দেশ

দেশ

সপ্তাহব্যাপী র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ১৬

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী র‌্যাবের চলমান ভিন্ন ভিন্ন অভিযানে চাঁদাবাজ, খুনের আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া), এম.জে সোহেল এসব অভিযান ও অভিযানে গ্রেফতাকৃতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

অভিযান-১ :
অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ১৭ এপ্রিল ২০২৪ রাত ৮:৩০টায় র‌্যাব-১০ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন কোনাপাড়া এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরী ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন হতে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করাকালীন ৪ জন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম- ১। রিপন (৩৫), পিতা-মৃত সোহরাব, সাং- বালিগাও, থানা-লৌহজং, জেলা-মুন্সীগঞ্জ ২। বাবু (৩৫), পিতা-মৃত আব্দুল সাত্তার, সাং-পুটুলিয়া, থানা-সাভার , জেলা-ঢাকা ও ৩। জনি (৩৭), পিতা-মুসলিম মাতবর, সাং-ধার্র্মিক পাড়া, থানা-ডেমরা, ঢাকা, ৪। মোঃ সোহাগ (৩৫), পিতা-আনসার মিয়া, সাং-ধার্র্মিক পাড়া, থানা-ডেমরা, ঢাকা বলে জানা যায়। এসময় তাদের নিকট থেকে আদায়কৃত চাঁদা নগদ- ৬,০০০/- (ছয় হাজার) টাকা এবং ২টি কাঠের লাঠি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় আন্তঃজেলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরী ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপারদের সাথে অশোভন আচণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান-২ :
ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে ‘শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে দুলাভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা’ শীর্ষক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি আশারুল শেখ এবং তার প্রধান সহযোগী ইলিয়াস শেখ ও খায়রুল শেখকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানাধীন হাটঘাটা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নিজামউদ্দিন একই থানাধীন পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া এলাকায় মৃত জাহিদুল শেখের মেয়ে জামেলা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর নিজাম তার শ্যালিকা জলি খাতুনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি জলি খাতুনের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। নিজাম গত ২১/০৩/২০২৪ খ্রি. তারিখ সকালে তার শ্যালিকা জলিকে সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে যান। সেখান থেকে জলিকে নিয়ে নিজাম তার বাড়িতে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২১/০৩/২০২৪ খ্রি. তারিখ আনুমানিক রাত ২৩:৩০টায় জলির পরিবারের লোকজনসহ ৯-১০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থল মধুখালী থানাধীন হাটঘাটা এলাকার নিজামের বসত ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে নিজামের শ্যালক শরিফুলসহ বেশ কয়েকজন মিলে নিজামকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে জলিকে নিয়ে যায়। অতঃপর নিজামের আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের লোকজন নিজামকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঐদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথিমধ্যে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর নিজাম মৃত্যুবরণ করেন।

উক্ত ঘটনায় মৃত নিজামের ভাই মোঃ আজিম উদ্দিন শেখ (২৫), পিতা-মৃত মানিক শেখ, সাং-হাটঘাটা, থানা-মধুখালী, জেলা-ফরিদপুর বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানায় চাঞ্চল্যকর নিজামউদ্দিন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মোঃ শরিফুল শেখ ও মোসাঃ তথি বেগমসহ ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৫০৬/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৪, তারিখ-২২/০৩/২০২৪)। মামলা দায়েরের বিষয়টি জানতে পেরে উক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল আসামি আত্মগোপনে চলে যায়।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পাওয়ায় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ এপ্রিল ২০২৪, র‌্যাব-১০ এর উক্ত দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে উক্ত হত্যা মামলার যথাক্রমে ৫ নং ও ৬ নং পলাতক আসামি ১। মোঃ শরিফুল শেখ (২০), পিতা-মোঃ হারুন অর রশিদ ও ২। মোসাঃ তথি বেগম (৬২), স্বামী-মৃত হাশেম শেখ, সর্ব সাং-দীঘলিয়া, থানা-মধুখালী, জেলা-ফরিদপুর-দ্বয়কে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি ও তাদের দেয়া তথ্যমতে গত ২০ এপ্রিল ২০২৪ ভোর ৫:০০টায় র‌্যাব-১০ এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকায় অপর একটি অভিযান চালিয়ে মামলার ১, ২ ও ৪ নং আসামি ১। মোঃ আশারুল শেখ (২৮), ২। মোঃ ইলিয়াস শেখ (২৪) উভয় পিতা-মৃত জাহিদুল শেখ ও ৩। মোঃ খায়রুল শেখ (২২), পিতা-মোঃ হারুন অর রশিদ, সর্ব সাং-দীঘলিয়া, থানা-মধুখালী, জেলা-ফরিদপুরদেরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেছে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান-৩ :
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর এলাকায় শালিসকে কেন্দ্র করে সুরুজ হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি কবির হোসেন’কে যশোর জেলার অভয়নগর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

গত ২১ এপ্রিল ভোর ৪:১৫ টায় র‌্যাব-১০ এর একটি দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এবং র‌্যাব-০৬ এর সহযোগিতায় যশোর জেলার অভয়নগর এলাকায় একটি যৌথ অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার মামলা নং-২৭, তারিখ-১৭/০৪/২০২৪ ধারা-৩০২ দণ্ডবিধি; শালিসকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে সুরুজ প্রধান হত্যাকাণ্ডের পলাতক একমাত্র প্রধান আসামি মোঃ কবির হোসেন (৩৩), পিতা-মৃত রহিম উদ্দিন পাটোয়ারী, সাং-উত্তর মাইজকান্দি, থানা-মতলব উত্তর, জেলা-চাঁদপুরকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠনের পর নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

অভিযান-৪ :
‘ফরিদপুরে বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ; প্রাণ গেলো ১৫ জনের’ শিরোনামে ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনার ক্লুলেস মামলার অজ্ঞাতনামা ঘাতক বাস চালকের পরিচয় উদঘাটন করতঃ ঘাতক চালককে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গত ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সকালে একটি পিকআপযোগে নারী ও শিশুসহ ১৬ জন আলফাডাংগা থেকে ফরিদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। অতঃপর আনুমানিক সকাল ৭:৪০টায় উক্ত পিকআপটি যাত্রী নিয়ে ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন কানাইপুর দিকনগর এলাকায় ফরিদপুর-মাগুড়াসড়কে পৌঁছালে মাগুড়াগামী একটি উত্তরা ইউনিক পরিবহনের বাসের অজ্ঞাতনামা চালক দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উক্ত যাত্রীবাহী পিকআপটিকে চাপা দেয়। এতে পিকআপে থাকা ১১ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর আশপাশের লোকজন অন্যান্য যাত্রীদের গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে আরো ৪ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় উক্ত হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া পিকআপে থাকা অপর যাত্রীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাড়ি দুটি জব্দ করে তাদের হেফাজতে নেয় এবং মৃত সকল লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মানবিক কারণে লাশের ময়না তদন্ত ব্যতীত লাশের আত্মীয় স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেন।এই ঘটনার পর পর অজ্ঞাতনামা বাস চালক আত্মগোপনে চলে যায়।

উক্ত ঘটনায় নিহত ইকবালের বড় ভাই ইমামুল শেখ (২৮) বাদী হয়ে উত্তরা ইউনিক পরিবহনের অজ্ঞাতনামা চালকের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানায় সড়ক পরিবহন আইনে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে দূর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহানি ঘটানোর অপরাধে একটি মামলা দায়ের করেন।

ইতোমধ্যে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা সংঘটনকারী বাস চালকের পরিচয় সনাক্ত এবং উক্ত চালককে গ্রেফতার করতে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব-১০, ফরিদপুর ক্যাম্পের উক্ত দল ঘাতক উত্তরা ইউনিক পরিবহনের চালকের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। উক্ত ড্রাইভারের নাম- মোঃ খোকন মিয়া (৫৪), পিতা-মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সাং-বাজে বামনদাহ, থানা-কোটচাঁদপুর, জেলা-ঝিনাইদহ। র‌্যাব-১০ সিপিসি-৩ ফরিদপুরের উক্ত দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২১ এপ্রিল দুপুর ১২:৩০টায় ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে পলাতক ঘাতক চালককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত উত্তরা ইউনিক পরিবহনের ঘাতক চালক বলে স্বীকার করেছে।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

অভিযান-৫:
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি, স্বামী শ্রী রুপেন দাশ গ্রেফতার।

গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭:৩৫ টায় র‌্যাব-১০ এর একটি দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এবং র‌্যাব-১৩ এর সহযোগিতায় ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন নতুন সোনাকান্দা এলাকায় একটি যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযানে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার মামলা নং- ০৭ তারিখ- ১৫/০৪/২০২৪ খ্রি.; ধারা- ৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬/ সংযোজন- ৩০২ পেনাল কোড-১৮৬০; পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক একমাত্র প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ (৩৪), পিতা-খোঁকা দাশ, সাং-বোনারপাড়া, থানা-সাঘাটা, জেলা-গাইবান্ধাকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে হত্যাকাণ্ডটি সংঘঠনের পর নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

বসুন্ধরা পারলে কেন সিটি করপোরেশন পারবে না

ভোররাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। সারা রাত আকাশে মেঘ ছিল। আষাঢ় শেষ হয়ে আসছে। বর্ষাকাল। এখন এরকমই হওয়ার কথা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হবে হঠাৎ করেই। ঝুপ ঝুপ করে নামবে বৃষ্টি। কখনও থেকে থেকে, কখনও অবিরাম। এ বছরের বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি হতে পারে, আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীর সবচাইতে বড় সমস্যা। যেদিন আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, যে আবহাওয়ায় বড় হয়েছি, সেই আবহাওয়া এখন আর নেই। শীতের দেশগুলোতে তীব্র গরম পড়ছে। শীতকালে শীত পড়ছে আগের তুলনায় বেশি। বরফের পাহাড় গলে যাচ্ছে আন্টার্টিকায়। দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার বনভূমি। প্রকৃতি উল্টো-পাল্টা হয়ে গেছে। বদলে গেছে বহু কিছু।

এ বছরের গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। জীবজগৎ বিপর্যস্ত। আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, বর্ষায় প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ক’দিন আগে তাই হলো। ভোররাত থেকে বৃষ্টি। সকাল দশটা এগারোটা পর্যস্ত থামার নাম নেই। আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছায়াময় পরিবেশ। আমি একটু বেলা করে উঠেছি। মধ্যমাত্রার বৃষ্টি তখনও ঝরছে। দুপুর নাগাদ টেলিভিশন আর অনলাইনগুলো দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঢাকা শহরের বহু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। রিকশার পাদানিতে উঠে গেছে পানি। বাসের চাকা ডুবে গেছে। প্রাইভেটকার ডুবে গেছে, জেগে আছে শুধু গাড়ির ছাদটুকু। নিউমার্কেট আর কাঁটাবন এলাকার দোকানপাটের ভিতর কোমর পানি। ছোট আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়ে গেছেন ব্যাপক সংকটে। দোকানের মালামাল রক্ষা করতে পারেননি। সব ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ, বাড়ি ফেরার মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেকেই পড়েছে চরম দুর্ভোগে। গাড়ি চলছে না। হেঁটে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তাদের কোমরের ওপর পর্যন্ত পানি। পুরান ঢাকার অলিগলি রাজপথ ডুবে গেছে। ঘরে ঢুকে গেছে পানি। মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থা কেমন করে সামাল দেবে? এক বেলার বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই ডুবছে রাস্তাঘাট। বিপাকে পড়ছে মানুষ। আবহাওয়াবিদদের সাবধানতা বা ভবিষ্যদ্বাণী সিটি করপোরেশন দুটো সেভাবে মনে রাখেনি। মনে রেখে আগাম ব্যবস্থা নিলে শহরবাসী এরকম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না। এই বিষয়ে দুই মেয়রের তীক্ষ্ণ নজর থাকা জরুরি ছিল। ঢাকার খালগুলো প্রায় সবই বুজে গেছে। দখল হয়ে গেছে। সবই আছে খালগুলোতে, শুধু পানিটাই নেই। পানির প্রবাহ বলতে কিছু নেই। ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে গেছে একেকটা খাল। মেয়র মহোদয়দের দেখি, প্রায়ই খাল উদ্ধারের অভিযান করছেন। দু-একটা খাল দখল মুক্তও করছেন। তারপর আর খবর নেই। আগের মতো দখল হয়ে যাচ্ছে। আরেক মহাশত্রু হয়েছে পলিথিন। এই জিনিসের কোনও বিনাশ নেই। শুধুমাত্র পলিথিনই ডুবিয়ে দিচ্ছে অনেক অর্জন। এই বিষয়টি নিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি। পলিথিনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে দেশ। পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও মিডিয়া মিলে জনসচেতনা গড়ে তোলা জরুরি। মানুষ সচেতন হলে সমাজ পরিশিলিত হয়। গত তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এখন বসুন্ধরা ঢাকার সবচাইতে অভিজাত এলাকা। সবচাইতে আকর্ষণীয় এলাকা। বসুন্ধরায় কারও একটি ফ্ল্যাট বা কারও এক টুকরো জমি থাকলে তিনি খুব গৌরববোধ করেন। বসুন্ধরার মতো সুবিন্যস্ত আবাসিক এলাকা ঢাকায় আর নেই। এলাকাটির পরিকল্পনা করা হয়েছে সম্পূর্ণতই ইউরোপ-আমেরিকার ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর লাগোয়া অতি আধুনিক আবাসিক শহরগুলোর মতো করে। সুপরিকল্পিত ও সুব্যবস্থাপূর্ণ। বড় বড় রাস্তা। রাস্তার ধার আর আইল্যান্ডগুলো সবুজ গাছপালায় ভর্তি। রাজউকের বিল্ডিংকোড মেনে নির্মিত প্রতিটি বাড়ি। সঙ্গে আছে বসুন্ধরার নিজস্ব কঠোর তদারকি। নিয়মের বাইরে একটি ইটও বসানো যাবে না। একটি গাছের পাতাও ছেঁড়া যাবে না। অন্যদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরুষমানুষরা তো বটেই, নারী ও শিশুরা চাইলেও রাত দুপুরে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বেরোতে পারে। ডিস্টার্ব করা তো দূরের কথা, চোখ তুলেও তাকাবার সাহস পাবে না কেউ। নিরাপত্তায় নিয়োজিত গাড়িভর্তি কর্মী চব্বিশঘণ্টা টহল দিচ্ছে। ঢাকার ভিতরেই বসুন্ধরা সম্পূর্ণ এক আলাদা জগৎ। স্বপ্নের বাসভূমি। এটা সম্ভব হয়েছে সুপরিকল্পনা ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন আর প্রয়োগের ফলে। গত কয়েক বছর আগে বর্ষার বৃষ্টিতে বসুন্ধরার কোথাও কোথাও পানি জমে যেত। এই নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন কর্তৃপক্ষ। সুদূর প্রসারী আধুনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রাতারাতি সামাল দিলেন সেই সমস্যা। গড়ে তুললেন অত্যাধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যত বৃষ্টিই হোক, বসুন্ধরায় এখন আর পানি জমে না। জোরালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি এক মিনিটও দাঁড়াতে পারে না। সঙ্গে আছে এলাকার ড্রেনগুলোর সঠিক তদারকি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বহুকর্মী নিয়োজিত এই কাজে। কী নেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়? হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, খেলার মাঠ, শপিং মল, সুন্দর সুন্দর মসজিদ, গোরস্থান, অতি আধুনিক সব রেস্টুরেন্ট। এক কথায় সব মিলিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বর্তমান বিশ্বের অতি আধুনিক এক মনোরম শহর। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা নিয়ে কথাগুলো বলার কারণ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বসুন্ধরায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনুকরণ করে তাঁরা খুব সহজেই হঠাৎ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরকে অনেকখানি মুক্তি দিতে পারেন। মানুষকে দুর্ভোগ মুক্ত করতে পারেন, ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারেন ক্ষতির হাত থেকে। ছাত্র-ছাত্রী আর পথচলা মানুষদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পারেন। বৃষ্টির তোড়ে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া গৃহবাসীদের সুরক্ষা দিতে পারেন। এই শহরের মানুষকে স্বস্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে পারেন। এসব তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয় তাঁরা ভাববেন। তাঁদের চোখের সামনেই তো উদাহরণ হিসেবে আছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।

পরবর্তী খবর

নওগাঁর ধামইরহাটে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

নওগাঁর ধামইরহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে যমজ দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের পশ্চিম চকভবানী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালাম।

নিতহ দুই শিশু– লক্ষণ (৩) ও রাম (৩)। তারা উভয়ে একই গ্রামের সুজিত ওরাওঁ-এর যমজ সন্তান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালাম বলেন, সকালের খাবার খেয়ে ওই দুই ভাই বাড়ির পাশে খেলতে থাকে। খেলার একপর্যায়ে সবার অগোচরে দুই ভাই বাড়ির সামনে পুকুরে ডুবে যায়। পরে তাদের খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে দুজনের লাশ পুকুরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা।

যমজ দুই ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ধামইরহাট থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, দুই শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খেলতে গিয়েই তারা পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ করা হয়নি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত