পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশে বিগত ৭ জানুয়ারি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল তাদের মুখ এখন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এখন তারা আবোল তাবোল বলা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে বিগত ৭ জানুয়ারি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি বললেই চলে, যেখানে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে দেশী বিদেশী বহু ষড়যন্ত্র ছিল। এ নির্বাচন বন্ধ করার চক্রান্ত ছিল। তার পরেও দেশে উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা নির্বাচন বর্জন করেছিল, বানচাল করতে চেয়েছিল, তারা ভোটের পরে যখন দেখলো সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা/ অভিনন্দন বার্তার বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন তখন তাদের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এখন তারা আবোল তাবোল বলা শুরু করেছে’।
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ এসব কথা বলেন।
নির্বাচনে ভোট কাস্টের উদাহরণ হিসেবে হাছান মাহমুদ বিভিন্ন দেশে ভোট পড়ার তথ্য সংসদে জানাতে গিয়ে বলেন, রোমানিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ৩১.৮৪ ভোট পড়েছে। হংকং এ ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বুলগেরিয়ায় ২০২২ সালে ৩৭.৯৮ শতাংশ, আয়ারল্যা-ে ৪৩.৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। পর্তুগালে ৩৯.২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশ সেখানে নির্বাচন প্রতিহতের কোন ঘোষণা ছিল না। কিন্তু আমাদের দেশে কিভাবে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা হয় তা সবাই জানেন। কিন্তু এর পরেও যে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে তাকে ‘ফেসটিভ ইলেকশন’ বলা চলে। যদিও জানুয়ারীর ৫ তারিখ পর্যন্ত আগুন দিয়ে ট্রেনে একটি শিশুসহ পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তা না হলে নির্বাচনে আরো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়তো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের পরে যে অপশক্তি নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা উম্মুখ হয়ে বসেছিল বিশ্ববাসী এ নির্বাচন নিয়ে কী বলে। কিন্তু বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে টানা চার বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তখন তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, বিশে^র বহু দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে, আরো ৩২টি সংস্থা- জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কমিশন, বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীরতর করার কথা বলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বে র যেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান সেখানেই তিনি ‘সেন্টার অব এট্র্যাকশন’ হন। গাজায় নির্বিচারে যে গণহত্যা হচ্ছে তা নিয়ে বি্বে নেতারা যখন নিশ্চুপ, নির্বিকার, সেখানে এ গণহত্যার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে গণহত্যা বন্ধ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকে গাজায় গণহত্যা হচ্ছে, সেখানে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর বেশীভাগই নারী ও শিশু। আর পৃথিবী অসহায় হয়ে তাকিয়ে রয়েছে বা নীরব থাকছে। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই নিরব থাকছে। যা অপরাধকে সমর্থন জানানোর সামিল। কিন্তু জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি জেলেনেস্কিকে যুদ্ধ বন্ধের পথ বের করার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার সময় তিনি ঘরের দুয়ার শুধু নয়, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিলেন। এখান রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নেয়। এটা আমাদের মত ঘনবসতীপূর্ণ দেশে সমস্যার কারণ। এ জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় বসে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
গত ১৫ বছরে এদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিশে^ উদাহরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সূচকে ১২৩ থেকে উন্নীত হয়ে ১১৬ তম দেশে উন্নীত হয়েছি আমরা। বাংলাদেশ এখন জিডিপিতে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ, আর পিপিপিতে ৩১ তম দেশ। বিভিন্ন সূচক বলছে যে, ২০৩৭ সালে বাংলাদেশ হবে ২০তম অর্থনীতির দেশ। আইএমএফ’র হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশ পিছনে ফেলেছে। অর্থনৈতিক সূচক, সামাজিক সূচকসহ সব ধরনের সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পিছনে ফেলেছি। আজ পাকিস্তান আমাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস-হাহুতাশ করে। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানের দেশ রচনার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার স্বার্থকতা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার, আজকে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। আজকে গ্রাম শহর হয়ে গেছে। আয়তনের দিক থেকে বিশে^ আমরা ৯২তম দেশ। কিন্তু ধান উৎপাদনে আমরা ৩য়, মাছ উৎপাদনে ৪র্থ, ইলিশ উৎপাদনে বিশে^ প্রথম। এটি এমনিই হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। জে-ার গ্যাপে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ৫ম। ব্লুমবার্গের রিপোর্টে আমাদের অবস্থান বিশ্বে ২০তম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ পরিচালনায় দেশ আজ উন্নতির দিকে অগ্রসরমান। বিশে^ বাংলাদেশ আজ বিষ্ময়। তবে যারা দেশকে ভালবাসে না, যারা এ নির্বাচন চায়নি, বর্জন ও প্রতিহতের চেষ্টা করেছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে ও দক্ষতায় দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র অপশক্তি আজ পরাজিত। আজ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এগিয়ে চলেছেন। দেশ অচিরে উন্নত সমৃৃদ্ধ দেশে রূপ নেবে।
জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৭ জানুয়ারি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে আমার এলাকায় উৎসব মুখর ভোট হয়েছে। ভোট বর্জনের জন্য অনেকে চক্রান্ত করলেও তা সফল হয়নি। এসময় তিনি বলেন, এলাকায় রাস্তা ঘাট ও পানি নিস্কাশন সমস্যা রয়েছে এগুলো সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে চিনি সিন্ডিকেট, এটা ভাঙতে হবে। যারা ইমপোর্ট করে তাদের মনিটরিং করতে হবে। তারা কোথায় কত দামে বিক্রি করলো তা খুঁজে বের করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, এইচ এম ইব্রাহীম, এম আব্দুল লতিফ, একরামুল করিম চৌধুরী, মকবুল হোসেন, খান আহমেদ শুভ, জাহিদ আহসান রাসেল ও সোলায়মান সেলিম। জাসদের সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এবং স্বতন্ত্র সদস্য আব্দুল মজিদ, আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক ও কামরুল আরেফিন।
নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের গ্রেফতারে সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
সংস্থাটি বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ জানায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।
সংস্থাটির মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এইচআরডব্লিউ বলেছে, গত আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
এইচআরডব্লিউ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১২ মে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আওতায় দলীয় সভা, সমাবেশ, প্রকাশনা, এমনকি অনলাইন বক্তব্যও নিষিদ্ধ করা হয়।
সংস্থাটির দাবি, আইন ব্যবহার করে সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মী ও বিরোধীদের দমন করছে, যা শেখ হাসিনার আমলের দমননীতিরই পুনরাবৃত্তি।
এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয় যা শেখ হাসিনার সরকারের সময়ের মতোই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠায় বা মতপ্রকাশে বাধা দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে দেশে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাদের উচিত হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতারের ঘটনাগুলোর ওপর তাত্ক্ষণিক নজরদারি ও হস্তক্ষেপ করা।’
বিবৃতিতে ঢাকার সাম্প্রতিক একটি ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক আলোচনাসভা থেকে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। সভাটিতে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাবেক রাজনীতিকরা অংশ নিয়েছিলেন।
সেখানে হঠাৎ একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ঢুকে উপস্থিতদের ঘিরে ফেলে এবং দুর্ব্যবহার শুরু করে। পরে পুলিশ এসে বিশৃঙ্খলাকারীদের না ধরে বরং আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদেরই আটক করে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
প্রথমে পুলিশ জানিয়েছিল, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আটক করা হয়েছে। কিন্তু পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই মামলায় পরবর্তীতে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ— তারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, জামিন শুনানির সময় মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। এমনকি আদালত প্রাঙ্গণে অন্য এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আটক ব্যক্তিদের পরিবার বলছে, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানও ছিল না, কেবল একটি আলোচনা সভা। তাহলে কীভাবে এটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলা যায়?’
সংস্থার দাবি, আটক ব্যক্তিদের অনেকেই পুলিশ হেফাজতে দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন এবং চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে শেখ হাসিনার শাসনামলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে তারা।
বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, সরকার রক্ষণশীল মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকেও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। এ গোষ্ঠীগুলো তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের সময় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলায় অন্তত ১৫২ জন নিহত হয়েছেন।
এক রাজনৈতিক কর্মী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘আমরা এখন হয় সন্ত্রাসী হিসেবে কারাগারে, নয়তো উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে নিহত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি। বিচার হওয়া জরুরি, কিন্তু তা হতে হবে নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে— যা দিতে ইউনূস সরকার ব্যর্থ।’
গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় বাংলাদেশের সঙ্গে তিন বছরের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার উদ্দেশ্য মানবাধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি। মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেন, ‘এই মিশন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করবে।’
অন্যদিকে সম্পাদক পরিষদও সতর্ক করেছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধিত ধারা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধ করা। এই আইন এখন দমন-পীড়নের সমার্থক হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত হবে নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া।’
ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন আহমদ রফিক। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বিকল হওয়া, পারকিনসন্স, আলঝেইমার্সসহ একাধিক শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১২ সেপ্টেম্বর তিনি কাটান তাঁর ৯৭তম জন্মদিন। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন না বেছে নিয়ে তিনি মনোনিবেশ করেন লেখালেখি, গবেষণা ও সংস্কৃতি চর্চায়।
ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিল-সভা সমাবেশে ছিলেন নিয়মিত। আন্দোলনকে ঘিরে ১৯৫৪ সালে তাঁর নামে একমাত্র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে।
আহমদ রফিকের প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ শিল্প সংস্কৃতি জীবন প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। এরপর একে একে প্রকাশ করেন শতাধিক গ্রন্থ। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ, ভাষা আন্দোলন ও সংস্কৃতি গবেষণা। দুই বাংলায় তিনি রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবে সমধিক পরিচিতি পান।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য উপাধিসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে এক আলোকবর্তিকা।
স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। নিঃসন্তান এই ভাষাসংগ্রামী রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বাংলার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভুবনে তাঁর অবদান অনন্য ও অনির্বচনীয়।