পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, নটরডেম কলেজের মতো আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট সোসাইটি গড়তে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক। আর ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে পারে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি, ২০২৪) নটরডেম কলেজের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, নটরডেম কলেজের মতো আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয় সমাজের নেতৃত্ব, দেশের নেতৃত্ব। আমাদের দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। সকলে মিলে একসাথে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক কল্যাণময় রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি ৭৫ বছর ধরে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজন। নটরডেম কলেজ এরকম দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মন্ত্রী নটরডেম কলেজের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও, কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অবশেষে ঘোষণা করা হলো ফলাফল। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল জানায়।
এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ৩ হাজার ৯৩০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা।
তবে নির্বাচনের ফলাফলের চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ভোট গণনার দীর্ঘ সময়। এবার জাকসুর মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৬টি ভোট কাস্ট হয়, যা মোট ভোটের ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এত কম ভোট গণনায় কেনো প্রায় দুই দিন লেগে গেল—এ নিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর মেশিনে ফল না করে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা করতে হয়েছে। এতে সময় বেশি লেগেছে। জাকসু নির্বাচনকে নিরপেক্ষ রাখতে সব পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছি আমরা।’
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা আসলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফলাফল দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুটি সংগঠন থেকে লিখিতভাবে ম্যানুয়াল গণনার আবেদন আসে। তাই হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নানা মাধ্যমে নানা অভিযোগ উঠলেও ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি, কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।’
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ভোট গণনার দায়িত্বরত জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষকের মৃত্যুও পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে নবাব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মীর মৃত্যুতে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। যদি কাউন্টিং হাতে করাতেই হয়, তাহলে মেশিন কেন আনা হলো? আগে বললেই তো হলেই করানো যেত।’
ভোটে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জন করে। তাদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী অভিযোগ করেন, ‘আমরা ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন চাইছিলাম। অথচ ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে মনিটরিংয়ের জন্য যে ক্যামেরা ও সিসিটিভি আনা হয়েছে তা জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকে। এমনকি ওএমআর মেশিনও সেখান থেকেই আনা হয়েছে, যাতে শিবিরের প্যানেলকে সুবিধা দেয়া যায়।’
অন্যদিকে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ওএমআর মেশিন যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে তার রাজনৈতিক পরিচয় আসলে বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের। ছাত্রদল সমর্থিতদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এরপর সম্প্রীতির ঐক্য ও সংশপ্তক পর্ষদসহ আরো চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান দায়িত্ব ছাড়েন। জানা গেছে, তাঁরা বিএনপিপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারও পদত্যাগ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়া বারবার স্থগিত হয়। শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন অতিরিক্ত জনবল দিয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হল ইউনিয়নের জন্য একটি ব্যালট পেপার আর কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার ছিল। প্রার্থী সংখ্যা ১৭৭ জন। সব মিলিয়ে হাতে গোনা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছিল।’
ফলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা দেরির পর অবশেষে জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে তিন দিন আগে, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, আজ দুপুর নাগাদ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী জানান, ইতোমধ্যে ১৫টি হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। বাকি হলগুলোর গণনা বেলা ১টার মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
ভোট গণনায় ব্যবহৃত ওএমআর মেশিন নিয়ে কয়েকটি প্যানেলের আপত্তি থাকায় এবার হাতে টালি দিয়ে ফল গণনা করা হচ্ছে। এতে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুক্রবার রাতেই ফলাফল প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সীমিত লোকবল এবং হাতে গণনার কারণে সময় লাগছে। লোকবল বাড়িয়ে দ্রুত কাজ করার চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, হাতে টালি দিয়ে গণনা করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়, কারণ প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে এতে সময় অনেক বেশি লাগছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৭৭ জন।
গণনা প্রক্রিয়ার জটিলতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার। প্রায় ৮ হাজার ভোট পড়লে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদেই ২৪ হাজার কাউন্ট করতে হয়। তিন দিনেও শেষ করা মুশকিল।’
তৃতীয় দিনেও ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে। ফল ঘোষণার অপেক্ষায় এখন পুরো ক্যাম্পাস।