দেশ

দেশ

সপ্তাহব্যাপী র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার ১৯

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধীদের তৎপরতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশ জুড়ে র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন তথা র‌্যাবের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাড়ি চোর, অস্ত্র ব্যবসায়ী, পলাতক আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১০ এর গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক এম.জে. সোহেল এসব অভিযান ও গ্রেফতারের বিষয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

অভিযান ১ :
ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার ও মিরপুর থেকে আন্তঃজেলা চোর চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার ও চোরাইকৃত গাড়ি গাজীপুর থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

বিবরণে জানা যায়, ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্যামপুর এলাকার একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরির মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু কাসেদ (৫৩), পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে রাত ৩:০০টায় তার উৎপাদিত আনুমানিক ২,৫০,০০০/- (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মূল্যের ৩২,০০০ (বত্রিশ হাজার) পিস প্লাষ্টিকের বোতলসহ একটি কাভার্ড ভ্যান গাড়ি তার ফ্যাক্টরির সামনে রেখে বাসায় চলে যান। এরপর ঐদিন ভোররাত আনুমানিক ৪:০০টায় এসে তার গাড়িটি সেখানে না পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন স্থানসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ করে গাড়ির কোনো সন্ধান পাননি। এরই মধ্যে ঐদিন দুপুর ১২:০০টায় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে আবু কাসেদকে জানায় যে, প্লাস্টিকের বোতল বোঝাই করা গাড়িটি তাদের হেফাজতে আছে এবং সেটি ফেরত পেতে হলে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা প্রদান করতে হবে।

উক্ত ঘটনার পর আবু কাসেদ ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্লাস্টিকের বোতলসহ কাভার্ড ভ্যান গাড়ি (রেজি নং ঢাকা মেট্রো-ম-১১-৪৯২১) যার আনুমানিক মূল্য-১৭,০০,০০০/- (সতের লক্ষ) টাকা, চুরির অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০৬, তারিখ ০৩/০৩/২০২৪)।

পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অজ্ঞাত গাড়ি চোর চক্রটিকে গ্রেফতার ও চুরিকৃত মালামালসহ গাড়িটি উদ্ধারের লক্ষ্যে অধিনায়ক র‌্যাব-১০ বরাবর একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করলে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গাড়ি চোর চক্রটিকে গ্রেফতার ও চুরিকৃত গাড়িটি উদ্ধারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ মার্চ রাত ১১:৫০টা থেকে ১১ মার্চ সকাল ৯:০০টা পর্যন্ত র‌্যাব-১০ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার জাউলাপাড়া চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি মোঃ কামাল হাওলাদার ওরফে কামরুল ওরফে রাসেল (৪০), পিতা-মৃত আব্দুল মালেক হাওলাদার, সাং-মেঘপাল, থানা-কাউখালী, জেলা-পিরোজপুরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত কামাল ওরফে রাসেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন মাঝরাত ৩:১০টায় ঢাকা জেলার সাভার থানার দক্ষিণ শ্যামপুর এলাকায় আরও একটি অভিযান চালিয়ে আসামি মোঃ মোশারফ হোসেন ওরফে জুয়েল (৩৬), পিতা-মৃত ইউসুফ আলী, সাং-বুদ্ধিজীবী শহিন মিনার, মাজার রোড, ঢাকাকে গ্রেফতার করে। আবার জুয়েলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই তারিখ সকাল ৬.৩০ ঘটিকায় গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন বাহাদুরপুর ভীম বাজার কনকর্ড কনস্ট্রাকশন বাগানের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে পরিত্যাক্ত অবস্থায় বর্ণিত মামলার ঘটনায় চুরি যাওয়া গাড়ি (কাভার্ডভ্যান) উদ্ধার করে এবং ধৃত আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই তারিখ সকাল ৯:০০টায় ডিএমপি ঢাকার শাহআলি থানাধীন নবাবেরবাগ মধ্যপাড়া এলাকায় তাদের অপর দুই সহযোগী মোঃ মফিজ ঢালী ওরফে আলম (৬০), পিতা-মৃত আলতাজ উদ্দীন ঢালী, সাং-ভাঙ্গুনিয়া, দিঘিরপাড়, থানা-টংগীবাড়ী, জেলা-মুন্সিগঞ্জ এবং মোঃ কামাল হাওলাদার (২৭), পিতা-মৃত সাইদুল হক, সাং-টেংরাখালী, থানা-পটুয়াখালী সদর, জেলা-পটুয়াখালীকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে চুরিকৃত একটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধারসহ তাদের নিকট থেকে দুইটি চুরিকৃত স্পেয়ার টায়ার, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও নগদ-২,৮৪০/- (দুই হাজার আটশত চল্লিশ) টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত জুয়েল (৩৬) ও কামাল (৪০) বেশ কয়েকদিন যাবত উক্ত গাড়িটি চুরির পরিকল্পনা করছিল। যার ধারাবাহিকতায় গত ০৩/০২/২০২৪ তারিখ রাত ৩:০০টায় আবু কাসেদ তার গাড়িটি ফ্যাক্টরির সামনে রেখে বাসায় চলে গেলে সুযোগ বুঝে পূর্ব পরিকল্পনামত জুয়েল রাত ৩:৩০টায় তার কাছে থাকা নকল চাবি দিয়ে গাড়িটি স্টার্ট দিয়ে দ্রুত প্লাস্টিকের বোতল বোঝাই করা গাড়িটি চুরি করে ঘটনাস্থল থেকে সুবিধাজনক স্থান, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এলাকায় নিয়ে যায়। তারপর গাড়ির মালিক আবু কাসেদকে ফোন করে উক্ত মালামালসহ গাড়িটি ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে আবু কাসেদের কাছ থেকে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে উক্ত গাড়ির ছয়টি টায়ার ও গাড়িতে থাকা ৩২,০০০ (বত্রিশ হাজার) পিস প্লাস্টিকের বোতল তার অপর সহযোগী আলম (৬০) ও কামাল (২৭) দ্বয়ের সহযোগিতায় বিক্রি করে দেয় এবং বিক্রির অর্থ তারা সবাই মিলে ভাগ করে নেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, চক্রটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে গাড়ি চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে সময় ও সুযোগ বুঝে নকল চাবি ব্যবহার করে মুহূর্তেই ট্রাক, প্রাইভেট কার, পিকআপ ইত্যাদি চুরি করে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত গাড়ির মালিকের নিকট হতে গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। তারা দাবিকৃত টাকা না পেলে উক্ত গাড়ির রং ও নম্বর প্লেট ইত্যাদি পরিবর্তন করে অনত্র বিক্রি করতো বলে জানা যায়। মূলত নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্যই তারা উক্ত গাড়ি চুরির পেশাটি বেছে নেয় বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত মোঃ মোশারফ হোসেন ওরফে জুয়েল (৩৬) উক্ত গাড়ি চোর চক্রটির মূলহোতা। সে পেশায় একজন বাস চালক। ড্রাইভিং পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকা হতে গাড়ি চুরি করতো। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর ওয়ারী, দারুস সালাম এবং নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় গাড়ি চুরিসহ তিনটি চুরির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত মোঃ কামাল হাওলাদার ওরফে কামরুল ওরফে রাসেল (৪০) পেশায় একজন লেগুনা চালক। তার পেশার আড়ালে সে জুয়েলের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। এক্ষেত্রে সে বিভিন্ন এলাকা হতে টার্গেট গাড়ি খুঁজে সেই গাড়ির অবস্থান সম্পর্কে জুয়েলকে তথ্য প্রদান করতো। এছাড়া বিভিন্ন গাড়ি স্টার্ট দিতে সক্ষম জুয়েলের কাছে থাকা নকল চাবি (মাস্টার কি) কামাল সংগ্রহ করে জুয়েলকে সরবরাহ করতো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পিরোজপুরের কাউখালী থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফাতরকৃত মোঃ মফিজ ঢালী ওরফে আলম (৬০)-এর একটি টায়ারের দোকান আছে। উক্ত ব্যবসার আড়ালে সে বিভিন্ন চোরাইকৃত গাড়ির টায়ারসহ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফাতরকৃত মোঃ কামাল হাওলাদার (২৭) পেশায় প্লাস্টিক ও ভাঙ্গারির মালামাল ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসার সাথে জড়িত এবং উক্ত ব্যবসার আড়ালে সে চোরাইকৃত বিভিন্ন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের করে আসছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অভিযান ২ :
হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর কহেল মুন্সী (৬৫) হত্যাকাণ্ডের পলাতক প্রধান আসামি হৃদয় মুন্সীকে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ১১ মার্চ রাত ৯:০০টায় র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-১০ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানাধীন চকরিয়া এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার মামলা নং-১৪/৮৬, তারিখ-১২/০৩/২০২৪ খ্রিঃ; ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০২/৩০৭/১১৪/৩৪ দণ্ডবিধি; বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে চাঞ্চল্যকর কহেল মুন্সী (৬৫) হত্যাকাণ্ডের পলাতক প্রধান আসামি হৃদয় মুন্সী (২৩), পিতা-ইসলাম মুন্সী, সাং-মধুরচর, থানা-সিংগাইর, জেলা-মানিকগঞ্জকে ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে উক্ত হত্যাকাণ্ডর পর ঢাকার নবাবগঞ্জে আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান ৩ :
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় হতে চারটি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামসহ ছয়জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কতিপয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বেশ কিছুদিন যাবত অবৈধভাবে পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের নিকট অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। উক্ত অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মার্চ রাত ১০:৫০টায় র‌্যাব-১০ এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থানার উত্তর বাড্ডা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা অস্ত্র তৈরিকারী ১। মোঃ মোখলেছুর রহমান সাগর (৪২), পিতা-আব্দুল হাসেম, সাং-নবীনগর মাধ্যপাড়া, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও তার অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী ২। মোঃ তানভির আহম্মেদ (৩২), পিতা-একেএম ফজলুল হক, সাং-জগন্নাথকাঠি, থানা-নেছারাবাদ, জেলা-পিরোজপুর’দের গ্রেফতার করে।

এরপর গ্রেফতারকৃত মোখলেছুর ও তানভিরের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১০ এর উক্ত দল ১২/০৩/২০২৪ তারিখ ভোররাত ২:৫০ টায় রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থানার হাজী আব্দুল হামিদ রোডে পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় আরো একটি অভিযান চালিয়ে উক্ত অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবসায়ী চক্রের অপর চারজন সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের নাম ৩। অনিক হাসান (২৮), পিতা-ইমাম মেহেদী, মাতা- চম্পা বেগম, ৪। মোঃ আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), পিতা-মোঃ আবুল হোসেন, ৫। রাজু হোসেন (৩৮), পিতা-মৃত মন্টু মিয়া ও ৬। মোঃ আমির হোসেন (৪০), পিতা-মোঃ চানঁমিয়া, সর্বসাং-দক্ষিণ কৌড়ি খাড়া, থানা-নেছারাবাদ, জেলা-পিরোজপুর বলে জানা যায়। এসময় তাদের নিকট থেকে চারটি পিস্তল, চার রাউন্ড কার্তুজ পিস সাতটি পিস্তলের কাঠের ফর্মা, দশটি ফায়ারিং ম্যাকানিজম, চারটি ট্রিগার, দুইটি পিস্তলের হ্যান্ডগ্রিপ, দুইটি ড্রিল বিট, পাঁচটি রেত, পঞ্চাশটি স্প্রিং, চল্লিশটি পিস্তলের নাট বল্টু, দুইটি কম্পাস, তিনটি গাজ, চারটি ক্লাম, দুইটি ড্রিল মেশিন, দুইটি বাইস, একটি বার্ণি স্কেল, একটি মুগুর, চারটি ক্লাম, কুড়িটি হেস্কো ফ্রেম, দুইটি গোল্ড এলএস ফ্লাম, একটি টুল বক্স, একটি গ্যারেন্ডার মেশিন, একটি কাঠের যোগান, একটি হাতুরি, চারটি শিরিস কাগজ জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ মোখলেছুর রহমান সাগর উক্ত অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা। সে পেশায় একজন ভাস্কর্য/ মূর্তি তৈরির কারিগর। উক্ত ভাস্কর্য/ মূর্তি তৈরির দক্ষতার সুবাদে মোখলেছুর রহমান সাগর ভারতের কলকাতায় এবং আসামের শিলিগুঁড়িতে প্রায় ১২ বছর যাবৎ ভাস্কর্য/ মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছিল। পরবর্তীতে সেখানে সুকুমার নামক একজন অস্ত্র তৈরির কারিগরের সাথে তার পরিচয় হয় এবং ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে মোখলেছুর রহমান সাগর অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করে। অতঃপর মোখলেছুর রহমান সাগর দেশে এসে অস্ত্র তৈরি করে স্বল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় উক্ত অবৈধ অস্ত্র তৈরি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরবরাহের পরিকল্পনা করে।

এরই অংশ হিসেবে প্রথমে সে তানভির, অনিক ও সৈকতদেরকে নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। গ্রেফতারকৃত তানভির পেশায় একজন লেজার সিএনসি ডিজাইনার। লেজার সিএনসি ডিজাইনার হওয়ায় সে যে কোন কিছু কম্পিউটারে ২ডি নকশা অনুযায়ী অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাটিং করার দক্ষতা অর্জন করে। উক্ত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তানভির সাগরের দেয়া নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে সাগরের অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সাগর ও তানভির অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো অনিক ও সৈকতের নিকট হস্তান্তর করতো।

পরবর্তীতে অনিক ও সৈকত উক্ত অস্ত্র বিভিন্ন ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতো। এক্ষেত্রে প্রতিটি পিস্তল/ অস্ত্র ৩, ০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা সবাই স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে এই ব্যবসার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে।

গ্রেফতারকৃত আমির ও রাজু তাদের অন্যতম অস্ত্রের ক্রেতা। আমির ও রাজু উক্ত অস্ত্র ক্রয় করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের নিকট অধিক মূল্যে বিক্রি করতো বলে জানা যায়। তারা উভয়ই অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে অনিক ও সৈকতের নিকট আসে এবং অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করাকালীন হাতেনাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান ৪ :
দীর্ঘ একযুগ ধরে পলাতক, কুখ্যাত মাদক সম্রাট, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ কামরুল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার সদর থেকে গ্রেফতার হয়েছে।

গত ১২ মার্চ দুপুর ৩:০০টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার পরানপুর বাজার এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-১৫/১০/২০০৯ইং, ধারা- ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৩(খ); মাদক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত দীর্ঘ একযুগ ধরে পলাতক আসামি মোঃ কামরুল ইসলাম (৩৯), পিতা- মোঃ কুদ্দুস আলী বিশ্বাস ওরফে দুদো, সাং-কাগমারী, থানা- বেনাপোল, জেলা- যশোরকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামি একজন আন্তঃজেলা মাদক কারবারি। সে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা যশোরের বিভিন্ন বর্ডার এলাকা থেকে চোরাই পথে মাদকদ্রব্য এনে যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় বিক্রয় করতো। সে বিভিন্ন সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মাদকদ্রব্যসহ হাতেনাতে ধরা পড়ে।

গ্রেফতারকৃত আসামি উল্লেখিত মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বলে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান ৫ :
মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে ১,৮০,৮৪০ পিস আতশবাজিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ১২ মার্চ রাত ৮:৩০টায় র‌্যাব- ১০ এর একটি দল মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার রশুনিয়া এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে ১,৮০,৮৪০ (এক লক্ষ আশি হাজার আটশত চল্লিশ) পিস বিভিন্ন প্রকার আতশবাজিসহ দুইজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম- ১। আছানুর মৃধা (৩১), পিতা- মৃত রাহেল উদ্দিন মৃধা,সাং- চরডুবাইল, ইউপি-ডেউখালী, থানা- সদরপুর, জেলা-ফরিদপুর, ২। মোঃ আজিম (৩৫), পিতা- ইসমাইল হাওলাদার, সাং- ডাইসার, ইউপি-শ্রীনগর, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সীগঞ্জ বলে জানা যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বেশ কিছুদিন যাবৎ মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আতশবাজি সরবরাহ করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় বিস্ফোরক আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

অভিযান ৬ :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভুয়া র‌্যাব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

গত ১৩ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ র‌্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুর এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া র‌্যাব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে একজন প্রতারককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম (৪২), পিতা-মৃত আব্দুল মান্নান শেখ, সাং-দক্ষিণবাড়ী, পদমদী, থানা-বালিয়াকান্দি, জেলা-রাজবাড়ী বলে জানা যায়। এসময় তার নিকট থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি র‌্যাব লেখা র‌্যাবের এপ্রোন/ জ্যাকেট, এক জোড়া হাতকড়া, দুইটি র‌্যাবের লোগোযুক্ত চাবির রিং ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামি বেশ কিছুদিন যাবৎ ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিম মাহাবুব ঘরামী (৩৮) বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন।

 

অভিযান ৭ :
মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে ৫৩,২৮৯ পিস আতশবাজিসহ একজন গ্রেফতার হয়েছে।

গত ১৩ মার্চ ২০২৪ আনুমানিক ১০:০০টায় র‌্যাব- ১০ এর একটি দল মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া বাজার এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে ৫৩,২৮৯ (তেপ্পান্ন হাজার দুইশত ঊননব্বই) পিস বিভিন্ন প্রকার আতশবাজিসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ আলমগীর হোসেন (৪৫), পিতা- আঃ আজিজ মৃধা, সাং-বায়হাল, ইউপি-যশলং, থানা-টংগিবাড়ী, জেলা- মুন্সীগঞ্জ বলে জানা যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি বেশ কিছুদিন যাবৎ মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আতশবাজি সরবরাহ করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযান ৮ :
অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা হতে তিনজন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

গত ১৪ মার্চ ২০২৪ দুপুরে র‌্যাব-১০ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১০। উক্ত অভিযানে আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন হতে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করাকালীন তিনজন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম- ১। মোঃ মনির হোসেন (৪২), ২। মোঃ সানি বেপারী (২৬), ও ৩। মোঃ পারভেজ হোসেন (২৭) বলে জানা যায়। এসময় তাদের নিকট থেকে আদায়কৃত চাঁদা নগদ- ৫,১৬০/- (পাঁচ হাজার একশত ষাট) টাকা এবং দুইটি কাঠের লাঠি জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজধানীর শ্যামপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপারদের সাথে অশোভন আচরণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

বসুন্ধরা পারলে কেন সিটি করপোরেশন পারবে না

ভোররাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। সারা রাত আকাশে মেঘ ছিল। আষাঢ় শেষ হয়ে আসছে। বর্ষাকাল। এখন এরকমই হওয়ার কথা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হবে হঠাৎ করেই। ঝুপ ঝুপ করে নামবে বৃষ্টি। কখনও থেকে থেকে, কখনও অবিরাম। এ বছরের বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি হতে পারে, আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীর সবচাইতে বড় সমস্যা। যেদিন আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, যে আবহাওয়ায় বড় হয়েছি, সেই আবহাওয়া এখন আর নেই। শীতের দেশগুলোতে তীব্র গরম পড়ছে। শীতকালে শীত পড়ছে আগের তুলনায় বেশি। বরফের পাহাড় গলে যাচ্ছে আন্টার্টিকায়। দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার বনভূমি। প্রকৃতি উল্টো-পাল্টা হয়ে গেছে। বদলে গেছে বহু কিছু।

এ বছরের গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। জীবজগৎ বিপর্যস্ত। আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, বর্ষায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ক’দিন আগে তাই হলো। ভোররাত থেকে বৃষ্টি। সকাল দশটা এগারোটা পর্যস্ত থামার নাম নেই। আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছায়াময় পরিবেশ। আমি একটু বেলা করে উঠেছি। মধ্যমাত্রার বৃষ্টি তখনও ঝরছে। দুপুর নাগাদ টেলিভিশন আর অনলাইনগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঢাকা শহরের বহু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। রিকশার পাদানিতে উঠে গেছে পানি। বাসের চাকা ডুবে গেছে। প্রাইভেটকার ডুবে গেছে, জেগে আছে শুধু গাড়ির ছাদটুকু। নিউমার্কেট আর কাঁটাবন এলাকার দোকানপাটের ভিতর কোমর পানি। ছোট আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়ে গেছেন ব্যাপক সংকটে। দোকানের মালামাল রক্ষা করতে পারেননি। সব ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ, বাড়ি ফেরার মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেকেই পড়েছে চরম দুর্ভোগে। গাড়ি চলছে না। হেঁটে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তাদের কোমরের ওপর পর্যন্ত পানি। পুরান ঢাকার অলিগলি রাজপথ ডুবে গেছে। ঘরে ঢুকে গেছে পানি। মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থা কেমন করে সামাল দেবে? এক বেলার বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই ডুবছে রাস্তাঘাট। বিপাকে পড়ছে মানুষ। আবহাওয়াবিদদের সাবধানতা বা ভবিষ্যদ্বাণী সিটি করপোরেশন দুটো সেভাবে মনে রাখেনি। মনে রেখে আগাম ব্যবস্থা নিলে শহরবাসী এরকম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না। এই বিষয়ে দুই মেয়রের তীক্ষ্ণ নজর থাকা জরুরি ছিল। ঢাকার খালগুলো প্রায় সবই বুজে গেছে। দখল হয়ে গেছে। সবই আছে খালগুলোতে, শুধু পানিটাই নেই। পানির প্রবাহ বলতে কিছু নেই। ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে গেছে একেকটা খাল। মেয়র মহোদয়দের দেখি, প্রায়ই খাল উদ্ধারের অভিযান করছেন। দু-একটা খাল দখল মুক্তও করছেন। তারপর আর খবর নেই। আগের মতো দখল হয়ে যাচ্ছে। আরেক মহাশত্রু হয়েছে পলিথিন। এই জিনিসের কোনও বিনাশ নেই। শুধুমাত্র পলিথিনই ডুবিয়ে দিচ্ছে অনেক অর্জন। এই বিষয়টি নিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। পলিথিনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে দেশ। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও মিডিয়া মিলে জনসচেতনা গড়ে তোলা জরুরি। মানুষ সচেতন হলে সমাজ পরিশিলিত হয়। গত তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এখন বসুন্ধরা ঢাকার সবচাইতে অভিজাত এলাকা। সবচাইতে আকর্ষণীয় এলাকা। বসুন্ধরায় কারও একটি ফ্ল্যাট বা কারও এক টুকরো জমি থাকলে তিনি খুব গৌরববোধ করেন। বসুন্ধরার মতো সুবিন্যস্ত আবাসিক এলাকা ঢাকায় আর নেই। এলাকাটির পরিকল্পনা করা হয়েছে সম্পূর্ণতই ইউরোপ-আমেরিকার ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর লাগোয়া অতি আধুনিক আবাসিক শহরগুলোর মতো করে। সুপরিকল্পিত ও সুব্যবস্থাপূর্ণ। বড় বড় রাস্তা। রাস্তার ধার আর আইল্যান্ডগুলো সবুজ গাছপালায় ভর্তি। রাজউকের বিল্ডিংকোড মেনে নির্মিত প্রতিটি বাড়ি। সঙ্গে আছে বসুন্ধরার নিজস্ব কঠোর তদারকি। নিয়মের বাইরে একটি ইটও বসানো যাবে না। একটি গাছের পাতাও ছেঁড়া যাবে না। অন্যদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরুষমানুষরা তো বটেই, নারী ও শিশুরা চাইলেও রাত দুপুরে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বেরোতে পারে। ডিস্টার্ব করা তো দূরের কথা, চোখ তুলেও তাকাবার সাহস পাবে না কেউ। নিরাপত্তায় নিয়োজিত গাড়িভর্তি কর্মী চব্বিশঘণ্টা টহল দিচ্ছে। ঢাকার ভিতরেই বসুন্ধরা সম্পূর্ণ এক আলাদা জগৎ। স্বপ্নের বাসভূমি। এটা সম্ভব হয়েছে সুপরিকল্পনা ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন আর প্রয়োগের ফলে। গত কয়েক বছর আগে বর্ষার বৃষ্টিতে বসুন্ধরার কোথাও কোথাও পানি জমে যেত। এই নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন কর্তৃপক্ষ। সুদূর প্রসারী আধুনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রাতারাতি সামাল দিলেন সেই সমস্যা। গড়ে তুললেন অত্যাধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যত বৃষ্টিই হোক, বসুন্ধরায় এখন আর পানি জমে না। জোরালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি এক মিনিটও দাঁড়াতে পারে না। সঙ্গে আছে এলাকার ড্রেনগুলোর সঠিক তদারকি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বহুকর্মী নিয়োজিত এই কাজে। কী নেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়? হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, খেলার মাঠ, শপিং মল, সুন্দর সুন্দর মসজিদ, গোরস্থান, অতি আধুনিক সব রেস্টুরেন্ট। এক কথায় সব মিলিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বর্তমান বিশ্বের অতি আধুনিক এক মনোরম শহর। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা নিয়ে কথাগুলো বলার কারণ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বসুন্ধরায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনুকরণ করে তাঁরা খুব সহজেই হঠাৎ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরকে অনেকখানি মুক্তি দিতে পারেন। মানুষকে দুর্ভোগ মুক্ত করতে পারেন, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারেন ক্ষতির হাত থেকে। ছাত্র-ছাত্রী আর পথচলা মানুষদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পারেন। বৃষ্টির তোড়ে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া গৃহবাসীদের সুরক্ষা দিতে পারেন। এই শহরের মানুষকে স্বস্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে পারেন। এসব তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয় তাঁরা ভাববেন। তাঁদের চোখের সামনেই তো উদাহরণ হিসেবে আছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।

পরবর্তী খবর

নওগাঁর ধামইরহাটে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

নওগাঁর ধামইরহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে যমজ দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের পশ্চিম চকভবানী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালাম।

নিতহ দুই শিশু– লক্ষণ (৩) ও রাম (৩)। তারা উভয়ে একই গ্রামের সুজিত ওরাওঁ-এর যমজ সন্তান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালাম বলেন, সকালের খাবার খেয়ে ওই দুই ভাই বাড়ির পাশে খেলতে থাকে। খেলার একপর্যায়ে সবার অগোচরে দুই ভাই বাড়ির সামনে পুকুরে ডুবে যায়। পরে তাদের খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে দুজনের লাশ পুকুরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা।

যমজ দুই ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ধামইরহাট থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, দুই শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খেলতে গিয়েই তারা পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ করা হয়নি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত