ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে। শ্যামনগরের চুনা নদীর অতি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলেপাড়ার ১৩টি বসতবাড়ি।
রবিবার(২৬ মে) দুপুরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে উপজেলার কলবাড়ি এলাকার জেলেপাড়ায় এঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম জানান, উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায় সম্বল হারিয়ে কলবাড়ি চুনা নদীর চরে পরিবারগুলো বহু বছর ধরে বসবাস করতো। আজ রবিবার দুপুরে স্বাভাবিক চেয়ে জোয়ারের পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে তাদের বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় জানমালের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ এলাকার সকল বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে এখনও কাজ চলছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ আজ রাতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাসহ উপকূলবর্তী অন্যান্য জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫শ’ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
এ ছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড।
ঘূর্ণিঝড় রেমালকে ঘিরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও আতঙ্কে আছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে ওই এলাকার মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
তাদের আশঙ্কা, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে।’ এজন্য, জোয়ারের পানির তোড়ে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৩০টিরও অধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার সুলতান শাহজাহান বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।
একই উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার হুদামালি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের।’
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি ওঠে। বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তবে এখানে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। যেটা শেষ হলে অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তবে এখনও পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াতে তার ইউনিয়নের মানুষদের নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো- ১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান-অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। আপাতত নদী ভাঙ্গনের কোন সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। আর যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়াও আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ করে রেখেছি। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তারপরেও আমাদের উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন সকলে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে, ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে আঘাত হানতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। রেমালের অংশ বিশেষ ইতিমধ্যে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সাতক্ষীরা, খুলনা উপকূল ছুঁয়েছে।
আজ রবিববার সন্ধ্যার পরপরই এর মূল কেন্দ্র ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সাতক্ষীরা ও খুলনা উপকূলে সরাসরি আঘাত করতে যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল গতকাল বিকেল ৫ টায় সাতক্ষীরা উপকূল থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো, এটি আরও শক্তি বাড়িয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রেমালের সেন্টার অতিক্রম করার সময় ভারতের দীঘা, ২৪ পরগনা, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট উপকূলে ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বা এর চেয়েও বেশি বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এবং সেইসঙ্গে এইসকল এলাকায় অদূরবর্তী ও দূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিক জোয়ার অপেক্ষা ৭ থেকে ৯ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
মংলা ও পায়রা বন্দরে ১০ ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরে ৯ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত বহাল রেখেছে সরকারি আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
এ অবস্থায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির বিজিবি সীমান্ত সম্ভার শপিং কমপ্লেক্সের একটি স্বর্ণের দোকানে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রুবেল (২৮), সফিক ওরফে সোহেল (৩৫) এবং সাদ্দাম হোসেন (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৫০ ভরি আট আনা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডি মডেল থানাধীন ‘ক্রাউন ডায়মন্ড এন্ড জুয়েলার্স’ শোরুমে গত ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরচক্র অভিনব পদ্ধতিতে শো-রুমের তালা ও সাটার কেটে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে ১৫৯ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। দোকানের মালিক কাজী আকাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জানুয়ারি থেকে ডিবি পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে প্রথমে মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সফিক ওরফে সোহেল এবং মুরাদনগর থেকে সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৮ ভরি ১৪ আনা আসল স্বর্ণ এবং ২১ ভরি ১০ আনা গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, চুরির ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার ও অবশিষ্ট স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান পিপিএম জানান, এই চক্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে চুরি সংঘটিত করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।