কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঈদের পরেই হবে। আমরা আশাবাদি প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি হিসেবে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে ছাত্রলীগ।
তিনি আরও জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাতে গড়া সংগঠন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান কান্ডারি হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ তথ্য জানান।
এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বিগত দিনগুলোতে। যেখানে ছাত্রলীগ পরিচয়ে রাজনীতি করা কর্মীদের নাম এসেছে। একাধিক গ্রুপিং তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ’৭১-এর চেতনা’ সংগঠনটির সভাপতি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি দরকার। কারণ, একটি সংগঠনের শৃঙ্খলার জন্য বা চেইন অব কমান্ড রক্ষার্থে সাংগঠনিক পরিচয় থাকাটা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠন উপস্থিতি থাকা ও সাংগঠনিক পরিচয় থাকার ব্যাপারে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক।তিনি বলেন,অবশ্যই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি থাকা জরুরি।প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রদের অবদান রয়েছে।তবে আগে যেভাবে ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের জন্য কাজ করেছে তা এখন হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঠেকাতে ও ছাত্রসংগঠনের শৃঙ্খলার জন্য হলেও ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে। এজন্য ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।সাংগঠনিক রুপ দিলে তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তারা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে আসছে। বিভিন্ন জাতীয় ও সাংগঠনিক প্রোগ্রামে তারা অংশগ্রহণ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে। অচিরেই কমিটি দিলে একই পতাকার ছায়াতলে কাজ করে যাবেন বলে জানান তারা।
প্রসঙ্গত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করলেও নেই ছাত্রলীগের কমিটি। তবে ছাত্রলীগের ব্যানারে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয় নিচ্ছেন তারা। অনেক সময় দেখা যায়, খণ্ড খণ্ড অংশ আলাদা করে প্রোগ্রাম করতে। কমিটি হবে এমন গ্রিন সিগন্যাল পেলে একসাথে কাজ করতে দেখা গেছে তাদের।ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক সাংগঠনিক ইউনিট হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি পেয়েছে অনেক আগে থেকেই। অথচ এখনও ছাত্রলীগ কমিটির মুখ দেখেনি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১৯ সালের ১৭ জুন ববিতে সংক্ষিপ্ত এক সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১১১তম সাংগঠনিক ইউনিট হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন সময়ে এমন আশার বাণী শুনলেও গঠন হয়নি কমিটি।
কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে কমিটি গঠনের কথা। গঠন করা হবে রোজার ঈদের পরেই।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় চার মাস পর, বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে টেলিফোনে বক্তব্য দেবেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। এর আগে ইউরোপের দুটি দেশে একইভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
ফোনালাপ ফাঁসের পর জন জনসম্মুখে বক্তব্যের গুরুত্ব
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল। যদিও সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে ফোনালাপে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া শোনা গেছে। এসব ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডগুলোকে বাদ দিলে, ৫ আগস্টের পর এবারই আগাম জানান দিয়ে শেখ হাসিনা জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের মাঝে শেখ হাসিনার সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি তার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। তবে খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনীতিতে সক্রিয়। নতুন করে ফিরে আসার কিছু নেই।’
নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে এবং তার ও তার বোন শেখ রেহানাকে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যা বলছেন, তা দেশের স্বার্থে বলছেন। দেশকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করা আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা
এদিকে শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যও নিষিদ্ধ ছিল, যদিও চলতি বছরের আগস্টে হাইকোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বাক স্বাধীনতা হরণ’ বলে সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রাজনীতি বিশ্লেষক, লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ‘ফাঁকা আওয়াজ’ এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনা বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিদ্বেষমূলক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মন্তব্য করেছেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার দল রাজনৈতিক নৈতিকতা হারিয়েছে, আর তাদের এসব বক্তব্য বিভ্রান্তিকর।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ভারতের রচনা করা চিত্রনাট্যের অংশ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এক্সিস্টিং পলটিক্যাল পার্টির জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হবে তখন, যখন তারা কাউন্টার করতে না পারে। এটি নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার ওপরে। তারা যদি সক্ষম হতে পারে, তাহলে তারা কাউন্টার প্রোপাগান্ডা দিয়ে ওটা সামাল দিবে। তাদের যদি সেই সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তারা কিসের রাজনীতি করে? আমার কথা হল, আওয়ামী লীগ বিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরও নাকি বিদেশে শাখা আছে। এখন তারা কী কাউন্টার প্রোপ্যাগান্ডা করছে, তা আমরা দেখতে চাই। সব তো এক তরফা হওয়ার কথা না।’
শেখ হাসিনার বিদেশে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার রাজনৈতিক অবস্থান, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
সূত্র : বিবিসি
শিক্ষার্থীদের সংঘাত ও অপ্রাসঙ্গিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসংক্রান্ত নয় এমন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে।
এ পরিস্থিতি এড়াতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী রাখার জন্য বিভিন্ন কো-কারিকুলার কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ৯টি কার্যক্রমের একটি নমুনা তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ৯টি কার্যক্রম :
১. আঙিনা পরিচ্ছন্নতা অভিযান : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ।
২. বিজয়ের ৩৬ জুলাই ভিত্তিক গ্রাফিতি : নির্বাচিত গ্রাফিতি নিয়ে সফট অ্যালবাম তৈরি এবং শ্রেষ্ঠ গ্রাফিতি পুরস্কার প্রদান।
৩. থিম সং পরিবেশনা : ‘ক্রান্তিকালে তারুণ্য দুর্জয়’ থিমে গান তৈরি, পরিবেশনা, সফট অ্যালবাম তৈরি ও প্রতিযোগিতার আয়োজন।
৪. পারসোনাল হাইজিন প্রশিক্ষণ : গার্লস স্কুল ও কলেজে মেয়েদের জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
৫. জাতীয় দিবসে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ : বিএনসিসি, স্কাউট ও রোভার স্কাউটের সহায়তায় কুচকাওয়াজের আয়োজন।
৬. প্রকৃতি দর্শন : শিক্ষার্থীদের জন্য নিকটবর্তী নান্দনিক স্থান যেমন নদীতীর, চর, উপকূল বা পাহাড় ভ্রমণের আয়োজন।
৭. ক্রীড়া প্রতিযোগিতা : ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন।
৮. জেন-জি উদ্যোক্তা বিতর্ক প্রতিযোগিতা : তরুণ উদ্যোক্তা কর্মী তৈরির লক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
৯. জুলাই বিপ্লব বিষয়ক আলোচনা সভা : ‘জুলাই বিপ্লব কী, কেন, কিভাবে’ বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের আলোচনার আয়োজন।
অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম ও কো-কারিকুলার কার্যক্রমকে জোরদার করতে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করবে এবং শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে।