দেশ, নির্বাচিত

দেশ, নির্বাচিত

প্যারিস খাল পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে : মেয়র আতিক

ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেছেন, মিরপুর প্যারিস খাল পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মিরপুর প্যারিস খাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। এই কাজে সহযোগিতা করতে যুক্ত হয়েছেন বিডি ক্লিনের ১২শ’ স্বেচ্ছাসেবী।

আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর প্যারিস খালে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠে বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীদের দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ বাক্য পাঠ করান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

১২শ’ স্বেচ্ছাসেবী চারটি দলে ভাগ হয়ে প্যারিস খালের চারটি অংশে ময়লা পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করে। একটি দলের সাথে যুক্ত হয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম হাতে গ্লাভস পড়ে নিজেই খালে নেমে যান।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি মিরপুর প্যারিস খাল পরিদর্শনে এসে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র। তিনি বলেছেন, ‘ময়লা ও দখলমুক্ত করে মিরপুর প্যারিস খাল আগের রূপে ফেরানো হবে।’

আজ পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে মেয়র বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্যারিস খাল পরিষ্কার শুরু করেছি। প্রথম ধাপে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া প্যারিস খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। পরিষ্কার অভিযানে আমার সাথে বিডি ক্লিনের ১২শ’ স্বেচ্ছাসেবী যোগ দিয়েছে। দুইদিন আগে পরিদর্শনে এসে আমি সবাইকে খালের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অনেকে যার যার স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ সময় চেয়েছে। অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য আমি তাদেরকে একমাস সময় দিয়েছি। ময়লা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’

মেয়র বলেন, ‘একসময় মিরপুর প্যারিস খাল দিয়ে লঞ্চ চলতো। আর আজ সেই খাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার কারণে এই খালে কোন পানি নেই বরং খালের উপর দিয়ে হাঁটা যায়। আমি নিজে জনগণের জন্য খাল পরিষ্কারে অংশ নিয়েছি। এলাকাবাসীর লজ্জা হওয়া উচিত। তারা এই খালটিকে ময়লা ফেলে, দখল করে গলা টিপে হত্যা করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা আজ ছুটির দিনে স্বতস্ফূর্তভাবে খাল পরিষ্কারের জন্য ছুটে এসেছে। অথচ এই ছেলেমেয়েদের আজকে মাঠে খেলাধুলা করা কথা ছিল, বাসায় বিশ্রাম করা কথা ছিল। কিন্তু তারা খেলা, বিশ্রাম বাদ দিয়ে খাল পরিষ্কারে অংশ নিয়েছে। এলাকাবাসীকে আহবান করছি এর থেকে শিক্ষা নিয়ে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করুন।’

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘এই এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন একটু বৃষ্টি হলে এই এলাকা পানিতে ডুবে যায়। অনেক মুরুব্বি আমাকে জানিয়েছেন মসজিদের অযুখানা পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। প্যারিস খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে এই জলাবদ্ধতা থাকবে না। আপনারা যদি খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করেন তাহলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। শুধু সিটি না, আপনাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।’

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এরই মধ্যে খালের জমি মাপা শুরু হয়েছে। খালের জায়গার মধ্যে যে বিল্ডিং পড়বে সেগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হবে। খালের জায়গায় কিছু বস্তি আছে। বস্তিবাসীদেরকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য। চাইলে আজকে বুলডোজার দিয়ে সব ভেঙে ফেলতে পারতাম কিন্তু ভাঙিনি তাদেরকে সময় দিয়েছি। সময়ের মধ্যে না সরে গেলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কিছু কিছু জায়গায় মাদকের বাণিজ্য চলে। এখানে বড় একটি চক্র মাদক কারবারি করছে। অভিযান শুরু হয়েছে। এখানে ধাপে ধাপে কাজ করা হবে। প্রথমে আমরা প্যারিস খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে চাই। দ্বিতীয় ধাপে খালের ৪০ ফিট জায়গায় উদ্ধারের পরে যে জায়গা থাকবে সে জায়গায় ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। পরে আরো দু’পাশে জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে একটি নান্দনিক পার্ক তৈরি করব।’

অভিযানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলম, অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, ০৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক প্রমুখ।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

৫০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার

সীমান্ত সম্ভারে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

রাজধানীর ধানমণ্ডির বিজিবি সীমান্ত সম্ভার শপিং কমপ্লেক্সের একটি স্বর্ণের দোকানে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রুবেল (২৮), সফিক ওরফে সোহেল (৩৫) এবং সাদ্দাম হোসেন (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৫০ ভরি আট আনা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডি মডেল থানাধীন ‘ক্রাউন ডায়মন্ড এন্ড জুয়েলার্স’ শোরুমে গত ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরচক্র অভিনব পদ্ধতিতে শো-রুমের তালা ও সাটার কেটে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে ১৫৯ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। দোকানের মালিক কাজী আকাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।

মামলার প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জানুয়ারি থেকে ডিবি পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে প্রথমে মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সফিক ওরফে সোহেল এবং মুরাদনগর থেকে সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৮ ভরি ১৪ আনা আসল স্বর্ণ এবং ২১ ভরি ১০ আনা গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, চুরির ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার ও অবশিষ্ট স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান পিপিএম জানান, এই চক্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে চুরি সংঘটিত করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

নারী এগিয়ে গেলে সমাজ এগিয়ে যাবে : শারমিন সুলতানা

হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।

শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।

তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।

তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।

শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।

শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।

শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।

 

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত