প্রাণবন্ত ও বর্ণিল।

দিনভর গান, গজল, খেলা, ফ্যাশন, আলোচনা ও ক্রেস্ট বিতরণের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পরিণত হয় এক সত্যিকারের পারিবারিক মিলনমেলায়। হাসি, ভালোবাসা, বন্ধন আর সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে দিনটি।
চার বছরের পথচলার এই উদযাপন যেন ঘোষণা দিল আরও বড় ভবিষ্যতের— যেখানে ‘খ তে খাঁটি পরিবার’ হয়ে থাকবে উদ্যোগ, একতা ও মানবিকতার অনন্য প্রতীক।