চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ‘চুরি’ গেছে বলে গ্রাহকের অভিযোগের পর ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে ওই গ্রাহকের বক্তব্য স্ববিরোধী এবং তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। পাশাপাশি এ ব্যাপারে তদন্তসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে ব্যাংকটি।
রোববার (২ জুন) ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতে এ খবর জানানো হয়েছে।
‘সোনা চুরি’ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য :
ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী ও তার কন্যা নাসিয়া মারজুকা যৌথ নামে ২০০৬ সাল থেকে ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিটি লকার খোলার জন্য দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। যার একটি গ্রাহক ও অপরটি ব্যাংকের কাছে থাকে। গ্রাহকের চাবি ছাড়া শুধু ব্যাংকে রক্ষিত চাবি দিয়ে কোনোভাবেই লকার খোলা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহককে তার লকারের মূল চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। লকারে রক্ষিত মালামাল ও তার পরিমাণ সম্পর্কে গ্রাহক ছাড়া ব্যাংকার বা অন্য কোনো ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই।
ব্যাংকটি উল্লেখ করে, গত আট এপ্রিল গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য ব্যাংকে আসেন। তখন ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের উপস্থিতিতে মাস্টার কী (চাবি) দিয়ে লকার আনলক করেন। ব্যাংকারকে অবহিত করে চলে যান। যেহেতু লকার হোল্ডারের চাবি দিয়ে বন্ধ করা হয়, সেহেতু লকার বন্ধ করার সময় নিয়ম মোতাবেক ব্যাংকের কারো উপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। একমাত্র তিনিই তার লকার বন্ধ করতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক জানায়, লকার হোল্ডার লকার বন্ধ না করা পর্যন্ত তার চাবি বের করে আনা যায় না। গ্রাহক নির্দিষ্ট লকারে কী নিয়ে গেছেন বা রেখে গেছেন তা ব্যাংকের জানার সুযোগ নেই। গ্রাহক যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা লকার রুমের মূল ফটক নিয়ম মাফিক তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন।
গত ২৯ মে লকার হোল্ডার তার লকার ব্যবহার করতে এসে তার গহনা খোয়া গেছে বলে জানান। অথচ এর আগে তিনি নিজে লকার বন্ধ করে চাবি নিয়ে গেছেন।
ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, লকার হোল্ডার একবার বলেছেন, তার ৩০০ ভরি সোনা নেই। কিছুক্ষণ পর আবার জানান, ১৫০ ভরি নেই এবং আরও কিছুক্ষণ পর আবার জানান ১৫০ ভরির মধ্যে অর্ধেক পেয়েছেন, বাকি অর্ধেক পাননি।
বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংকটি জানায়, ওই গ্রাহক কয়েক ধরনের তথ্য দিয়েছেন, যা স্ববিরোধী এবং বিভ্রান্তকর। এর কিছুক্ষণ পর চট্টগ্রামের চকবাজার থানার পুলিশ সরেজমিন লকার রুম পরিদর্শন করেছেন।
ইতিমধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এ বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকের বক্তব্য :
লকারে গয়না রেখেছিলেন নগরের বেভারলি হিলের বাসিন্দা রোকেয়া বারী। তার দাবি, চুড়ি, জড়োয়া সেট, হার, চেইন, আংটি, দুলসহ ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। লকার খোলার পর দেখা যায়, সেখানে রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১১ ভরি।
বুধবার দুপুরে কিছু স্বর্ণালঙ্কার আনার জন্য সেখানে যান। কিন্তু দায়িত্বে থাকা অফিসার তাকে নিয়ে লকারের কাছে গিয়ে তা খোলা দেখতে পান।
খোয়া যাওয়া স্বর্ণের মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা এবং এ ঘটনায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ তার।
পুলিশের বক্তব্য :
এ বিষয়ে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আকবর সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজেই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। লকার খোলা দেখতে পাই। ভুক্তভোগীরা এখনও কোনো মামলা করেননি। ব্যাংক থেকেও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
করোনাকালের স্থবির দিনগুলো যেন অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কেউ প্রিয়জন, কেউ বা হারিয়েছেন জীবনের গতি। কিন্তু সেই থেমে যাওয়া সময়েই নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন সুলতানা মুক্তা। দীর্ঘ ১৭ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম — ‘ঋক্ষশৈলী’।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে সুলতানা মুক্তা তুলে ধরেন তার ‘ঋক্ষশৈলী’র গল্প, সংগ্রাম আর স্বপ্নের কথা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
‘ঋক্ষশৈলী’ মূলত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলা আয়োজনের একটি সংগঠন। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ঘরোয়া নারী উদ্যোক্তা, হাতে বানানো পণ্যের কারিগর— সবাইকে এক ছাতার নিচে এনে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করেছে মুক্তার এই উদ্যোগ।
‘আমি শিক্ষকতা করতাম অনেক দিন। ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। মনে হচ্ছিল, জীবনে কিছু একটা নিজের মতো করে করতে চাই,’— বলছিলেন মুক্তা। ‘সেই সময় অনলাইনে Tuna-Tunyy নামে একটি বুটিক পেজ খুলি। উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত থাকা, কিন্তু ধীরে ধীরে কাজটাই ভালোবাসায় পরিণত হলো।’
ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া— সেই স্বপ্ন তিনি পূরণও করেছেন। কিন্তু উদ্যোক্তা জীবনের এই অধ্যায় যেন মুক্তার জীবনের দ্বিতীয় প্রেরণা। ‘শিক্ষকতা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, আর উদ্যোক্তা জীবন দিয়েছে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ,’— বললেন তিনি।
শুরুতে পরিবার থেকেই এসেছিল শঙ্কা, সন্দেহ আর কিছু নিরুৎসাহ। “পরিবার বলত— ‘তোমাকে দিয়ে হবে না।’ তখন ভাবতাম, কেন পারব না?”— স্মৃতি হাতড়ে বললেন মুক্তা। ধীরে ধীরে সেই অবিশ্বাসই হয়ে উঠেছে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।
তবে মুক্তার গল্প একা লড়াইয়ের নয়— বরং একসঙ্গে এগিয়ে চলার গল্প। ২০২২ সালে অনলাইনে পরিচিত চারজন বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো একটি মেলার আয়োজন করেন তারা। নাম দেন ‘ঋক্ষশৈলী’। প্রথম আয়োজনেই মেলে অভাবনীয় সাড়া। ‘সেই মেলাতেই বুঝলাম— একা নয়, একসঙ্গে কাজ করলেই সফলতা সম্ভব,’ বলেন মুক্তা।
এখন পর্যন্ত ১৭টি মেলা আয়োজন করেছে ঋক্ষশৈলী। প্রতিটি মেলাতেই সুযোগ পেয়েছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা, যারা হয়তো কখনও দোকানের বাইরে নিজেদের পণ্য দেখানোর সাহস পাননি। মুক্তা বলেন, ‘আমরা এমন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিই, যারা শুরু করছেন একদম নতুন করে। তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’
তবে সহজ ছিল না এই যাত্রা। সংসার, সন্তান, ঘর সামলে উদ্যোক্তা জীবনে সময় দেওয়া— শুরুতে ছিল অসম্ভব কঠিন। মুক্তা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ঘর সামলে নিজের জন্য সময় বের করা। ধীরে ধীরে পরিবার বুঝেছে, আমিও ব্যালান্স করতে শিখেছি।’
ব্যর্থতাও এসেছে পথে। মূলধনের অভাব, পণ্য সংগ্রহে সমস্যা, অনলাইন পেজের প্রচার না পাওয়া— সবই পেরিয়ে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা। তার মতে, ‘সফল হতে গেলে বারবার পড়তে হবে, আবার উঠতেও হবে। জানার শেষ নেই, শেখার শেষ নেই। এই মানসিক প্রস্তুতিটাই বড়।’

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরতে থাকা তরুণদের তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হলে শুধু নিজের জীবিকার পথ তৈরি হয় না, আরও কয়েকজনের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। এখন অনেক তরুণ পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোগ নিচ্ছে— এটা ভালো লক্ষণ।’
নতুনদের জন্য তার পরামর্শ, ‘ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ একদিনে সফল হয় না। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। নিজের কাজের বিষয়ে জানতে হবে সব কিছু এবং কখনও হাল ছাড়া যাবে না।’
ঋক্ষশৈলীর সাফল্যের পেছনে মুক্তা ও তার দলের যে নিষ্ঠা, তা এখন অনেক নতুন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা। মুক্তা বলেন, “আমরা ৬৪ জেলায় কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুযোগ তৈরি করা। আর একদিন আমরা যেন দেশের বাইরেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-্এর গর্ব ছড়িয়ে দিতে পারি।”
সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়েও তিনি সচেতন। বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যবসা নয়, কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। যেন দেশের তরুণ-তরুণীরা কাজের সুযোগ পায়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’
শেষে তিনি বললেন একটাই কথা— ‘কোনো কাজেই হাল ছাড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে— আমি পারি, আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’
প্রাচীন বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের একটি— মিশরের ‘দ্য গ্রেট পিরামিড অব খুফু’র পাশেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’ বা জিইএম।
এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বলা হচ্ছে। এখানে রাখা হয়েছে এক লাখেরও বেশি প্রত্নসামগ্রী। প্রাক-রাজবংশীয় সময় থেকে শুরু করে গ্রিক ও রোমান যুগ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার বছরের ইতিহাস এই জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে।
বিখ্যাত মিশরবিদদের মতে, এই জাদুঘর চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদেশে থাকা মিশরের প্রত্নসম্পদ ফেরত আনার দাবি আরও জোরালো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত বিখ্যাত ‘রোসেট্টা স্টোন’।
তবে জিইএম সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে প্রাচীন মিশরের বালক রাজা তুতেনখামুনের অক্ষত সমাধি থেকে পাওয়া সব প্রত্নসামগ্রী একসঙ্গে প্রদর্শনের কারণে। ব্রিটিশ মিশরবিদ হাওয়ার্ড কার্টার ১৯২২ সালে এই সমাধি আবিষ্কার করার পর এটাই প্রথমবার, যখন তার পুরো সংগ্রহ একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে।
এই প্রদর্শনীতে রয়েছে তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ, সিংহাসন, রথসহ নানা মূল্যবান সামগ্রী।
আন্তর্জাতিক মিশরবিদ সমিতির সভাপতি ও জিইএমের সাবেক প্রধান ড. তারেক তওফিক বলেন, ‘কীভাবে এই প্রদর্শনীকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়েছে। কারণ সমাধিটি আবিষ্কারের পর এর সাড়ে পাঁচ হাজার প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে আগে মাত্র ১ হাজার ৮০০টি প্রদর্শিত হয়েছিল। আমি চেয়েছি পুরো সংগ্রহই প্রদর্শন করতে— যেন কেউ শত বছর আগে হাওয়ার্ড কার্টার যেভাবে তা দেখেছিলেন, আজও তেমনভাবেই দেখতে পারেন।’
প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই জাদুঘর বছরে অন্তত ৮০ লাখ দর্শনার্থী আকর্ষণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি মিশরের পর্যটন শিল্পে নতুন গতি আনবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
গিজা পিরামিড এলাকার একজন অভিজ্ঞ গাইড আহমেদ সেদ্দিক বলেন, ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম মিশরবিদ্যা ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের নতুন সোনালি যুগের সূচনা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
তুতেনখামুনের প্রদর্শনী এবং খুফুর প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পুরনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নৌকা বাদে জাদুঘরের অধিকাংশ গ্যালারি ইতোমধ্যেই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গাইড আহমেদ আরও বলেন, ‘আংশিক খোলা থাকার সময়েও আমি বহু ট্যুর আয়োজন করেছি। এখন এটি গৌরবের শিখরে পৌঁছাবে। যখন তুতেনখামুনের পুরো সংগ্রহ উন্মুক্ত হবে, তখন মনে হবে যেন পুরো পৃথিবী ফিরে এসেছে— কারণ এই রাজা শুধু মিশরের নয়, ইতিহাসেরই এক আইকনিক ফারাও।’
লন্ডন থেকে আগত এক পর্যটক স্যাম বলেন, ‘আমরা মিশরের এই নতুন জাদুঘর দেখতে আর প্রত্নসম্পদগুলো উপভোগ করতে মুখিয়ে আছি।’
আরেকজন ব্রিটিশ পর্যটক জানান, তিনি এর আগে কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে অবস্থিত পুরনো মিশরীয় জাদুঘরে তুতেনখামুনের কিছু প্রত্নসামগ্রী দেখেছিলেন।
নতুন জাদুঘরটি প্রায় পাঁচ লাখ বর্গমিটার আয়তনের— যা প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান। জাদুঘরের দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় লিপি। অ্যালাবাস্টার পাথরে তৈরি ত্রিভুজাকার দেয়াল আর পিরামিড আকৃতির প্রবেশদ্বার এটিকে দিয়েছে এক অনন্য স্থাপত্যরূপ।
এখানে রয়েছে ৩২০০ বছর পুরোনো এবং ১১ মিটার উচ্চতার রামেসিস দ্য গ্রেটের মূর্তি— যাকে মিশরের অন্যতম বিখ্যাত ফারাও হিসেবে ধরা হয়। ২০০৬ সালে কায়রো রেলস্টেশনের কাছ থেকে এই মূর্তিটি সরিয়ে এনে এখানে স্থাপন করা হয়।
জাদুঘরের বিশাল সিঁড়ির পাশে রয়েছে প্রাচীন রাজা-রানীদের ভাস্কর্য। উপরের তলার বড় জানালা দিয়ে দর্শনার্থীরা সরাসরি গিজা পিরামিডের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
এই জাদুঘর নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয় ১৯৯২ সালে, আর কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। অনেকের মতে, এটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় পিরামিড নির্মাণের সমান।
তবে এই প্রকল্প বারবার স্থগিত হয়েছে রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত, পরবর্তী সময়ের অশান্তি, কোভিড মহামারি ও আঞ্চলিক সংঘাতের সময় কাজ থমকে যায়।
দেশটির সাবেক পর্যটনমন্ত্রী ও বিশিষ্ট মিশরবিদ ড. জাহি হাওয়াস বলেন, ‘এটা ছিল আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আজ এই জাদুঘর পুরোপুরি চালু হতে দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি দুটি বিষয় চাই— প্রথমত, বিশ্বজুড়ে জাদুঘরগুলো যেন চুরি করা প্রত্নবস্তু কেনা বন্ধ করে। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা রোসেট্টা স্টোন, ফ্রান্সের লুভ জাদুঘরে থাকা ডেনডেরা জোডিয়াক, এবং জার্মানির বার্লিন জাদুঘরে থাকা নেফারতিতির মূর্তিটি যেন ফেরত আসে।’
রোসেট্টা স্টোন হায়ারোগ্লিফিক লিপি পাঠোদ্ধারের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে পরিচিত। এটি ১৭৯৯ সালে ফরাসি সেনারা আবিষ্কার করেছিল, পরে ব্রিটিশরা যুদ্ধের পর দখল করে নেয়।
অন্যদিকে, ডেনডেরা জোডিয়াক একটি প্রাচীন মিশরীয় আকাশ মানচিত্র, যা ১৮২১ সালে ফরাসিরা মন্দির থেকে কেটে নিয়ে যায়। মিশরের দাবি, জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিকরাও আখেনাতেনের স্ত্রী নেফারতিতির মূর্তি পাচার করে নিয়েছিল।
ড. হাওয়াস বলেন, ‘ওই তিন দেশ থেকে এগুলো ফিরিয়ে আনা উচিত সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবে। মিশর বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়েছে, এখন তাদেরও কিছু ফেরত দেওয়া সময় এসেছে।’
তবে ব্রিটিশ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে মিশরের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পায়নি।