অর্থ ও বাণিজ্য

অর্থ ও বাণিজ্য

আমার দেশকে বিশ্বের কাছে সৃজনশীল হিসেবে পরিচিতি করাতে চাই : মাহবুবা করিম

দেশের বড় অংশের মানুষ যখন নিজের দেশের পণ্যে আস্থা না রেখে বিদেশী পণ্যকেই মানসম্পন্ন মনে করে সেদিকে ঝোঁকে তখন কিছু মানুষ নিজের দেশের পণ্যকে নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পণ্য যে গুণে মানে এবং নান্দনিকতায় অনেক এগিয়ে, এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের ঘরে ঘরে। দেশের পণ্য ব্যবহার করলে দেশ এগিয়ে যায়, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, এই দায় নিয়ে কাজ করছেন অনেক মানুষ। মাহবুবা করিম এমনই একজন উদ্যোক্তা যিনি গ্রাহকের চাহিদা পূরণে দেশী পণ্যে নান্দনিক হ্যান্ডপেইন্ট এবং উডব্লক নকশা করে পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের ঘর পর্যন্ত।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতু কথা বলেছেন মাহবুবা করিমের সাথে। তার উদ্যোগ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা ইত্যাদি নানান বিষয়ে কথা বলেছেন তারা।

উদ্যোক্তাদের জীবন, কর্ম ও ভাবনা নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে পাঠকের জন্য আজ থাকছে রোজকার খবরের সাথে সফল উদ্যোক্তা মাহবুবার আলাপচারিতার প্রধান প্রধান অংশ।

রোজকার খবর : আপনার উদ্যোগ বিষয়ে বলুন।

মাহবুবা : আমার উদ্যোগের নাম Paint by Fozi. শুরুটা অনলাইনে হলেও বর্তমানে মোহাম্মদপুরে আমার একটি আউটলেট আছে। আমার উদ্যোগের কাজের বিষয় দেশীয় পণ্য নিয়ে। মাধ্যম হ্যান্ডপেইন্ট ও উডব্লক। শুরুর দিকে সব কাজ আমি নিজে করলেও পণ্যের বিভিন্নতা ও চাহিদা বাড়ায় এখন কিছু কাজ কর্মী দিয়ে করিয়ে থাকি।

রোজকার খবর : কেনো আপনি উদ্যোক্তা হলেন?

মাহবুবা : ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজে একটা কিছু করব। আর সেটা অবশ্যই সৃষ্টিশীল কিছু। বড় হয়ে মনে হলো উদ্যোক্তা কথাটা খুব যায় আমার চাওয়ার সাথে। তাছাড়া আমার এই কাজ দিয়ে আমি নিজে যেমন সাবলম্বী হতে পারি, অন্যদেরকেও সাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতে পারব। এই ভাবনাগুলো থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।

রোজকার খবর : ছোটবেলা থেকে আপনার নির্দিষ্টভাবে কি কিছু হওয়ার করার ইচ্ছা ছিল? সে ইচ্ছা কি পূরণ হয়েছে?

মাহবুবা : ছোটবেলা থেকে যেটাই হতে চেয়েছিলাম তার পিছনে দুটো জিনিস কাজ করত। এক ভালোবাসা, দুই চ্যালেঞ্জিং ও সৃজনশীল কিছু করা। সে ইচ্ছে শতভাগ পূর্ণ হয়েছে। কারণ উদ্যোক্তা শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এসব কিছুই আমরা পাই।

রোজকার খবর : আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে পারিবারিক সমর্থন এবং সহযোগিতা কেমন ছিল?

মাহবুবা : একদম ছিল না। আর এই বাধাগুলোই আমি অনুপ্রেরণা ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তি হিসেবে নিয়েছি‌।

রোজকার খবর : উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল? সেসব মোকাবেলা করেছেন কিভাবে?

মাহবুবা : উদ্যোক্তা জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা মাস গেলে কোন নির্দিষ্ট অংক এখানে আশা করা যায় না। তারপর আরও যে বিষয়গুলো আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং তা হলো- দেশীয় পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি এতটা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়নি আর বাজারটাও খুব সীমিত। পাশের দেশ ইন্ডিয়া এ জায়গায় আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। দেশীয় পণ্য কালেক্ট করা ও সুলভ মূল্যে দেওয়াটা তাই অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করলে এই অবস্থান থেকে ভালো কিছু করা সম্ভব। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করছি সমমনা কিছু সহযোগী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এক হয়ে কাজ করতে।

রোজকার খবর : আজকে আপনি যতটা সফল এর পেছনে ব্যর্থতার গল্প আছে কি? থাকলে সেসব জানতে চাই। ব্যর্থতাগুলো থেকে আপনার উপলব্ধি বা শিক্ষা কী ছিল? কিভাবে সেই ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে আজকের সফলতায় পৌঁছেছেন।

মাহবুবা : আমি মনে করি, Failure is the key to success. অবশ্যই জীবনে ব্যর্থতা আসে, আবার সফলতাও আসে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। উদ্যোগ শুরু করলে বা যেকোন কাজেই এটি ধ্রুব সত্য। তাই ব্যর্থতা আসলে যত দ্রুত সম্ভব তার কারণ খুঁজে সমাধানের পথে হাঁটাই একজন সফল, সুখী ও বুদ্ধিমান মানুষের কাজ বলে আমি মনে করি।

রোজকার খবর : পড়াশোনা করে চাকরি খোঁজা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে আপনি কতটা উৎসাহিত করবেন বা করেন?

মাহবুবা : চাকরি খোঁজার জন্য চেষ্টা করা তরুণদের আমি বলব, চাকরিতে মনোযোগী হতে এবং সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে। কারণ যে চাকরি করার মন-মানসিকতা রাখে সে কখনও উদ্যোক্তা হতে পারে না।

রোজকার খবর : নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কী কী বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করা উচিত? নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মাহবুবা : উদ্যোক্তা হতে হলে যত কম বয়স থেকে শুরু করা যায় ততই ভালো বলে আমি মনে করি। কোন কাজ শুরু করার আগে উচিত ঐ কাজটি নিয়ে যতটা সম্ভব জেনে-বুঝে তারপর আগানো। দক্ষ মানুষ অবশ্যই সফল হবে। তাই যদি মন থেকে এই উত্তর বার বার আসে যে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে আগে নিজেকে তৈরি করুন।

রোজকার খবর : আপনি উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে তো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আপনার এই উদ্যোগ বা কার্যক্রম দেশের বা সমাজের জন্য কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

মাহবুবা : আমি নিজে একজন গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হয়েছি। এর মাধ্যমে সমাজে একটি বিষয় আমি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি যে, চাইলে যে কেউ যে কোন অবস্থান থেকে সাবলম্বী হতে পারেন। নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে পারেন। আর আমার উদ্যোগের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যের আরও প্রচার ও নতুন গ্রাহক তৈরি হচ্ছে। মানুষ দেশীয় পণ্যকে নতুনভাবে দেখছেন। সেই সাথে কিছু মানুষের আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। আমি মনে করি, এভাবে সমাজে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমার উদ্যোগ কিছুটা হলেও পজিটিভ একটি পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারছে।

রোজকার খবর : নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যেতে চান? সে লক্ষ্যে আপনার পরিকল্পনা কী?

মাহবুবা : আমি মনে করি, মানুষ পরিবর্তনশীল। তাই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে ঢেলে সাজাতে অনেক কিছুই শিখতে হয়। আর এভাবেই কাজেও নতুন নতুন পরিকল্পনা যোগ হয়। তাই সময়ের সাথে সবসময়ই টিকে থাকতে চাই আর নিজ পণ্যকে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিচিত ও জনপ্রিয় করাই ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

রোজকার খবর : বাংলাদেশের জন্য কী করতে চান বা কিভাবে অবদান রাখতে চান?

মাহবুবা : আমার কাজ যেহেতু দেশীয় পণ্য নিয়ে, তাই এটিকে আন্তর্জাতিক একটা পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে দেশকে একটা সম্মান ও ভালোবাসার জায়গায় তুলে ধরাটাই আমার আশা ও ইচ্ছা। আমি আমার দেশকে বিশ্বের কাছে খুব সুন্দর ও নান্দনিক সৃজনশীল কিছু মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিতি করাতে চাই। আমি চাই আমার প্রতিটি কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানুষের কাছে ভালোলাগার একটা জায়গায় স্থাপন করতে। আমার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। আমার দেশের মানসম্মত কাপড় ও পণ্য বিশ্ব বাজারে একটা পাকাপোক্ত অবস্থান করে নিক।

রোজকার খবর : রোজকার খবরের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনার স্বপ্ন এবং উদ্যোগের সফলতার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখুন সেই কামনা করি।  ভালো থাকবেন।

মাহবুবা : আপনাকে সবশেষে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাকে নিজ উদ্যোগ ও ভাবনা নিয়ে বলার সুযোগ তৈরি করে দেবার জন্য।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

রাষ্ট্রদূতরা ঘুরে গেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে আম বাগান ঘুরে গেলেন, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্টদূতরা। রাষ্টদূতদের এ দেশের আম ও আম সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতেই এই ম্যাংগো ট্যুরের আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে দেশের আম রপ্তানী আরো গতি পাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশের দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে একটি আম বাগান পরিদর্শন করেন।

এসময় তাদের সাথে ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ এমপি, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোঃ বখতিয়ারসহ কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা।

এই ম্যাংগো ট্যুরের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ট্যুরিজম ও দেশের আম রপ্তানীতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম উদ্যোক্তরা।

পরবর্তী খবর

উদ্যোক্তাদের ‘দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ’ দিচ্ছে এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশ

এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের আয়োজনে রাজধানীর টিকাটুলীতে অবস্থিত এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার মিলনায়তনে শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্যে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ।

বুধবার (১২ জুন) সকালে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রথম ব্যাচে ২৫ জন উদ্যোক্তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিকর্ণ কুমার ঘোষ।

প্রধান অতিথি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে তাঁদের স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। তাঁদের স্বপ্ন ছিল একটা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহসীকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। উদ্যোক্তাদের সেই সাহস আছে। তাদের সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং প্রস্তুতি পারে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে। তিনি বলেন, যারা উদ্যোক্তা তারা ঝুঁকি নিতে জানে। ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া বড় পরিবর্তন সম্ভব না। তাই চাকরিজীবীদের দিয়ে যে অগ্রগতি সম্ভব না, উদ্যোক্তাদের দিয়ে তা সম্ভব। বিকর্ণ কুমার ঘোষ উদ্যোক্তাদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার প্রত্যয় ঘোষণা দেন।

প্রথম দিনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের মডারেটর ও ঢাকা জেলা এম্বাসাডর হোসাইন আল মামুন এবং টার্টেল ভেঞ্চারের মেহেনাজ জামান।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্যে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তারা নিয়মিত পরিচালনা করবেন। প্রথম ব্যাচে এবার বাছাইকৃত পঁচিশজন উদ্যোক্তাকে সুযোগ দিতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তাকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগ এবং লোন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সহজ করতে তারা কাজ করছেন।

এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের এই আয়োজনে পার্টনার হিসেবে রয়েছে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন, টার্টেল ভেঞ্চার এবং দ্রুত লোন। আগামীকাল প্রথম ব্যাচের এই প্রশিক্ষণ শেষ হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত