শিল্প-সাহিত্য

শিল্প-সাহিত্য

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হককে প্রগতিশীল সাহিত্য সংঘের সংবর্ধনা

প্রগতিশীল সাহিত্য সংঘর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, খ্যাতিমান লেখক, গবেষক, সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হককে কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা চোখ এবং উভয় বাংলা সংগঠন থেকে ‘বিজয় স্মারক ১৪৩০’ পুরস্কার পাওয়ায় সংবর্ধনা দিয়েছে প্রগতিশীল সাহিত্য সংঘ।  একইসাথে তাঁর ৭১তম জন্মোৎসবও উদযাপন করা হয়।

গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কবিতা ক্যাফেতে এ উপলক্ষে এক আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান কবি ও শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কবি হাসনাইন সাজ্জাদী, বাংলা একাডেমির পরিচালক, আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাত হোসেন নিপু। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হকের তিন অনুজ— জামালউদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত উপ পরিচালক, বিআরটিএ; কামাল আহমেদ, উপ মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বেতার এবং নূরুল হক, ট্রেনিং স্পেশালিস্ট, পাবলিক কম্প্লাইনস, ব্র্যাক।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংঘের সিনিয়র সহসভাপতি তৈয়েব রহমান সংবর্ধনাপত্র পাঠ করেন এবং লেখক জিয়াউল হকের হাতে সংবর্ধনাপত্রটি তুলে দেন। এরপর সংঘের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শোয়েব লেখক, গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হকের জীবন ও কর্মের উপর লিখিত নিবন্ধ পাঠ করেন। এরপর সম্মিলিতভাবে জিয়াউল হকের হাতে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

সংঘের অনুষ্ঠান সম্পাদক তাসরিবা খান এবং অর্থ সম্পাদক রোকসানা মহুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কবি, লেখক ও শুভাকাঙ্খীগণ কবিতা, গান ও শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে সময়টিকে আনন্দময় করে তোলেন। জিয়াউল হকের জন্মোৎসব উদযাপন করা হয় কেক কেটে। পরে সংঘের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হকের হাতে।

অনুষ্ঠানে কবি জিয়াউল হকের লেখা কবিতা পাঠ করেন সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক কবি জান্নাত তায়েবা, খাজা হুজ্জত উল্লাহ ফয়সাল, কবি রোকসানা মহুয়া প্রমুখ। জিয়াউল হককে নিবেদন করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন সংঘের দপ্তর সম্পাদক কবি ইশরাত বাবলু, কবি ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংঘের যুগ্মসম্পাদক পুতুল রহমান, রাহিমা আক্তার নীপা ও শ্রাবণ। আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি সংঘের সদস্যদের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি সেলিনা শেলী, লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বিএম এরশাদ প্রমুখ।

সম্প্রতি কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা চোখ এবং উভয় বাংলা নামক সংগঠন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং বর্তমানে লেখালেখি দিয়ে জাতি গঠনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত ‘বিজয় স্মারক ১৪৩০’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। উল্লেখ্য, গত দুই যুগ ধরে কোলকাতার সাহিত্য পত্রিকা ‘চোখ’ বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্টজনদের বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত স্মারক পুরস্কার দিয়ে আসছে। চোখ পত্রিকার সম্মানা পেয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শামসুর রাহমানসহ আরও অনেক গুণী কবি-সাহিত্যিক অভিনেতা-অভিনেত্রী।

শেয়ার
বিষয়:
পরবর্তী খবর

একুশে বইমেলা শুরু ১৫ ডিসেম্বর, কে কী বলছেন?

অমর একুশে গ্রন্থমেলা— বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন, সৃজনশীল প্রকাশনার সবচেয়ে বড় আসর। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া এই মেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়, বরং বাঙালির ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির স্মারক এক উৎসব। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটছে। নির্বাচনের কারণে নিরাপত্তাজনিত জটিলতা এড়াতে বইমেলা এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এবারের আয়োজন।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলা একাডেমির এক সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। বাংলা একাডেমির সূত্র রোজকার খবরকে নিশ্চিত করেছে, প্রস্তাব সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাবে বৃহস্পতিবার, তারপরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

এর আগে, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং আরও দুই সংগঠন লিখিতভাবে দাবি জানায়, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ থাকবে। ফলে বইমেলার মতো বিশাল জনসমাগমের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হবে। প্রকাশকদের মতে, ফেব্রুয়ারির পর রাজনৈতিক আবহ, আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, এমনকি পাঠকের মনোযোগেরও ঘাটতি তৈরি হবে।

সমিতির পরিচালক আবুল বাশার ফিরোজ শেখ বলেন, ‘বইমেলা কেবল ব্যবসা নয়, এটি পাঠক ও লেখকের মেলবন্ধনের জায়গা। ফেব্রুয়ারির পরে সেই আবহ থাকবে না। তাই ডিসেম্বর বা জানুয়ারি আমাদের কাছে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।’

১৯৮৩ সালে একবার আন্দোলনের কারণে বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এরপর শুধু করোনা মহামারির সময়ই মেলার তারিখ বদলে মার্চে গিয়েছিল। প্রকাশকদের দাবি, তখন ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি মেলার মান ও ঐতিহ্যও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সেই ধাক্কা থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্প।

তাদের মতে, ২০২১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বইমেলা তার বাণিজ্যিক সাফল্য ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হারাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক সৃজনশীল প্রকাশক কার্যত পঙ্গুত্বের দিকে চলে যাবেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির আগে আয়োজন না করলে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ও মানুষের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আবার এপ্রিলের দিকে গেলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী ডিসেম্বর-জানুয়ারিই যৌক্তিক সময়।’

তিনি জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও ইতিমধ্যেই প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।

পাঠকদের কাছে ফেব্রুয়ারির বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার উৎসব নয়, বরং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক আবহের মিলনমেলা। তাই মেলার সময় পরিবর্তন তাদের অনুভূতির সঙ্গেও সম্পর্কিত।

 

শেয়ার
পরবর্তী খবর

কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া জানান, শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেল থেকে তাকে অজ্ঞান অবস্থান উদ্ধার করে পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইইউ) নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কবির ভাতিজি রিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পিজি হাসপাতাল থেকে কবি হেলাল হাফিজের মরদেহ গোসলের জন্য মোহাম্মদপুর তাকওয়া মসজিদে নেওয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে পুনরায় তার মরদেহ পিজি হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

কবি হেলাল হাফিজের বড় ভাই দুলাল হাফিজ জানান, কবির প্রথম জানাজা শনিবার সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমিতে এবং বাদ যোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নেত্রকোনায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

হেলাল হাফিজকে কোথায় সমাহিত করা হবে এ বিষয়ে মৃত্যুর আগে কবি কিছু বলে গেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, মৃত্যুর পর কোথায় রাখা হবে তা কখনো তিনি বলতেন না। তার আসলে আর কখনো ঘরে ফেরাই হলো না।

সুপার হোম হোস্টেলের ম্যানেজার জায়েদ আল সাবিত বলেন, আমার সঙ্গে আজ সর্বশেষ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কথা হয়। বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। রক্তাক্ত অবস্থায় আনুমানিক ২টা ১০মিনিটের দিকে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে তাকে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্ম গ্রহণ করেন বরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন হেলাল হাফিজ। এ কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উল্লিখিত তারিখ থেকে জানা যায়, কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে।

প্রথম কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে হেলাল হাফিজ পাঠক মনে যে নাড়া দিয়েছেন, তা এখনও ইতিহাস হয়ে আছে। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থটির এখন পর্যন্ত ৩৩ বা তারচেয়ে বেশি সংস্করণ হয়েছে। যা এর আগে বাংলাদেশের কোনো কবিতার বইয়ের বেলায় ঘটেনি। এই কবিতার বইয়ের পাঠকের সংখ্যা যে অগণিত, তা বলাই বাহুল্য।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থই হেলাল হাফিজকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো বই বের করেননি তিনি। ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।
কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

এত কম কবিতা লিখে এত খ্যাতি পাওয়ার নজির বাংলাদেশের সাহিত্যে নেই।

১৯৬৫ সালে হেলাল হাফিজ নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতা শুরু করেন।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুণ কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া এক শোক বার্তায় সাংবাদিক ও কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ শোক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রাত গভীর সমবেদনা জানান।

সাংবাদিক ও কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত