বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে ইতিহাস বিভাগের এস এম আছাদুল্লাহ সভাপতি এবং অর্থনীতি বিভাগের মোঃ ইকরামুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে ববির সাতক্ষীরা জেলার ছাত্র কল্যাণ পরিষদের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নব গঠিত সভাপতি এস এম আছাদুল্লাহ আছাদ বলেন, ‘ইতিহাসের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি আমার জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে ধরতে চাই। জেলা এসোসিয়েশন-এর একটা দীর্ঘ দিনের বদনাম আছে যে, সভাপতি সম্পাদক কেন্দ্রীক সংগঠন। আমি চাই এটা থেকে বেরিয়ে এসে একটা টিম হয়ে কাজ করতে। পূর্বেও সবাইকে সাথে নিয়ে একটা টিম হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। জেলার মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধকে অটুট রাখা এবং নবীন থেকে শুরু করে সকল ভাই-বোনদের সহযোগিতা করাই আমাদের লক্ষ থাকবে।’
নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকরামুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ বঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক সংগঠন সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি। এই সমিতি সিনিয়রদের ত্যাগের ফসল ও ভালোবাসার পরিবার। পূর্বের ন্যায় আগামীতেও আমারা সকল শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো এবং দক্ষিণবঙ্গে সাতক্ষীরা জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করব।’
সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত পাভেল বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহোযোগিতায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে। আগামী দিনগুলোতেও আমারা এ ধারা অব্যহত রাখবো।’
এছাড়াও কমিটিতে অন্যান্য পদে রয়েছেন—
সহ-সভাপতি :
১। মোঃ ইউসুফ বিশ্বাস, ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং
২। মেহেদি হাসান, লোক প্রশাসন
৩। প্রণয় পাল, মার্কেটিং
৪। রাহি ইসলাম সুমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৫। রাহিমা আফরোজ জেরিন, ইংরেজি
যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক :
১। মোঃ হাদিউজ্জামান, সমাজবিজ্ঞান
২। মেহেদী হাসান স্বাধীন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
৩। মৃন্ময় মন্ডল, একাউন্টটিং
কোষাধ্যক্ষ : সুরাইয়া ইসলাম ছোয়া, মৃত্তিকা বিজ্ঞান।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক : শেখ ইমন, অর্থনীতি।
দপ্তর সম্পাদক : নাঈমুর রহমান সজীব,ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট।
গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক : মুনতাসির রাহী,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা।
ক্রীড়া সম্পাদক : নাদিম মাহমুদ,সমাজ বিজ্ঞান।
সমাজসেবা সম্পাদক : মোঃ আব্দুর রহমান,সমাজকর্ম।
আইন বিষয়ক সম্পাদক : সালমান শিহাব,আইন।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক : অমরেশ চন্দ্র মন্ডল, বাংলা।
ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক : নুসরাত জাহান, ইতিহাস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অবশেষে ঘোষণা করা হলো ফলাফল। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল জানায়।
এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ৩ হাজার ৯৩০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা।
তবে নির্বাচনের ফলাফলের চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ভোট গণনার দীর্ঘ সময়। এবার জাকসুর মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৬টি ভোট কাস্ট হয়, যা মোট ভোটের ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এত কম ভোট গণনায় কেনো প্রায় দুই দিন লেগে গেল—এ নিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর মেশিনে ফল না করে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা করতে হয়েছে। এতে সময় বেশি লেগেছে। জাকসু নির্বাচনকে নিরপেক্ষ রাখতে সব পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছি আমরা।’
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা আসলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফলাফল দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুটি সংগঠন থেকে লিখিতভাবে ম্যানুয়াল গণনার আবেদন আসে। তাই হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নানা মাধ্যমে নানা অভিযোগ উঠলেও ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি, কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।’
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ভোট গণনার দায়িত্বরত জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষকের মৃত্যুও পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে নবাব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মীর মৃত্যুতে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। যদি কাউন্টিং হাতে করাতেই হয়, তাহলে মেশিন কেন আনা হলো? আগে বললেই তো হলেই করানো যেত।’
ভোটে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জন করে। তাদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী অভিযোগ করেন, ‘আমরা ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন চাইছিলাম। অথচ ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে মনিটরিংয়ের জন্য যে ক্যামেরা ও সিসিটিভি আনা হয়েছে তা জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকে। এমনকি ওএমআর মেশিনও সেখান থেকেই আনা হয়েছে, যাতে শিবিরের প্যানেলকে সুবিধা দেয়া যায়।’
অন্যদিকে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ওএমআর মেশিন যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে তার রাজনৈতিক পরিচয় আসলে বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের। ছাত্রদল সমর্থিতদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এরপর সম্প্রীতির ঐক্য ও সংশপ্তক পর্ষদসহ আরো চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান দায়িত্ব ছাড়েন। জানা গেছে, তাঁরা বিএনপিপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারও পদত্যাগ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়া বারবার স্থগিত হয়। শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন অতিরিক্ত জনবল দিয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হল ইউনিয়নের জন্য একটি ব্যালট পেপার আর কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার ছিল। প্রার্থী সংখ্যা ১৭৭ জন। সব মিলিয়ে হাতে গোনা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছিল।’
ফলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা দেরির পর অবশেষে জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে তিন দিন আগে, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, আজ দুপুর নাগাদ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী জানান, ইতোমধ্যে ১৫টি হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। বাকি হলগুলোর গণনা বেলা ১টার মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
ভোট গণনায় ব্যবহৃত ওএমআর মেশিন নিয়ে কয়েকটি প্যানেলের আপত্তি থাকায় এবার হাতে টালি দিয়ে ফল গণনা করা হচ্ছে। এতে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুক্রবার রাতেই ফলাফল প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সীমিত লোকবল এবং হাতে গণনার কারণে সময় লাগছে। লোকবল বাড়িয়ে দ্রুত কাজ করার চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, হাতে টালি দিয়ে গণনা করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়, কারণ প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে এতে সময় অনেক বেশি লাগছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৭৭ জন।
গণনা প্রক্রিয়ার জটিলতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার। প্রায় ৮ হাজার ভোট পড়লে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদেই ২৪ হাজার কাউন্ট করতে হয়। তিন দিনেও শেষ করা মুশকিল।’
তৃতীয় দিনেও ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে। ফল ঘোষণার অপেক্ষায় এখন পুরো ক্যাম্পাস।