যথাযোগ্য মর্যাদায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির শুরুতে সকাল ৯:৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পম্ভবক অর্পণ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন ১৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, শিক্ষকমন্ডলী, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘একটা সময় ছিলো যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখাই ছিলো সামাজিক স্বীকৃতি বা মর্যাদার প্রতীক। সেই জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের শিখিয়েছিলেন যে বাঙালিত্ব একটা শক্তিশালী বিষয়, এটি একটি আত্মবিশ্বাসের জায়গা। বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব না হলে যে বাঙালি জাতি নিয়ে আমরা কথা বলছি যে জাতি কোথায় থাকত, কী করত, আমরা জানি না। বঙ্গবন্ধু না থাকলে আমাদের আজকের যে মর্যাদা, যে অর্জন, যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তার ধারে কাছেও যেতে পারতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রায় সহস্রাধিক জাতি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কিন্তু নিজস্ব রাষ্ট্র নেই। সেখানে বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। তাই একথা বলাই যায় যে, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ পরস্পরের সমার্থক।’
রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ১৭ মার্চ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত) ড. হেনা রানী বিশ্বাস। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন তানভীর কায়ছার, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট আরিফ হোসেন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টায় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও তার পুরষ্কার বিতরণী।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে দুপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া এবং মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে বিকাল ৩:৩০টায় হলের প্রাধ্যক্ষ মোঃ আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অবশেষে ঘোষণা করা হলো ফলাফল। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল জানায়।
এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ৩ হাজার ৯৩০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা।
তবে নির্বাচনের ফলাফলের চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ভোট গণনার দীর্ঘ সময়। এবার জাকসুর মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৬টি ভোট কাস্ট হয়, যা মোট ভোটের ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এত কম ভোট গণনায় কেনো প্রায় দুই দিন লেগে গেল—এ নিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর মেশিনে ফল না করে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা করতে হয়েছে। এতে সময় বেশি লেগেছে। জাকসু নির্বাচনকে নিরপেক্ষ রাখতে সব পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছি আমরা।’
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা আসলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফলাফল দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুটি সংগঠন থেকে লিখিতভাবে ম্যানুয়াল গণনার আবেদন আসে। তাই হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নানা মাধ্যমে নানা অভিযোগ উঠলেও ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি, কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।’
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ভোট গণনার দায়িত্বরত জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষকের মৃত্যুও পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে নবাব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মীর মৃত্যুতে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। যদি কাউন্টিং হাতে করাতেই হয়, তাহলে মেশিন কেন আনা হলো? আগে বললেই তো হলেই করানো যেত।’
ভোটে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জন করে। তাদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী অভিযোগ করেন, ‘আমরা ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন চাইছিলাম। অথচ ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে মনিটরিংয়ের জন্য যে ক্যামেরা ও সিসিটিভি আনা হয়েছে তা জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকে। এমনকি ওএমআর মেশিনও সেখান থেকেই আনা হয়েছে, যাতে শিবিরের প্যানেলকে সুবিধা দেয়া যায়।’
অন্যদিকে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ওএমআর মেশিন যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে তার রাজনৈতিক পরিচয় আসলে বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের। ছাত্রদল সমর্থিতদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এরপর সম্প্রীতির ঐক্য ও সংশপ্তক পর্ষদসহ আরো চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান দায়িত্ব ছাড়েন। জানা গেছে, তাঁরা বিএনপিপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারও পদত্যাগ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়া বারবার স্থগিত হয়। শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন অতিরিক্ত জনবল দিয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হল ইউনিয়নের জন্য একটি ব্যালট পেপার আর কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার ছিল। প্রার্থী সংখ্যা ১৭৭ জন। সব মিলিয়ে হাতে গোনা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছিল।’
ফলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা দেরির পর অবশেষে জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে তিন দিন আগে, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, আজ দুপুর নাগাদ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী জানান, ইতোমধ্যে ১৫টি হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। বাকি হলগুলোর গণনা বেলা ১টার মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
ভোট গণনায় ব্যবহৃত ওএমআর মেশিন নিয়ে কয়েকটি প্যানেলের আপত্তি থাকায় এবার হাতে টালি দিয়ে ফল গণনা করা হচ্ছে। এতে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুক্রবার রাতেই ফলাফল প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সীমিত লোকবল এবং হাতে গণনার কারণে সময় লাগছে। লোকবল বাড়িয়ে দ্রুত কাজ করার চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, হাতে টালি দিয়ে গণনা করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়, কারণ প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে এতে সময় অনেক বেশি লাগছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৭৭ জন।
গণনা প্রক্রিয়ার জটিলতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার। প্রায় ৮ হাজার ভোট পড়লে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদেই ২৪ হাজার কাউন্ট করতে হয়। তিন দিনেও শেষ করা মুশকিল।’
তৃতীয় দিনেও ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে। ফল ঘোষণার অপেক্ষায় এখন পুরো ক্যাম্পাস।