বিপিএলের দশম আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শক্তিশালী ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে লিটন বাহিনী।
মঙ্গলবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় কুমিল্লা। ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন-হৃদয়দের ১৬২ রানের লক্ষ্য দেয় তামিম-রিয়াদরা। জবাব দিতে নেমে ১ বল ও চার উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
১৬২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। ১৫ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আরেক ওপেনার লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ১৩ রান। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া তাওহিদ হৃদয় ফিরেছেন ডাক খেয়ে।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দলের হাল ধরেন ইমরুল কায়েস। এক প্রান্তে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মধ্যেও আরেক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪১ বলে ৫২ রান করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। শেষদিকে দ্রুত রান তোলে জয়ের সমীকরণ মিলিয়েছেন খুশদিল শাহ ও ম্যাথু ফ্রড।
এর আগে বরিশালের হয়ে এদিন ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজ। এই তরুণ ওপেনার গোল্ডেন ডাক খেয়ে ফিরেছেন ইনিংসের প্রথম ওভারেই। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি প্রীতম কুমারও।
তামিম ইকবাল ভালো শুরু পেয়ে আরো একবার ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফিরেছেন ১৯ রান করে। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মুশফিক ও সৌম্য। এই দুজনের ৬৬ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে ছিল দল।
৪২ রান করে সোম্য ফেরার পর আবার ছন্দ পতন হয়। মুশফিকও ফেরেন ৬২ রান করে। এরপর আর কেউ বলার মতো কোনো রান করতে পারেননি। ফলে ১৬১ রান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বরিশালকে।
হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
সিলভিয়া শুরু করেছিলেন মূলত দেশীয় জুয়েলারি নিয়ে। তবে, পরবর্তীতে তিনি দেশীয় জুয়েলারির পাশাপাশি কিছু ভারতীয় জুয়েলারি এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা লেডিস ব্যাগও তার পণ্য পরিসরে যুক্ত করেন।
তিনি মনে করেন, প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে সঠিক ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করা উচিত। যে কাজটি তাকে আনন্দ দেবে, যেটি তার নিজস্ব পরিচয় দেবে এবং তার সম্মান বাড়াবে, এমন কাজই তার বেছে নেওয়া উচিত। প্রত্যেকেই চায় নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছেন সিলভিয়া।
বাবা-মায়ের সবচেয়ে ছোটমেয়ে হিসেবে একটু বেশি আদর পেয়েছেন সিলভিয়া। ছোটবেলা থেকেই যা চেয়েছেন, তা তিনি পেয়েছেন। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো ছিলেন। সেই সঙ্গে শখের বশে কিছু টিউশনি করতেন। তবে, ছোটবেলা থেকে তার ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন কোনো স্বপ্ন ছিল না। আরও অনেকের মতো কোনো নির্দিষ্ট চাকরির দিকে ঝোঁক ছিল না। বরং তিনি চেয়েছিলেন এমন কিছু একটা করতে, যা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
২০১৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর, সিলভিয়া ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার জন্য পণ্য নির্বাচন করা ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি মনে করেন, ব্যবসা এমন পণ্য নিয়ে করা উচিত যার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে এবং বাজারে তার চাহিদা বেশি থাকে। একদিন হঠাৎ তার মাথায় আসে জুয়েলারি নিয়ে কাজ করার ধারণা। তিনি জানতেন যে, এটি এমন একটি পণ্য, যার চাহিদা হাজার বছর আগেও ছিল এবং এখনও রয়েছে। নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতেও থাকবে।
সিলভিয়া জানান, তার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে তার মা, ভাই, বোন এবং স্বামী অনেক সহায়তা করেছেন। তারা আর্থিকভাবে তাকে সহায়তার পাশাপাশি কাজে সমর্থন দিয়েও পাশে থেকেছেন।
একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে, সিলভিয়া অনেক কিছু জানতেন না। ফলে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। শুরুতে তার মূলধন ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে কিছু জুয়েলারি সংগ্রহ করেন এবং সেগুলোর ছবি তুলে Pot Of Jewellery নামক তার অনলাইন পেইজে পোস্ট করেন। ধীরে ধীরে ভালো মানের পণ্য সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন এবং তার পেইজে মানুষদের আমন্ত্রণ জানান। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা তাকে সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি সিলভিয়া তার পেইজের প্রচারের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করতেন।
তবে, সিলভিয়া কাজের শুরুতে আরও এক সমস্যার সম্মুখীন হন। তা হলো একটি নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি কোম্পানি খুঁজে পাওয়া। অনেক খুঁজে, অনেক মানুষের সাথে কথা বলে, তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে একটি ডেলিভারি কোম্পানি খুঁজে পান। এখনও সেই কোম্পানির সঙ্গে তিনি কাজ করছেন এবং তাদের সার্ভিস ভালো বলে তিনি মনে করেন। ব্যবসার শুরুর সময়, তার অর্ডারের সংখ্যা কম ছিল। ফলে কখনো কখনো সপ্তাহে একটি পার্সেলও পাঠানো হতো না। তবে, তাদের ডেলিভারি কোম্পানি কম পার্সেল হলেও পিক-আপ করতো।
ব্যবসার শুরুর দিকে তার পণ্য বেশিরভাগই অনলাইনে বিক্রি হতো। তবে, হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি তার ব্যবসায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। লকডাউনের কারণে সবাই ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে যায়। ফলে তার সেল কিছুটা কমতে থাকে। সিলভিয়া তখন ছোট পরিসরে পণ্য স্টক করতেন। তাই কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। এছাড়া, কিছু ভুয়া কাস্টমারের কবলেও পড়েছিলেন। তবে, সিলভিয়া কখনোই হতাশ হননি। তার বিশ্বাস ছিল, জীবনযুদ্ধে যত বাঁধাই আসুক, তার লক্ষ্য থেকে সরে আসা যাবে না।
সিলভিয়া বিশ্বাস করেন, একজন সফল উদ্যোক্তার প্রধান গুণ হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তিনি তার প্রবল আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে কঠিন সময়েও সামনে এগিয়ে গেছেন।
আজকের তরুণ সমাজ অনেক মেধাবী, এবং তারা চাইলে নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে ভালো উদ্যোগ নিতে পারে। সিলভিয়া মনে করেন, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য সিলভিয়ার পরামর্শ, উদ্যোক্তা হতে হলে নতুন আইডিয়া আবিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি পরিশ্রম ও ঝুঁকি গ্রহণের সাহস এবং একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা জরুরি। তাকে মনে রাখতে হবে, উদ্যোক্তা হওয়া মানে নতুন নতুন সুযোগের সন্ধান করা এবং এগুলোর উপর কাজ করা। ব্যবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা ও কাস্টমার আকর্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সিলভিয়া অনলাইনে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে তিনি শীঘ্রই ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহরে শোরুম খুলে Pot Of Jewellery-কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছেন।