উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি পরাজয় বলে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান মন্তব্য করেছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মঈন খান বলেন, জনগণের শক্তির কাছে কোনো কিছু টিকে থাকতে পারেনি। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে অচিরেই এই সরকারকে বিদায় দেওয়া হবে।
সরকারের সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, মানুষ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যায়নি। এটা বিএনপির কথা নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্র এই কথা বলছে।
অনুষ্ঠানে ওলামা দলের নেতাকর্মীসহ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় চার মাস পর, বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে টেলিফোনে বক্তব্য দেবেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। এর আগে ইউরোপের দুটি দেশে একইভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
ফোনালাপ ফাঁসের পর জন জনসম্মুখে বক্তব্যের গুরুত্ব
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল। যদিও সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে ফোনালাপে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া শোনা গেছে। এসব ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডগুলোকে বাদ দিলে, ৫ আগস্টের পর এবারই আগাম জানান দিয়ে শেখ হাসিনা জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের মাঝে শেখ হাসিনার সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি তার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। তবে খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনীতিতে সক্রিয়। নতুন করে ফিরে আসার কিছু নেই।’
নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে এবং তার ও তার বোন শেখ রেহানাকে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যা বলছেন, তা দেশের স্বার্থে বলছেন। দেশকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করা আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা
এদিকে শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যও নিষিদ্ধ ছিল, যদিও চলতি বছরের আগস্টে হাইকোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বাক স্বাধীনতা হরণ’ বলে সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রাজনীতি বিশ্লেষক, লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ‘ফাঁকা আওয়াজ’ এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনা বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিদ্বেষমূলক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মন্তব্য করেছেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার দল রাজনৈতিক নৈতিকতা হারিয়েছে, আর তাদের এসব বক্তব্য বিভ্রান্তিকর।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ভারতের রচনা করা চিত্রনাট্যের অংশ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এক্সিস্টিং পলটিক্যাল পার্টির জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হবে তখন, যখন তারা কাউন্টার করতে না পারে। এটি নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার ওপরে। তারা যদি সক্ষম হতে পারে, তাহলে তারা কাউন্টার প্রোপাগান্ডা দিয়ে ওটা সামাল দিবে। তাদের যদি সেই সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তারা কিসের রাজনীতি করে? আমার কথা হল, আওয়ামী লীগ বিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরও নাকি বিদেশে শাখা আছে। এখন তারা কী কাউন্টার প্রোপ্যাগান্ডা করছে, তা আমরা দেখতে চাই। সব তো এক তরফা হওয়ার কথা না।’
শেখ হাসিনার বিদেশে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার রাজনৈতিক অবস্থান, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
সূত্র : বিবিসি
‘এক টাকার খবর’র সম্পাদক মুন্নী সাহাকে আটক করেছে পুলিশ। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে মুন্নী সাহাকে আটক করে তেজগাঁও থানায় দিয়েছে জনতা। শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে থানা থেকে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
মুন্নী সাহাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, ‘জনতা ওই নারী সাংবাদিককে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।’ পরে তেজগাঁও থানা থেকে মুন্নী সাহাকে রাজধানীর মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করীম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আটক রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘এক টাকার খবরে’র অফিস থেকে বের হয়ে সবজি কিনতে যান মুন্নী সাহা। সেখানে গিয়ে তিনি জনতার তোপের মুখে পড়েন। বেশকিছুক্ষণ তাকে ঘিরে রাখা হয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কারওয়ান বাজারস্থ আইসিটি বিভাগের ভিশন-২০২১ টাওয়ারের (সাবেক জনতা টাওয়ার) সামনে সবজি কিনছিলেন মুন্নী সাহা। এসময় তাকে চিনতে পেরে একদল লোক বিক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর চড়াও হন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। পরে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহতের মামলায় আসামি মুন্নী সাহা।