মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় চাঞ্চল্যকর ইভটিজিং-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরবকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ৬ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০ ।
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকায় বসবাসকারী গাজী দিল হোসেন নিরব (১৭), পিতা-মৃত জব্বার আলী বেপারী গত ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার কামারগাঁও আলহাজ্ব কাজী ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে যায়। উক্ত অনুষ্ঠানের এক পর্যায় কয়েকজন বখাটে ছেলে অজ্ঞাত একজন ছাত্রীকে ধাক্কা দেয় এবং বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। বিষয়টি দেখে নিরব প্রতিবাদ করলে উক্ত্যাক্তকারী বখাটে ছেলেরা নিরবের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় এবং বিভিন্ন প্রকার গালাগালি করতে থাকে। অতঃপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ তাৎক্ষণিক বিষয়টি মিমাংসা করে দিলেও উক্ত বিষয় নিয়ে বখাটে ছেলেরা নিরবের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরস্পর যোগসাজসে নিরবকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯/০২/২০২৪ তারিখ বিকালে নিরব প্রাইভেট পড়া শেষ করে শ্রীনগর থানাধীন কামারগাঁও চৌধুরী বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশ্বের্র স্কুলে ভবনের সিড়িঁতে বসে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করতে থাকে। এ সময় বিকাল ৪:৩৫টায় শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবির উক্ত ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের সাথে থাকা আরো ২০-২১ জন সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র (দা, চাপাতি ও চাকু) নিয়ে নিরবের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এ সময় তারা দা, চাপাতি ও চাকু দিয়ে নিরবের মাথা, বুক, পিঠ ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। নিরব প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে উক্ত স্কুলের রাস্তার পাশে একটি খালের মধ্যে পড়ে যায়। অতঃপর আসামিরা নিরবের মৃত্যু নিশ্চত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন নিরবকে গুরুতর আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিরবকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় নিরবের মা মোসাঃ দিলারা ওরফে নিপা আক্তার (৪০) বাদি হয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় ছেলে নিরব হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবিরসহ ১৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১১/৪২, তারিখ-১০/০২/২০২৪)।
ইতোমধ্যে ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে র্যাব-১০ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ইভটিজিং-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরবকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ৬ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের নাম ১। মোঃ শাহীন সিকদার (১৬), পিতা-লিটন সিকদার, সাং-উত্তর কামারগাঁও, ২। মোঃ রোমান মৃধা (১৭), পিতা-আজিজুল মৃধা, সাং-জগন্নাথ পট্টি, ৩। মোঃ রায়হান (১৭), পিতা-শেখ খলিল, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা, ৪। মোঃ জাহিদ (১৭), পিতা-মোঃ মজিবুর, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা ও ৫। মোঃ আবির (১৭), পিতা-মোঃ আজহার শেখ, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা, সর্ব থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির বিজিবি সীমান্ত সম্ভার শপিং কমপ্লেক্সের একটি স্বর্ণের দোকানে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রুবেল (২৮), সফিক ওরফে সোহেল (৩৫) এবং সাদ্দাম হোসেন (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৫০ ভরি আট আনা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডি মডেল থানাধীন ‘ক্রাউন ডায়মন্ড এন্ড জুয়েলার্স’ শোরুমে গত ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরচক্র অভিনব পদ্ধতিতে শো-রুমের তালা ও সাটার কেটে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে ১৫৯ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। দোকানের মালিক কাজী আকাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জানুয়ারি থেকে ডিবি পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে প্রথমে মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সফিক ওরফে সোহেল এবং মুরাদনগর থেকে সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৮ ভরি ১৪ আনা আসল স্বর্ণ এবং ২১ ভরি ১০ আনা গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, চুরির ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার ও অবশিষ্ট স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান পিপিএম জানান, এই চক্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে চুরি সংঘটিত করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম।
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরও প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রবীর মিত্র আর আমাদের মাঝে নেই। অঞ্জনার পর তার মৃত্যু আমাদের আরও বিমর্ষ করে দিল।’
দাফন ও জানাজা
প্রবীর মিত্রের দাফন ও জানাজার বিষয়ে অভিনেতা মিশা সওদাগর জানান, রাতে তার মরদেহ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। পরদিন বাদ জোহর মরদেহ এফডিসিতে আনা হবে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। পরে প্রবীর মিত্রের পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলামও একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জীবনের শেষ দিনগুলো
৮১ বছর বয়সী প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
প্রবীর মিত্রের জীবন ও ক্যারিয়ার
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার নাট্যযাত্রা শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। যদিও এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি নায়ক হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
প্রবীর মিত্রের অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, এবং ‘প্রতিজ্ঞা’।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে প্রবীর মিত্রের অবদান অমর হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো বিনোদন জগৎ ও দর্শকসমাজ।