দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের মধ্যে বরিশাল ও ভোলায় তিনজন করে এবং খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালীও চট্টগ্রামে ১ জন করে মারা গেছেন।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এছাড়াও প্রলয়ংকরী এই ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে দেশের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মহিববুর রহমান আজ বিকেলে সচিবালয়ের নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান।
এ সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান আবহাওয়াবিদ ড. শামীম হাসান ভূঁইয়াসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালেরধ্বংসলীলায় দেশের ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হলো– খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭টি এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৩৫ হাজার ৪শ’ ৮৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ১ লাখ ১৪ হাজার ৯শ’ ৯২টি ঘরবাড়ী আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকাসমূহে ৯ হাজার ৪শ’ ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সকল আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। গরু-মহিষ, ছাগল- ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার একশ’ ৪৬টি।
তিনি বলেন, দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে এক হাজার চারশ’ ৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে এক হাজার চারশ’ টিম চালু রয়েছে।
মহিববুর রহমান বলেন, দুর্যোগ কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি জেলায় তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা নগদ, ৫ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ এবং গো খাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনায় ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় দেশকে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
ড. শামীম হাসান ভূঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করলেও পেছনে অনেক মেঘ রয়েছে। ফলে আগামীকাল পর্যন্ত বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকবে। উজানে (সিলেট) ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এখন পানি কিভাবে বাড়বে সেটাই বড় কথা।
তিনি বলেন, আজ ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১৩৮ মিলিমিটার, কক্সবাজারে ১৩৯ মিলিমিটার পটুয়াখালীতে ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
শামীম বলেন, আগামী পরশু বুধবার থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থল নিম্নচাপে রূপ নেবে এবং সিলেটের দিকে চলে যাবে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির বিজিবি সীমান্ত সম্ভার শপিং কমপ্লেক্সের একটি স্বর্ণের দোকানে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রুবেল (২৮), সফিক ওরফে সোহেল (৩৫) এবং সাদ্দাম হোসেন (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৫০ ভরি আট আনা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডি মডেল থানাধীন ‘ক্রাউন ডায়মন্ড এন্ড জুয়েলার্স’ শোরুমে গত ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরচক্র অভিনব পদ্ধতিতে শো-রুমের তালা ও সাটার কেটে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে ১৫৯ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। দোকানের মালিক কাজী আকাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জানুয়ারি থেকে ডিবি পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে প্রথমে মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সফিক ওরফে সোহেল এবং মুরাদনগর থেকে সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৮ ভরি ১৪ আনা আসল স্বর্ণ এবং ২১ ভরি ১০ আনা গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, চুরির ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার ও অবশিষ্ট স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান পিপিএম জানান, এই চক্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে চুরি সংঘটিত করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম।
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরও প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রবীর মিত্র আর আমাদের মাঝে নেই। অঞ্জনার পর তার মৃত্যু আমাদের আরও বিমর্ষ করে দিল।’
দাফন ও জানাজা
প্রবীর মিত্রের দাফন ও জানাজার বিষয়ে অভিনেতা মিশা সওদাগর জানান, রাতে তার মরদেহ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। পরদিন বাদ জোহর মরদেহ এফডিসিতে আনা হবে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। পরে প্রবীর মিত্রের পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলামও একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জীবনের শেষ দিনগুলো
৮১ বছর বয়সী প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
প্রবীর মিত্রের জীবন ও ক্যারিয়ার
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার নাট্যযাত্রা শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। যদিও এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি নায়ক হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
প্রবীর মিত্রের অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, এবং ‘প্রতিজ্ঞা’।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে প্রবীর মিত্রের অবদান অমর হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো বিনোদন জগৎ ও দর্শকসমাজ।