দেশ, নির্বাচিত, লিড নিউজ

দেশ, নির্বাচিত, লিড নিউজ

ভুমিদস্যুদের ইন্ধনে আবারও শুরু হয়েছে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব 

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নদী ও খাল সংলগ্ন কয়েকটি মৌজায় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। আইন অমান্য করে অবাধে ফসলী জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভূমিদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কমে যাচ্ছে এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ। রোজকার খবরের সরেজমিন অনুসন্ধানে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের রামকৃষ্ঞদি, ভাসানচর, নতুনচরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকায় গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগি এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর যেসব জমিতে গোল আলু, সরিষা, গম, ধানসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ হত, এলাকার কিছু চিহ্নিত ভূমিদস্যু গত ৩/৪ বছর যাবৎ উপজেলার রামকৃষ্ঞদি, ভাসানচর, নতুনচর মৌজাসহ আশেপাশে এলাকার সেইসব ফসলি কৃষি জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা জমি কিনে তারপর কেনা জমির মাটি কাটে। তাছাড়া অনেকে আবার জমি বিক্রি না করে শুধু জমির মাটি বিক্রি করে। বিক্রিত মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে জমিতে ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত করে এমন খাড়াভাবে কেটে নেয় যাতে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পার্শ্ববতী জমির মাটি ভেঙে পড়ে। ফলে ওই জমিও আর ফসল ফলানোর উপযোগী থাকে না। তখন দালালের মাধ্যমে ভেঙ্গে পড়া জমির মালিককে তাদের কাছে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। এভাবে পর্যাক্রমে একের পর এক ফসলি জমি চলে যাচ্ছে মাটিখেকো ভুমি দস্যুদের কব্জায়। বেকার হচ্ছেন কৃষকরা। পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের ফলে হুমকির মুখে পড়েছেন উপজেলার এইসব প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জীবন।

এ ব্যাপারে লতব্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ মোঃ ফজলুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রোজকার খবরের স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের এলাকার ফসলি জমির মাটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার মৌখিক ও লিখিত আবেদন জানিয়েছি। স্থানীয় ইটভাটার মালিক ও গণ্যমান্য সবাইকে নিয়ে মিটিং করেছি। এমনকি, এই বিষয়টা জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে ভুক্তভোগীদের নিয়ে গতবছর ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছি। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমার এলাকার ফসলি জমির মাটি রক্ষায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জনদাবির প্রেক্ষিতে সাধারণ ভুক্তভোগীর পক্ষ নিয়ে ফসলি জমির মাটি রক্ষায় তৎপর থাকায় তিনি নিজেই এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় ভুগছেন বলে এই প্রতিবেদকের কাছে জানান।

কৃষি জমির মাটি কাটলে ভুমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়। সরকারি আইন অনুযায়ী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ভূমি মালিককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অনুমোদন দেবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকও এ অনুমতি সরাসরি দেন। তবে এর কোনটারই তোয়াক্কা করছেন না উল্লেখিত এলাকার ভূমিখেকোরা।

উল্লেখ্য, মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তত করিবার উদ্দেশ্য কৃষি জমি হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ এতসব আইন থাকার পরও ভূমিদস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ ব্যাপারে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবু সালেক জানান, ‘ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে অবহিত করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র জানান, ‘কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায়। দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যায় এবং বেকার হচ্ছে কৃষক। মাটি কাটার বিষয়টি আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।’

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


উল্লেখ্য, ভারি বাহনে মাটি পরিবহনের ফলে মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জনসাধারনের চলাচলের রাস্তা। কেটে নেয়া মাটিসহ ভারি ট্রাক বা ট্রলিতে ভর্তি করে জোর করে অন্যের জমির উপর দিয়ে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক দিয়ে নেয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। মাটি ভর্তি ট্রাক কিংবা ট্রলিগুলো সড়ক দিয়ে পরিবহনের ফলে রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সাধারণ যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলেও খুবই অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া, দিনরাত মাটি কাটার মেশিন (ভেকু) ও মাটি টানার ট্রলির বিকট শব্দে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। এ ঘটনায় বর্তমানে এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তিতে সফলতার এক অদম্য যাত্রী ‘সোমা’

গফরগাঁওয়ের এক অধ্যাপকের স্বপ্ন ছিল প্রশাসক হওয়া। কিন্তু জীবন তাকে ভিন্ন পথে নিয়ে গেছে— তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বহু আগে থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন পথচলা। আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী। N S P House নামে গড়ে তুলেছেন নিজের বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবন ও ভাবনা জানিয়েছেন জুলেখা খাতুন সোমা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অর্থনীতি পড়ানোর পাশাপাশি তিনি আইসিটি বিষয়েও শিক্ষকতা করতেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনেক আগেই বুঝতে পারেন। তাই এইচএসসি পাস করার পরই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর ২০০৬ সালে নিজেই একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল, তবু এখান থেকেই তার ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনার শুরু।

এরপর ধীরে ধীরে তিনি ইট-বালুসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। ব্যবসার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য অফলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে থাকেন, যাতে একসময় বড় উদ্যোক্তা হতে পারেন।

২০১৪ সালে তিনি ফেসবুকে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন গ্রুপে লেখালেখির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং তৈরি করেন, যা পরবর্তী সময়ে তার ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০১৮ সালে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি একটি শপ খোলেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তার চেয়েও বেশি সফলতা পেতে থাকেন। ঠিক এই সময়েই তিনি পরিচিত হন ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে, যা তার উদ্যোক্তা জীবনকে আরও গতিশীল করে তোলে।

তবে পথচলা সহজ ছিল না। প্রথমদিকে পরিবার থেকেও কোনো সমর্থন পাননি, বরং একাই পথ চলতে হয়েছে। পরে তার বড় সন্তান পাশে দাঁড়ায় এবং ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সমর্থন দিতে বাধ্য হন।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতেই তিনি এক বড় সংকটের মুখোমুখি হন। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অনলাইন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পেলেও হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি কেবল একটি ছোট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে নিজের অবস্থান তৈরি করবেন।

এই কঠিন সময়ই তাকে আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তিনি নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান এবং আজ তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা একসময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারাই একসময় ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু তিনি নীরব থেকে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।

এ শুধু একজন নারী উদ্যোক্তার সফলতার কাহিনি নয়, বরং এটি এক অদম্য মানসিকতার গল্প। প্রতিকূলতাকে জয় করে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, তা তিনি নিজেকে দিয়েই প্রমাণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোই তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া।

তার ভাষায়, ‘নারীরা যদি নীরব হয়ে যায়, পৃথিবীতে বড় পরিবর্তন ঘটে—আমি তারই প্রমাণ।’ তার এই নিরবতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার বার্তা। যারা তাকে থামাতে চেয়েছিলেন, তারা পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছেন, তারা আসলে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, যার প্রতিটি অর্জন তার কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় সংকল্পের ফসল।

পরবর্তী খবর

সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত