জাতীয়, লিড নিউজ, শিক্ষা, শৈশব

জাতীয়, লিড নিউজ, শিক্ষা, শৈশব

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলে বিস্কুট-রুটি-ডিমের প্রস্তাব

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলে শুকনা খাবারের প্রস্তাব আনছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুকনা খাবারের মধ্যে বিস্কুট, বানরুটি, দেশি ফল ও দুধ বা ডিম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। দেশের বিভিন্ন জেলার ১৫০ উপজেলায় শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মিলের জন্য ৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এর আগে, শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলে গরম খাবার বা খিচুড়ি দেওয়ার জন্য ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে ২০২১ সালের ১ জুন প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সে সময় একনেক থেকে সামনের দিনগুলোয় এ ধরনের প্রকল্পের পরিবর্তে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর বিকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এবার পরিকল্পনা কমিশনে নতুন করে এ ধরনের আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে মন্ত্রণালয়। তবে আগের মতো এবারো প্রকল্পটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে আগের প্রকল্পটির পার্থক্য কোথায়? বিষয়টি নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি মূল্যায়ন সভা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো— আগের প্রকল্পে হটমিল বা খিচুড়ির কথা বলা হলেও এবারেরটিতে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহের পাঁচদিন সরবরাহ করা হবে পাঁচ ধরনের খাবার। এর মধ্যে বিস্কুট বা বানরুটি ছাড়াও থাকবে দেশি ফল এবং দুধ বা ডিম। আর এসব খাবারের মাধ্যমে শিশুদের প্রয়োজনীয় ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করা হবে।

প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা পাঁচদিন পাঁচ ধরনের খাবার দেওয়ার চিন্তা করেছি। প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার স্কুলের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে খাবার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের প্রয়োজনীয় কিলোক্যালরির এক-তৃতীয়াংশ এসব খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এতে বিস্কুট, বানরুটি, ডিমসহ দেশীয় ফল থাকবে। কলা, আমসহ সিজনাল ফলগুলো প্রাধান্য দেওয়া হবে।

কী ধরনের বিস্কুট দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ বিস্কুট তৈরির জন্য ওপেন টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আমাদের দেশের ছয়-সাতটি কোম্পানি এমন বিস্কুট উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কাজ পাবে। এক্ষেত্রে এ শিল্পেরও বিকাশ হবে। আর দুধ ও ডিম কিনে আমরা তা সরবরাহ করব।

যদিও এ ধরনের প্রকল্পে শিশুদের ক্যালরির চাহিদা লক্ষ্যমাফিক পূরণ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে পুষ্টিবিদরা বলছেন, গোটা বিষয়টি নির্ভর করবে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তার ওপর। এক্ষেত্রে বিস্কুট কোথা থেকে আনা হচ্ছে বা কাদের দিয়ে বানানো হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। আবার দুধ বা ডিমের মতো উচ্চ পচনশীল পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে শিশুদের কাছে বিতরণ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াটি নিয়েও জোর সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ শিশুদের খাবার নিয়ে যেকোনো ধরনের অবহেলায় হিতে বিপরীত হওয়ার বড় আশঙ্কা থেকে যায়।

এবারের প্রকল্প প্রস্তাবে খাবার সরবরাহের ভেন্ডর নিয়োগ, গোডাউন ভাড়া করা, খাদ্য বিতরণ, প্যাকেজিং ও পরিবহনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এসবের জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ই ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর অ্যাপ্রোন ও রুমাল ক্রয়ের জন্য ৪০ কোটি এবং টিফিন ম্যানেজারের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেমিনার, হ্যান্ডওয়াশ ও ওরিয়েন্টেশনের জন্য আলাদাভাবে ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তাই আগের প্রকল্পটি থেকে এবারের প্রকল্পটি কীভাবে আলাদা তা জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইংয়ের উপপ্রধান মীর্জা মোহাম্মদ আলী রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যালোচনা সভায় আমরা প্রকল্পটি নিয়ে বিশ্লেষণ করব। আগের প্রকল্পের সঙ্গে এর পার্থক্য বা যেসব কারণে আগের প্রকল্পটি বাতিল হয়েছিল, তা এখানেও আছে কিনা সেটি তখনই বোঝা যাবে। আমরা ওয়ার্কিং পেপার রেডি করে সভার প্রস্তুতি নিয়েছি।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রমতে, প্রকল্প প্রস্তাবে ১৮-১৯ হাজার প্রাথমিক স্কুলে প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এখানে খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের জন্য রাখা হয়েছে ৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। যেখানে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প খাবারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিস্কুট ও দুধ অথবা রুটি-কলা, ডিম বা রান্না করা খাবার। আর এসবের পেছনে বছরে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭১১ টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্যাকেজের ভিন্নতায় ব্যয়েরও পরিবর্তন আসবে। যেখানে দিনে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় হবে ১৮ থেকে ৫৩ টাকা পর্যন্ত।

আগেরটির সঙ্গে নতুন প্রকল্পের তেমন কোনো পার্থক্য নেই বলে মনে করছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূরজাহান খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমরা ছয় মাস আগে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। এর আগে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি একনেক থেকে ফেরত দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেটা করা হয়েছে।

এছাড়া আগের প্রকল্পটি থেকে এটার তেমন কোনো পার্থক্য বা সমস্যা আছে বলে মনে করছেন না তিনি।

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বলা হচ্ছে, এ খাতে প্রতি ১ ডলার ব্যয় করলে ৯ ডলার পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে শিশুদের স্বাস্থ্যগত উন্নতির পাশাপাশি কর্মজীবনে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস প্রফেসর ও শিক্ষাবিদ ড. মনজুর আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিড-ডে মিল নিয়ে আমাদের দেশে আগের অনেক পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা ছিল। তবে শুকনা খাবারের মাধ্যমেও পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। এজন্য একবারে সারা দেশে একই পদ্ধতি ব্যবহার না করে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। যাতে শিক্ষকদের ওপর আমলাতান্ত্রিক চাপ তৈরি না হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় অভিভাবক এবং কমিটির লোকদের যুক্ত করা যায়। তবে সবার আগে জরুরি খাবারের মান ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

পরের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাত মন্ত্রী, চার সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি উঠে আসে। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামকে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ করা হলো। এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা এ দলকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। আর এবার দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলো জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে।

পরবর্তী খবর

ঈদের ছুটি শেষে খুলছে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়

ঈদুল আযহার ছুটি শেষে রবিবার খুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরমেবি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, রবিবার থেকে যথারীতি একাডেমিক এবং দাপ্তরিক সব কাজ চলমান থাকবে।

এরই মাঝে দীর্ঘ যানজট উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, গত ১২ জুন থেকে ২২ জুন মোট ১০ দিন ঈদুল আযহার ছুটি পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত