দেশ

দেশ

বহরমপুরে মাদকের রমরমা ব্যবসা, অদৃশ‍্য চাপে অসহায় প্রশাসন

রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুরে মাদকে ছয়লাব হয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। অদৃশ্য চাপে গ্রেফতার করতে গিয়ে হয়রানিতে পড়তে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে।

বহরমপুর এলাকায় মাদকের সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী রোকন উদ্দিনের ছেলে সেন্টু ও তার স্ত্রী মিতা এবং খোরশেদ আলী ছেলে রাব্বিল। এরা অদৃশ্য এক হোয়াইট কালারের গডফাদারের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছেন মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের বাসায় দিন-রাত সমানভাবে প্রকাশ‍্যেই চলে মাদক কেনাবেচা। সেই সাথে চলে সেখানে বসেই সেবন। টাকা দিলেই যে কোনো বয়সের যে কেউ পায় হেরোইন, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। অনেক স্কুল কলেজের ড্রেস পরিহিত ছাত্ররা নিচ্ছে দেদারসে মাদক। তাদের এই মাদক বিক্রির হাটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই চলে নির্যাতন। এমন অনেক ভুক্তভোগীরা বলছেন, অদৃশ্য এক শক্তি তাদের ছায়া দিয়ে রেখেছে। সেই শক্তি বলয়ে থানা-পুলিশও অসহায় এদের কাছে। এদের বিরুদ্ধে মাদকসহ নানা অপকর্মের ডজন ডজন মামলা আছে। বর্তমানে সেন্টু জেলে থাকলেও বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। ওই অদৃশ্য শক্তির নিকট থানা-পুলিশও কখনও কখনও অসহায়। অভিযান করে অদৃশ্য শক্তির কাছে মিথ্যা হয়রানিতেও পড়তে হয়েছে থানা পুলিশকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বিক্রি। তাদের ভয়ে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলছে না প্রতিবেশীরা। তবে সেখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বলছেন, এসকল মাদক কারবারি নিকট প্রচুর সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও চোর আছে। যারা তাদের নিয়মিত কাস্টমার। কেউ এদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে নেমে আসে নির্যাতন ও হয়রানি। তাদের কারণে এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়েছে। যুব সমাজ আজ ধংসের মুখে। কেউ প্রতিবাদ না করায় দিন দিন তাদের সাহস বেড়েছে।

এই প্রতিবেদন থৈরি করতে গোপনে মাদকের হাট লক্ষিপুর আইডি বাগান ও বহরমপুরে গিয়ে দেখা যায় ভয়ঙ্কর চিত্র। অনেকটা প্রকাশ্যে এক নারী হাতে ব্যাগ নিয়ে হেরোইনের পুরিয়া দিচ্ছেন সেবনকারীদের। রাজশাহী নগরীর আইডি বাগানপাড়ায় এভাবেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে ওই এলাকার সাজ্জাদের মেয়ে পিংকি ও টাকা নিচ্ছে টুনু শেখের স্ত্রী সুলতানা বেগম। এভাবে দিনরাত ২৪ ঘন্টা আইডি বাগান পাড়া ও রেল লাইনের ধারে রমরমা মাদক ব্যবসা চলছে। বাড়ির সামনেই এ যেন মাদকের হাট বসেছে- এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

প্রতিদিন ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, ট্যাপান্টাডল টেবলেটসহ বিভিন্ন মাদক কিনতে আসছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই মাদক বিক্রির স্পটে। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন মাদক কারবারি রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে অনেকেই।

এই প্রতিবেদককে স্থানীয়রা বলেন, বহরমপুর এলাকায় মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা, রাব্বিল ও সেন্টুর পরিবার। তবে আইডি বাগাপাড়ার রেল লাইন এলাকায় প্রভাবশালী মাদক কারবারি হলেন রাব্বুল শেখের ছেলে রুবেল ও আকুলের ছেলে জন। রুবেল ও জনের নেতৃত্বে রমরমা মাদক ব্যবসা চলছে। তাদের নেতৃত্বে অন্যান্য মাদক কারবারি যেমন- আইডি বাগানপাড়া রেল লাইনের ধারে জনের স্ত্রী মোছাঃ সাইদা বেগম, সাজ্জাদের মেয়ে পিংকি, সম্রাটের স্ত্রী জরিনা বেগম ও তার নাতনি বন্যা, সাজ্জাদের স্ত্রী হাসনা বেগম ওরফে ডাকান্নি বেগম, লক্ষিপুর বাঁকির মোড় ডোমপাড়া এলাকার সেলিমের ছেলে সম্রাট, রাব্বুল শেখের স্ত্রী ভানু বেগম, টুনু শেখের স্ত্রী সুলতানা, দাসপুকুর হজারগত্ত এলাকার জনির স্ত্রী সাথী বেগম, আইডি বাগানপাড়া রেল লাইনের ধারে বজলুর মেয়ে লাকি এবং ফেলকি, লক্ষিপুর ডিবি অফিসের সন্নিকটে ইউনাইটেড সেন্টারের উত্তর গলি’র বাবুর ছেলে বিপ্লব, বেদেনার ছেলে তাঞ্জিলসহ কিছু নারী ও পুরুষ এখন মাদকের রমরমা ব্যবসায় লিপ্ত। এরা সবাই বর্তমানে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলেই উল্টা মাদক কারবারিরা হুমকি দিয়ে থাকে। বেশি কথা বললে উল্টা মাদক দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। প্রকাশ্যে তারা বলেন- পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণসহ সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করি।

মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাদের মাদক বিক্রির কারণে এলাকার যুবকরা মাদক আসক্তে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যুবসমাজ ধংস হয়ে যাবে।

ডি বি আনোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম বলেন, যুব সমাজ আজ মাদকের ভয়াল থাবায় ধংসের মুখে। এটা এই এলাকায় এখন ছয়লাব হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জানতে চাইলে রাসিকের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন বলেন, আমি আমার ওয়ার্ডে মাদকের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান নিয়ে থাকি। কিছু শক্তিশালী চক্র এসব মাদক কারবারিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। আমি এসব বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন চাইলে আমিও সহযোগিতা করবো।

জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র এডিসি (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতি প্রাপ্ত) জামিরুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদক কারবারিরা আটক হয়। আবার তারা জেল থেকে বের হয়ে মাদক ব্যবসায় লিপ্ত হয়। অন্য এক প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, যদি কোনো পুলিশ সদস্য এসব মাদক কারবারিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করে তাহলে তদন্তে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার
বিষয়:
পরবর্তী খবর

মেট্রোরেলের সময়সূচি বাড়ল

যাত্রী চাপ সামলাতে রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে বাড়ানো হয়েছে রাজধানীর মেট্রোরেল চলাচলের সময়সূচি। প্রতিদিন সকালে চালু এবং রাতে বন্ধের সময় আধা ঘণ্টা করে বাড়ানো হয়েছে।

নতুন সূচি অনুযায়ী, এখন থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ছে, যা আগে ছাড়ত সকাল ৭টায়। অপরদিকে মতিঝিল থেকে শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। শুক্রবারের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে— আগে বিকেল ৩টায় ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এখন থেকে আড়াইটায় চালু হবে মেট্রোরেল।

রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৬টায় উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যায়। বর্ধিত সময়ে চলাচল করায় খুশি যাত্রীরা। অনেকে জানিয়েছেন, সকালে যাত্রী তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যায়। নতুন সূচি কার্যকর হওয়ায় যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত হবে বলে আশা করছেন তারা।

বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতিদিন চার লাখের বেশি যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করেন। যাত্রীরা সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ায় দৈনন্দিন যাতায়াত আরও সহজ হয়ে উঠবে।

এদিকে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ট্রিপ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে সংস্থাটি।

শেয়ার
পরবর্তী খবর

পোরশায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু

নওগাঁর পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে “টাইফয়েড (টিসিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন–২০২৫” এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে উপজেলার নিতপুর কুসুমকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাকিবুল ইসলাম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও বলেন, “টাইফয়েড প্রতিরোধে এই টিকা শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রতিবছর টাইফয়েডে বহু শিশুর মৃত্যু ঘটে। এই টিকার বাজারমূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় নিম্নআয়ের পরিবারের পক্ষে তা কেনা কঠিন। তাই সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সকল শিশুকে বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করছে।” তিনি সকল অভিভাবকের প্রতি আহ্বান জানান, “আপনারা যেন সন্তানদের এই টিকা দিতে ভুল না করেন এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে সচেতন করেন।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নাজির আহটা্মইদ ও মেডিকেল অফিসারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া বিভিন্ন পেশার মানুষ, স্থানীয় সাংবাদিক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে অংশ নেন।

আলোচনা পর্ব শেষে ইউএনও উপস্থিত সবাইকে ভুল ধারণা ও গুজব থেকে বিরত থেকে টিকাদানে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা প্রদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।

 

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত