একতরফা ও সাজানো নির্বাচনে রাষ্ট্রের সঙ্কট ঘনীভূত হবে

Post Thumbnail

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক দমননীতি গ্রহণ করেছে। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠাচ্ছে। এ নির্বাচন হবে সাজানো ও একতরফা। এমন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা গভীর সঙ্কটে পড়বে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর পান্থপথ সড়কে ‘দৃকপাঠ’ ভবনে আয়োজিত ‘আবারো সাজানো নির্বাচন: নাগরিক উৎকণ্ঠা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তারা। ‘মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির ব্যানারে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুশসানের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম।

আলোচনার শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল লিখিত বক্তব্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুরোনো মামলা সচল হওয়া, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও সাজা, অস্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা, কিংস পার্টি গঠনের বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের একতরফা ও সাজানো নির্বাচনের আয়োজন এমনকি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত। অতীতের একতরফা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পরেও সরকার যদি অনুরুপ আরেকটি নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সামর্থ্য ও সম্ভাবনা গভীর সঙ্কটে পতিত হবে। এতে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে।

নির্বাচনের পুন:তফসিল ঘোষণা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনা সভায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে জন বিস্ফোরণের আশঙ্কা করে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর লাখ লাখ সদস্যকে আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের ব্যবহার করছে সরকার। এখন র‌্যাব টহল দিচ্ছে, বিজিবি টহল দিচ্ছে। সেনাবাহিনীকেও হয়তোবা টহল দিতে নামানো হবে। আমার কেন যেন মনে হয়, জনবিক্ষোভের মোকাবেলা করতে সরকার সিরিয়ার আসাদ মডেলে চলে যাচ্ছে। এজন্যই আমি এখন ভীত সন্ত্রস্থ ও হতাশাবাদী।’

তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের সবচে বড় নিশ্চয়তা হলো বিচারকাজ হতে হবে প্রকাশ্য আদালতে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এখন আইডি কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে হয়। আমাকে যদি কার্ড দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করতে হয় তাহলে আমি বলবো, সুপ্রিম কোর্ট এখন ক্যান্টনমেন্ট হয়ে গেছে। কেননা ক্যান্টেনমেন্টে কেবল আইডি কার্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার বলছে উন্নয়নের কারণে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। যদি এটা বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে আস্থার পরিবেশ তৈরি করুন। আর যদি মনে করেন জনগণ খেপে আছে তাহলে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। আসলে সরকার জনগণের রায়কে মোকাবেলা করতে ভয় পাচ্ছে। সরকার ভীত সন্ত্রস্থ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একবছর ধরেই বলছেন, খেলা হবে। এখন মনে হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র পুরো প্রক্রিয়াটি এই খেলার অংশ এবং এতে প্রধানমন্ত্রীরও সায় রয়েছে। যাতে বিরোধীপক্ষকে হাত পা বেধে খেলার জন্য বলা হবে।’ 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে (তত্ত্বাবধায়ক  সরকার) অবৈধ উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম মজমুদার বলেন, এর আগে জালিয়াতির নির্বাচনের কারনে এই সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচন কমিশনেরও এই তফসিল ঘোষণা করার কোনো অধিকার নেই।

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের আইনে কমিশন গঠনে শুধু রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর কাছে নাম প্রস্তাবের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান কমিটি গঠনের মাধ্যমে এটাকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। এটা সুস্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘণ। এখন ইসির নিয়োগই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তাদের কার্যক্রম কি আইনানুগ হয়? এই বিষয়গুলো আমাদের বোধে আনতে হবে। এই বোধে আনতে পারলেই আমরা শক্তি সঞ্চয় করতে পারবো। প্রতিবাদ ও করনীয় নির্ধারণ করতে পারবো।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি এখনো আশাবাদী। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, ভোটের অধিকার একটা আদর্শের মতো। এটাকে কখনো বিলুপ্ত ও দূরীভূত করা যায় না।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক প্রমুখ।