জাতীয়, সর্বশেষ

জাতীয়, সর্বশেষ

দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী

নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শুভেচ্ছা বার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশের সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সময়ের চিরায়ত আবর্তনে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ নতুন স্বপ্ন, নতুন অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত। নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। তাইতো নববর্ষকে বরণ করতে বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশও প্রস্তুত। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টাব্দ তাই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।

সাহাবুদ্দিন বলেন, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের সমাহার নিয়ে আমাদের জীবনে নববর্ষের আগমন ঘটে। তাই বিগত দিনের ভুল-ভ্রান্তি, ব্যর্থতা ও হতাশাকে দূরে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন ও ইতিবাচক পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা অতিমারি ও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের ফলে বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। আমাদের আশপাশের অনেক মানুষই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। নববর্ষে আমরা একে অন্যের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই, এই হোক ইংরেজি ‘নববর্ষ- ২০২৪’ এর প্রত্যাশা।

এছাড়া একজনের আনন্দ যেন অন্যদের বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক খ্রিষ্টীয় নববর্ষে এই প্রত্যাশা করে সাহাবুদ্দিন বলেন, নববর্ষ সকলের মাঝে জাগিয়ে তুলে নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ।

অন্যদিকে, নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা যে সময়কে পেছনে ফেলে নতুন দিনের আলোয় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছি, সে সময়ের যাবতীয় অর্জন আমাদের সম্মুখ যাত্রার শক্তিশালী সোপান হিসেবে কাজ করছে। তাই নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণের সোপান রচনা করার অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার হোক, সব সংকট দূরীভূত হোক, সব সংকীর্ণতা পরাভূত হোক এবং সবার জীবনে আসুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এই প্রার্থনা করি।

‘২০২৩ সাল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক স্বর্ণযুগ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেতুতে রেল যোগাযোগের শুভ উদ্বোধন করেছি। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালুর পর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা সম্প্রসারণ করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের অন্যান্য মেগা ও মাঝারিসহ সব অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করেছি। ৫ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করেছি। ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং ১৯ অক্টোবর দেশের ৩৯টি জেলায় ১৫০টি সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস একসঙ্গে উদ্বোধন করেছি। ২৮ অক্টোবর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছি। ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল চালু করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচন হতে পরপর তিন দফা জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে গত ১৫ বছরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিও কিছুটা মন্থর হয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ সারা পৃথিবীতে নিরীহ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দেশের যেকোনো সংকট আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করেছি। মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৩৩টি জেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছি। প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি। দুই কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছি। দুই কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি ক্যাটাগরিতে ১০ কোটি মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন চালু করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিচ্ছে। এই বই উৎসব বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রেও এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।

‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি করছি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছি। ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের মঙ্গল হয়। কারণ, একমাত্র আওয়ামী লীগই স্বাধীনতার সুমহান আদর্শকে ধারণ করে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা মানুষের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি, অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিহত করে মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করি এবং সর্বোপরি গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

সরকারপ্রাধান বলেন, আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র নয় মাসেই তিনি আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৭ এপ্রিল প্রথম অধিবেশন বসেছিল। ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল মহান জাতীয় সংসদের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ২২তম বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই অধিবেশনে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শূন্য হাতে সদ্যস্বাধীন দেশকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে টেনে তুলেছিলেন। তখন ব্যাংকে কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না, কোনো কারেন্সি নোট ছিল না। সেই অবস্থায় গণতন্ত্রের মজবুত ভিত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন।

তিনি বলেন, প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকার গঠনের পর ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন এবং জাতিসংঘ সেই স্বীকৃতি দিয়েছিল। সূত্র: বাসস

শেয়ার
বিষয়:
পরবর্তী খবর

অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে দমন-পীড়ন করছে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের গ্রেফতারে সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।

সংস্থাটি বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ জানায়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।

সংস্থাটির মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এইচআরডব্লিউ বলেছে, গত আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

রাজনৈতিক কর্মী ও শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের ওপর দমননীতি

এইচআরডব্লিউ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১২ মে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আওতায় দলীয় সভা, সমাবেশ, প্রকাশনা, এমনকি অনলাইন বক্তব্যও নিষিদ্ধ করা হয়।

সংস্থাটির দাবি, আইন ব্যবহার করে সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মী ও বিরোধীদের দমন করছে, যা শেখ হাসিনার আমলের দমননীতিরই পুনরাবৃত্তি।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয় যা শেখ হাসিনার সরকারের সময়ের মতোই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠায় বা মতপ্রকাশে বাধা দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে দেশে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাদের উচিত হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতারের ঘটনাগুলোর ওপর তাত্ক্ষণিক নজরদারি ও হস্তক্ষেপ করা।’

ঢাকায় আলোচনাসভা থেকে গ্রেফতার

বিবৃতিতে ঢাকার সাম্প্রতিক একটি ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক আলোচনাসভা থেকে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। সভাটিতে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাবেক রাজনীতিকরা অংশ নিয়েছিলেন।

সেখানে হঠাৎ একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ঢুকে উপস্থিতদের ঘিরে ফেলে এবং দুর্ব্যবহার শুরু করে। পরে পুলিশ এসে বিশৃঙ্খলাকারীদের না ধরে বরং আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদেরই আটক করে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

প্রথমে পুলিশ জানিয়েছিল, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আটক করা হয়েছে। কিন্তু পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই মামলায় পরবর্তীতে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ— তারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আদালতে অপমানজনক আচরণ

এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, জামিন শুনানির সময় মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। এমনকি আদালত প্রাঙ্গণে অন্য এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আটক ব্যক্তিদের পরিবার বলছে, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানও ছিল না, কেবল একটি আলোচনা সভা। তাহলে কীভাবে এটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলা যায়?’

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চিকিৎসা বঞ্চনা

সংস্থার দাবি, আটক ব্যক্তিদের অনেকেই পুলিশ হেফাজতে দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন এবং চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে শেখ হাসিনার শাসনামলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে তারা।

রক্ষণশীল গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা

বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, সরকার রক্ষণশীল মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকেও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। এ গোষ্ঠীগুলো তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের সময় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলায় অন্তত ১৫২ জন নিহত হয়েছেন।

এক রাজনৈতিক কর্মী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘আমরা এখন হয় সন্ত্রাসী হিসেবে কারাগারে, নয়তো উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে নিহত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি। বিচার হওয়া জরুরি, কিন্তু তা হতে হবে নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে— যা দিতে ইউনূস সরকার ব্যর্থ।’

জাতিসংঘের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় বাংলাদেশের সঙ্গে তিন বছরের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার উদ্দেশ্য মানবাধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি। মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেন, ‘এই মিশন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করবে।’

অন্যদিকে সম্পাদক পরিষদও সতর্ক করেছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধিত ধারা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘রাজনৈতিক দমন নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রয়োজন’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধ করা। এই আইন এখন দমন-পীড়নের সমার্থক হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত হবে নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া।’

 

শেয়ার
পরবর্তী খবর

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক আর নেই

ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন আহমদ রফিক। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বিকল হওয়া, পারকিনসন্স, আলঝেইমার্সসহ একাধিক শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১২ সেপ্টেম্বর তিনি কাটান তাঁর ৯৭তম জন্মদিন। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন না বেছে নিয়ে তিনি মনোনিবেশ করেন লেখালেখি, গবেষণা ও সংস্কৃতি চর্চায়।

ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিল-সভা সমাবেশে ছিলেন নিয়মিত। আন্দোলনকে ঘিরে ১৯৫৪ সালে তাঁর নামে একমাত্র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে।

আহমদ রফিকের প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ শিল্প সংস্কৃতি জীবন প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। এরপর একে একে প্রকাশ করেন শতাধিক গ্রন্থ। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ, ভাষা আন্দোলন ও সংস্কৃতি গবেষণা। দুই বাংলায় তিনি রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবে সমধিক পরিচিতি পান।

একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য উপাধিসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে এক আলোকবর্তিকা।

স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। নিঃসন্তান এই ভাষাসংগ্রামী রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

বাংলার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভুবনে তাঁর অবদান অনন্য ও অনির্বচনীয়।

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত