তিনশ রানেও তৃপ্তি নেই

Post Thumbnail

সিলেটে প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮৫ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১০ রান। কেউ বলবেন, মন্দ কি! প্রথম ইনিংসে তিনশোর ওপরে রান হয়েছে। তবে গোটা দিনের খেলার মনোযোগী দর্শকদের কাছে মনে হবে, উইকেটের ঘরে সংখ্যাটা ৫ হলে এই অর্জনে তৃপ্তি খোঁজা যেত। ব্যাটসম্যানদের অহেতুক চালিয়ে খেলার প্রবণতা আর পার্টটাইম বোলার গ্লেন ফিলিপসকে দুহাত ভরে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসাটাই অতৃপ্তি হয়ে জেঁকে বসেছে।

১৩তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর অভিষেক, ১০২তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে শাহাদাত হোসেন দীপুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক; ৫ বছর পর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট ক্রিকেটের ঘণ্টা বেজে ওঠার সকালটা সাক্ষী হয়ে থাকল দুজনের জীবনের দুটো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের। নভেম্বর শেষের শীতল সকালে টস জিতে ব্যাটিং করাটা সাহসী সিদ্ধান্ত, তবে বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় আর জাকির হাসান চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন। নতুন বলে, তাজা উইকেটে, সকালের আধঘণ্টায় নিউজিল্যান্ডের দুই পেসার টিম সাউদি আর কাইল জেমিসনকে কোনো উইকেট নিতে দেননি। সপ্তম ওভারেই তাই সাউদির স্পিনার শরণ, বল হাতে নেন বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। তাকে শুরুতে দেখেশুনে খেলার পর যেই একটু হাতখুলে খেলার চেষ্টা, তখনই জাকিরের স্টাম্প ভাঙলেন এজাজ। জোরের ওপর করেছিলেন বলটা, এজাজের বাঁহাতি স্পিন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জাকিরের জন্য হয়ে যায় অফস্পিন, কাট করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢোকে। নিউজিল্যান্ডকে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া এজাজের ওপর এসেই চড়াও হন শান্ত। পূর্ববর্তী টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে মনে করিয়ে দিতেই যেন ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। এজাজের বলে এগিয়ে এসে চার ছয় মেরেছেন। সেভাবেই ফিলিপসের ঝুলিয়ে দেওয়া ফুলটস তুলে মারতে গিয়ে যেভাবে ক্যাচ দিয়েছেন, সেটা পাড়ার ক্রিকেটে ব্যাটিং না জানা খেলোয়াড়রা করে। ৩ ছক্কা আর ২ চারে ৩৫ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট নেতৃত্বের প্রথম অধ্যায়ে শান্ত যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, সেটা নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় কিছু নয়।

প্রমথ চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়’। লম্বা সময় ধরে উইকেটে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়ের ধৈর্যের চেয়ে অধিনায়ক শান্তর চার ছয়ে মুগ্ধের সংখ্যাই বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে বেশি। তাই তো অভিজ্ঞতায় অশ্বত্থের মতো প্রাচীন মুশফিকুর রহিমও উড়িয়ে মেরে ক্যাচ দেন মিড-অফে, অথচ তখন প্রয়োজন ছিল একটা জুটির। প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছেন নুরুল হাসান সোহান, যতটা না নিজের কৃতিত্বে তার চেয়ে বেশি সদ্য বাবা হওয়া লিটন দাসের টেস্ট না খেলার অনিচ্ছায়। ৫ বাউন্ডারিতে ২৮ বলে ২৯ রান করে সোহান যেন বোঝাতে চাইলেন, বড্ড ভুলই করেছেন নির্বাচকরা। বিশ্বকাপে যার ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এত উত্থান-পতন, সেই মেহেদী হাসান মিরাজ কাইল জেমিসনের বলে বোকার মতো ব্যাট পেতে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কোনো শট না খেলে কীভাবে ক্যাচটা তুলে দিলেন সেটা মিরাজই ভালো বলতে পারবেন। অভিষিক্ত শাহাদাতও আশপাশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের দেখেই বোধহয়  তাড়িত হয়েছিলেন, ফিলিপসের বলে এগিয়ে এসে বল তুলে দিলেন মিডউইকেটের ফিল্ডারের হাতে। ৫৩টা বল খেলার পর এই ধৈর্যচ্যুতি নিশ্চয়ই ভোগাবে অভিষেক ইনিংসে ২৪ রানে আউট হওয়া শাহাদাতকে।

আত্মাহুতির মিছিলে নাম লেখাননি দুজন। মমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান। ১৭১ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে, এটাই বাংলাদেশের ইনিংসের উজ্জ্বল অংশ। টেস্ট ম্যাচের মেজাজটা দুজনেই বোঝেন, খেলছিলেনও সেভাবেই। লেগস্পিনার ইশ সোধির বলটায় ঝুঁকে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন জয়, একটু জোরের ওপরে করা বলটা ব্যাটের কানায় লেগে সিøপে ড্যারেল মিচেলের কাছে চলে যায়। ৮৬ রানে আউট হয়ে যান জয়। মমিনুল কাট করতে গিয়ে ইনসাইড এজড হয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। একজন সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে আরেকজন হাফসেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে বিদায় নেন। অথচ এই দুজনের জুটিটা বড় হলে বাংলাদেশ থাকত অনেক স্বস্তিকর জায়গায়।

‘হারলেও বাংলাদেশ, জিতলেও বাংলাদেশ’, গোত্রের সমর্থকরা বলবেন, বেশ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দিনে স্কোরবোর্ডে তিনশোর বেশি রান উঠে গেছে। তবে ৭ জন ব্যাটসম্যান আর মাত্র ১জন মাত্র পেসার আর ৩ স্পিনার নিয়ে দল গড়ার পর যখন প্রথম দিন শেষেই উইকেটের ঘরে ৯, তখন তিনশো রানেও তৃপ্তির ঢেঁকুর আসে না। মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলা, পার্টটাইম বোলার ফিলিপস যখন দিন শেষে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার, তখন আর ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের দিকে চোখ যায় না