সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার লড়াইয়ে অংশ নিতে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন দেশের ৩৯ জন উপজেলা চেয়ারম্যান। এই দৌড়ে অংশ নিতে পদত্যাগ করেছেন ২ জন জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান ও ১ জন জেলাপরিষদের সদস্য। আগামীকালের মধ্যে এই তালিকা আরও লম্বা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ঢাকা বিভাগ থেকে ৮ জন, রাজশাহী বিভাগ থেকে ৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ৫ জন, সিলেট বিভাগের ২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জন, খুলনা বিভাগের ৩ জন, রংপুর বিভাগের ৩ জন ও বরিশাল বিভাগের একজন। এছাড়া রংপুর বিভাগ থেকে ২ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং খুলনা বিভাগ থেকে একজন জেলা পরিষদের সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলাপরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বেশ কিছু পদত্যাগ পত্র জমা হয়েছে। এসব পদত্যাগপত্র সরাসরি, ডিসির মাধ্যমে, মেইলে এবং প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমা হয়েছে। আবেদনপত্রগুলো পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্ধশত উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ পত্র জমা দেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে জমা দিয়েছেন; কয়েকদিনের মধ্যে আরও অনেকে জমা দেবেন। পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যানরা সবাই এমপি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের পদত্যাগকরা উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মো. ইউনুস ইসলাম তালুকদার, ঢাকার ধামরাইয়ের মো. মোহাদ্দেছ হোসেন, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের মো. নাসিরুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মো. ইমদাদুল হক বিশ্বাস, মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মুশফিকুর রহমান খান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মহিউদ্দিন আহমেদ।
আর রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মো. নুরুল ইসলাম (সাজেদুল), বগুড়ার শেরপুরের আলহাজ্ব মজিবুর রহমান মজনু, বগুড়ার আদমদীঘির আলহাজ্ব মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, পাবনার চাটমোহরের মো. আব্দুল হামিদ। ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনার দুর্গাপুরের জান্নাতুল ফেরদৌস, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. আব্দুল হাই আকন্দ, শেরপুরের শ্রীবরদীর এডিএম শহিদুল ইসলাম, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর এস.এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ লাইম, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মাহমুদ হাসান সুমন।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের শাল্লার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার এ. কে. এম সফি আহমদ (সলমান)।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আবদুল মোতালেব, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের গাজী মাঈনুদ্দিন, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মো. আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া, কক্সবাজার মহেশখালীর মোহাম্মদ শরীফ বাদশা, চট্টগ্রামের পটিয়ার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরের ফিরোজুর রহমান, কক্সবাজারের রামুর সোহেল সরওয়ার কাজল, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী। খুলনা বিভাগের মেহেরপুর সদরের মো. ইয়ারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা শ্যামনগরের এস এম আতাউল হক। রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর জেলার মিঠাপুকুরের মো. জাকির হোসেন সরকার, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. মোখছেদুল মোমিন, গাইবান্ধা সদরের শাহ সারোয়ার কবীর।
বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জের মোহাম্মদ শামসূল আলম।
এছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান। আর খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোর জেলা পরিষদের সদস্য মো. আজিজুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।
আজ ১৪ ডিসেম্বর, শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শনিবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আগামীকাল বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণী প্রদান করেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালোপতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় বিএনপির জাতীয় নেতৃত্বসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আকাশে যে মেঘ তৈরি হয়েছে, তা পরিষ্কার করতে ভারত আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজওয়ানা বলেন, বৈঠকে ভারতীয় সচিব উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আকাশে যে মেঘ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের অপপ্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দাবি করেছেন যে ভারত সরকার এই অপপ্রচারের জন্য দায়ী নয় এবং অপপ্রচারও চালাচ্ছে না। ভারতীয় পক্ষের দাবি, তাদের সরকার প্রচারের মালিক নয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, বিক্রম মিশ্রি আশ্বস্ত করেছেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসার সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রিজওয়ানা বলেন, ভারত বাংলাদেশসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক।
তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারত থেকে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সে বিষয়ে ঢাকা ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছে স্পষ্টভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।