বিদেশ

বিদেশ

‘ইউক্রেনে প্রায় ২০০ বন্দর স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ 

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অবকাঠামো মন্ত্রী আলেকজান্ডর কুব্রাকভ বলেছেন, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে খাদ্য শস্য সরবরাহ চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের প্রায় ২০০ বন্দর অবকাঠামো সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তাসের।

মন্ত্রী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে ‘প্রায় ২০০ বন্দর অবকাঠামো বিভিন্ন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

মন্ত্রী আরও দাবি করেন যে তাদের দেশ ২০২৩ সালের আগস্টে আলোচনা সাপেক্ষে কৃষ্ণ সাগরে তৈরি ‘অস্থায়ী করিডোরের’ মাধ্যমে দুই কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি খাদ্য শস্য পারিবহন করেছে।

আগস্টে খাদ্য শস্য সরবরাহ চুক্তি শেষ হওয়ার পর ইউক্রেন শস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণ সাগরে ‘অস্থায়ী করিডোর’ তৈরির ঘোষণা দেয়। গত নভেম্বরের শেষের দিকে কিয়েভ ঘোষণা দেয় যে তাদের এ করিডোরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ লাখ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে যে ইউক্রেনের অস্থায়ী করিডোর আগের শস্য চুক্তি সরবরাহের প্রতিস্থাপন হতে পারে না।

ইউক্রেনের এ করিডোরের আওতায় এক মাসে মাত্র ৪০ লাখ টন খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

এছাড়া ইউক্রেন তাদের অস্থায়ী করিডোর দিয়ে খাদ্য বহির্ভূত পণ্য রপ্তানি করে থাকে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার মস্কোতে

রাজনৈতিক আশ্রয়ের খবর দিচ্ছে রুশ মিডিয়া

রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দামেস্ক থেকে পালিয়ে যাওয়া সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এখন মস্কোতে অবস্থান করছেন।

রাশিয়া আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিল। মি. আসাদ ও তার পরিবার সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, আসাদ সরকার নিজেই তাদের পতনের জন্য দায়ী।

‘দেশে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া না থাকা এবং রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনের ওপর নির্ভর করাটাই তার পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিলো,’ বলেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, একটি বর্বর রাষ্ট্রের পতন হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, সিরিয়ার জনগণ মারাত্মক দুর্ভোগ সহ্য করেছে এবং আসাদ সরকারের অবসান একটি দারুণ খবর।

তবে, উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসাদ সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠন করছিলো।

এখন ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বে সিরিয়ার ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তাদের কিছুটা নার্ভাস করে তুলেছে বলে মনে হচ্ছে।

বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন এবং সিরিয়ার ঐক্য সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

তুরস্কে প্রায় ৩০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী অবস্থান করছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, তারা এখন নিজেদের দেশে ফিরতে পারবে।

এদিকে, সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ সোমবারই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভা ডাকার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।

অন্য বিশ্বনেতারা যা বললেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আসাদের পতনের মুহূর্তকে ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া, ইরান কিংবা হেজবুল্লাহ কেউ তার সরকারকে রক্ষা করতে পারেনি।

তিনি বলেছেন, আসাদ চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ‘সিরিয়ার সব গোষ্ঠীর’ সাথে কাজ করবে।

ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে সরাসরি স্থলপথে যোগাযোগের সুযোগ হারিয়েছে। দেশটি বলেছে, সিরিয়ার মানুষকেই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে ‘কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক হস্তক্ষেপ বা বাইরে থেকে কিছু চাপিয়ে দেয়া ছাড়াই’।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাছি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিদ্রোহীরা যখন দামেস্কের দিকে যাচ্ছিলো তখন ইরান কোন হস্তক্ষেপের আহ্বান পায়নি।

“আমাদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়নি। এটা মূলত সিরিয়ান আর্মির দায়িত্ব। আমরা নিজেরা একে আমাদের দায়িত্ব মনে করিনি,” বলেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আসাদ সরকারের পতন মানে হলো প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এখন ইউক্রেনের সাথে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া উচিত।

সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। পেন্টাগনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবেন।

আরব আমিরাতের একজন সিনিয়র কূটনীতিক আনওয়ার গারগাশ সিরিয়ার সব গোষ্ঠী এখন একযোগে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের দূত গেইর পেডারসন একটি স্থিতিশীল ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নেতা আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি তার জিহাদি সময়ের নাম বাদ দিয়ে সত্যিকার নাম আহমেদ আল-শারা ব্যবহার শুরু করেছেন।

অফিসিয়াল যে ঘোষণাপত্র বৃহস্পতিবার থেকে আসাদ সরকারের পতন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে সেখানে তিনি প্রকৃত নামই ব্যবহার করেছেন।

একে নতুন পরিস্থিতিতে তার বৈধতাকে আরও জোরদার করার একটি উদ্যোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তার ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত আল-শামের নেতৃত্বেই আরও অন্য বিদ্রোহী দলগুলো দামেস্ক দখল করে সিরিয়ার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

গত কয়েকবছর ধরেই মি. জোলানির এই রূপান্তর সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করা হচ্ছিলো।

এক সময় তিনি শুধু জিহাদি জঙ্গিরা পরিধান করে এমন পোশাক পড়লেও গত কয়েক বছরে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও দেখা যাচ্ছে।

জোলানির দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিকভাবে আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো জিহাদি আন্দোলন কমে আসার একটি লক্ষণ হতে পারে।

তার গতিপথ অন্য গোষ্ঠীগুলোকেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে রাজনৈতিক ও ভূখণ্ডগত লাভের জন্য রাজনৈতিক নমনীয় জিহাদিবাদ কিংবা তাদের প্রচলিত পথ থেকে সাময়িকভাবে সরে আসার জন্য।

বিদ্রোহী নেতা জোলানি যা বললেন
দামেস্কের উমায়াদ মসজিদে বক্তব্য দিয়েছেন বিদ্রোহীদের নেতা আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি। তিনি এইচটিএস গ্রুপের নেতা ও প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন ‘এটা পুরো মুসলিম জাতির একটি জয়’ এবং ‘এ অঞ্চলের জন্য একটি নতুন অধ্যায়’।

সিরিয়ার দীর্ঘ সংঘাতে যারা জীবন দিয়েছেন জোলানি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

দেশটিতে ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো।

তিনি বলেন, আসাদ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও দুর্নীতিকে বিস্তৃত করেছিলেন।

মি. জোলানি বলেন, আসাদের অধীনে ‘সিরিয়া ইরানের উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের পরিত্যক্ত খেলার মাঠে পরিণত হয়েছিলো’।

“কিন্তু এখন সবাই মুক্তভাবে নি:শ্বাস নিতে পারছে,” বলেছেন তিনি।

জর্ডান ও লেবানন থেকে ফিরছে সিরিয়ানরা
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকেই লেবানন ও জর্ডানে থাকা সিরীয়দের অনেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

সেখানকার ছবিগুলোতে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে।

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে বার্তা সংস্থা এএফপির একজন সংবাদদাতা মাসনা ক্রসিংয়ে কয়েক ডজন গাড়ির লাইন দেখতে পেয়েছেন।

লোকজন উল্লাস করছিলো ও আসাদ বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলো।

জর্ডান থেকে আসার জাবের ক্রসিংয়ে এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “গত ১২ বছর আমি জর্ডানে ছিলাম। বাশার আল-আসাদের পতনের খবর শুনে আমরা আবেগাপ্লুত হয়েছি। আমরা সেফটি সিকিউরিটি নিয়ে এখন দেশে ফিরতে পারি”।

ওদিকে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে থাকা সিরিয়ানরা প্রেসিডেন্ট আসাদের পতনে উল্লাস করছে।

আসাদ পতনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো
২৭শে নভেম্বর : হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এবং এর সহযোগীরা দেশের উত্তর পশ্চিমে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরকারের হামলার অভিযোগ করে অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়।

৩০শে নভেম্বর : সিরিয়ার সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করে যে বিদ্রোহীরা ‘আলেপ্পোর বড় অংশে ঢুকে পড়েছে’।

৫ই ডিসেম্বর : কয়েকদিনের লড়াইয়ের পর হামা শহরের পতন হয় ও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৬ই ডিসেম্বর : সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীরা দেরা অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। এই অঞ্চল থেকেই ২০১১ সালে বাশার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো।

৭ই ডিসেম্বর : বিদ্রোহীরা সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস দখলের ঘোষণা দেয়।

৮ই ডিসেম্বর : ভোরেই বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশের ঘোষণা দেয়। এর দু ঘণ্টার মধ্যেই তারা ঘোষণা করে যে ‘স্বৈরাচারী বাশার আল-আসাদ পালিয়েছে’।

পরবর্তী খবর

ভারতে বাবরি মসজিদের পরিবর্তে নতুন জমিতে মসজিদ নির্মাণ কতদূর?

অযোধ্যা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধন্নীপুর গ্রাম। গত কয়েক বছর ধরে এই গ্রাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কারণ সরকার এখানে মুসলমানদের জন্য একটা মসজিদ গড়ার জন্য জমি দিয়েছে।

আজকের দিনেই ১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। সেই জমিতে রামমন্দির নির্মাণ আর তার বদলে অন্য একটি জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি রামমন্দিরের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ধন্নীপুর গ্রামে মুসলমানদের জন্য পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ২০১৯ সালের সেই রায়ের পরেই খুব দ্রুত গতিতে যখন রামমন্দির গড়ে উঠেছে, তার উদ্বোধন ও নিয়মিত পুজোও চলছে, অন্যদিকে ধন্নীপুরে মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণ এখনও শুরুই হয়নি।
কোথায় ধন্নীপুর?

উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর-অযোধ্যা-লক্ষ্ণৌ মহাসড়কে রৌনাহি থানার পাশ থেকেই শুরু হয় ধন্নীপুর গ্রাম। যে জমিটা মসজিদ নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছে, সেটা মহাসড়ক থেকে ২০০ মিটার দূরে।

সেখানে পৌঁছিয়ে দেখা গেল যে জমিতে টেন্ট ভাড়া দেন যারা, সেরকম কয়েকজন অনুষ্ঠান-বাড়ির শামিয়ানা শুকোতে দিয়েছেন। কৃষকরা তাদের গবাদি পশু চড়াচ্ছেন আর মাঠের মাঝখানে একটা দরগাহ নজরে এল।

জমি হাতে পাওয়ার প্রায় চার বছর পরেও কোথাও কোনও নির্মাণ কাজ চোখে পড়ল না। শুধু কয়েকটি জায়গায় সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে।

অন্যদিকে অযোধ্যার রাম মন্দিরে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠার’ পরে যে নির্মাণ কাজ বাকি ছিল, তাও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রাম মন্দির নির্মাণে প্রায় ১৮শো কোটি ভারতীয় টাকা খরচ হচ্ছে। মন্দিরে পৌঁছনর জন্য রাম-পথ গড়া হয়ে গেছে, সরকারের তরফে অযোধ্যাকে সাজিয়ে তোলার কাজও চলছে – তার জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।

অত্যাধুনিক নতুন বিমানবন্দর, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন গড়া হয়েছে। অযোধ্যার উন্নয়নের জন্য এবছর কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০০ কোটি ভারতীয় টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে আর আলাদাভাবে বিমানবন্দরের জন্য ১৫০ কোটি ভারতীয় টাকা দেওয়া হয়েছে।

দুই ধর্মের দুই উপাসনা-স্থলের ফারাকটা খুব চোখে পড়ছে।

মসজিদ নির্মাণের জন্য যে ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে, তার সচিব আতাহার হুসেন বলছিলেন,”দুটোর মধ্যে তুলনা চলে না। রাম মন্দিরের জন্য নির্মাণ কাজ – পাথর খোদাই ইত্যাদি তো দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। এছাড়াও রাম মন্দির গড়ে তুলতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল।”

এত দূরে কে নামাজ পড়তে আসবে!
ধন্নীপুর গ্রামের মানুষজন মসজিদের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইলেন না।

তবে একজন, মুহাম্মদ ইসলাম বলছিলেন,” মসজিদের জন্য অনেকবার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। কিন্তু কাজ তো কিছু্ শুরু হয় নি।

“আগে কমিটির সদস্যরা আসতেন ১৫ই আগস্ট আর ২৬শে জানুয়ারি জাতীয় পতাকা তুলতে তবে এ বছর তারা কেউ আসেননি। আমরা গ্রামের লোকেরাই পতাকা তুলেছি,” জানালেন মি. ইসলাম।

তিনি এও বলছিলেন যে যদি এখানে হাসপাতাল গড়া হত তাহলে এলাকার মানুষের লাভ হত। প্রায় চার থেকে ছয় ঘণ্টা যাত্রা করে লক্ষ্ণৌ যেতে হত না।

অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলের মহাসচিব খালেক আহমদ খান বলছিলেন, “জমিটা দেওয়া হয়েছিল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াক্ফ বোর্ডকে। তাদের দায়িত্ব ছিল নির্মাণ কাজ শুরু করা। যদি বাবরি মসজিদ মামলার মুসলমান পক্ষকে অথবা স্থানীয় মানুষকে দেওয়া হত তাহলে এতদিনে মসজিদ তৈরি হয়ে যেত।

“মসজিদ গড়ার কথা ছিল যারা বাবরি মসজিদে নামাজ পড়তেন, তাদের জন্য। এতদূরে কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে আসবে!” বলছিলেন মি. খান।

বাবরি মসজিদ মামলার অন্যতম পক্ষ ইকবাল আনসারি এবছরের গোড়ার দিকে মসজিদের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বিবিসিকে তিনি বলেছিলেন, “ওয়াক্ফ বোর্ড জমিটা নিয়ে নিল। তবে কাজ শুরু করার কোনও পদক্ষেপই নেয় নি তারা। যতদিন মসজিদ অযোধ্যায় ছিল ততদিন আমরা দেখাশোনা করতাম।”

কী কী থাকবে ধন্নীপুরে?
সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াক্ফ বোর্ড সরকারের কাছ থেকে ধন্নীপুরের জমিটা হাতে পাওয়ার পরে তারা ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে।

ওই ট্রাস্ট বলছে ধন্নীপুরে মসজিদ ছাড়াও অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল এবং ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম বানানো হবে।

ওই সংগ্রহশালার নাম দেওয়া হবে ফৈজাবাদের বাসিন্দা এবং ১৮৫৭-র লড়াইয়ের শহীদ আহমেদ উল্লা শাহের নামে।

মসজিদের নকশা দুবার বানানো হয়েছে। প্রথমবার দিল্লির অধ্যাপক এসএম আখতার বানিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে অন্য কাউকে দিয়ে নকশা বানানো হয়েছে।

অধ্যাপক আখতার বিবিসিকে বলেছেন যে কেন তার বানানো নকশা খারিজ করা হয়েছে সেটা কমিটির লোকেরাই বলতে পারবে।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাফর ফারুকি বিবিসিকে বলেছেন মসজিদ নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ভারতীয় টাকা দরকার। এছাড়া অন্যান্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করতে প্রায় ৪০০ কোটি ভারতীয় টাকার দরকার হতে পারে।

অর্থের অভাবে নির্মাণ শুরু হয় নি
ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জঈফর ফারুকি বলছিলেন, অর্থের অভাবে এখনও নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। অর্থ জোগাড় করার জন্য একটা কমিটিও হয়েছিল কিন্তু এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সেটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।

ওই কমিটি সঠিকভাবে কাজ করছিল না বলে জানিয়েছে ফাউন্ডেশন। তবে ওই কমিটিরই এক সদস্য হাজি আরাফাত শেখের ওপরে এখন অর্থ যোগাড়ের দায়িত্ব পড়েছে।

মি. শেখ মুম্বাইতে থাকেন। তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হন নি। সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াক্ফ বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

অর্থ যোগাড়ের চেষ্টা যেভাবে চলছে
যে হাসপাতালটি গড়া হবে, সেটা পরিচালনার জন্য দাতব্য হাসপাতাল চালায় এমন কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ট্রাস্ট। কয়েকটি সংস্থা এগিয়েও এসেছে।

মি. ফারুকির কথায়, “বিদেশ থেকে অনেকে অর্থ দান করতে ইচ্ছুক। সেই দান নেওয়ার জন্য যে বিদেশি দানগ্রহণ আইনের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করার আবেদন করা হয়েছে। ওই রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে অর্থের অভাব হবে না।”

তিনি এও জানিয়েছেন যে চাঁদা সংগ্রহের জন্য প্রতিটি রাজ্যে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হচ্ছে আর ক্রাউড-ফান্ডিংয়ের ব্যাপারেও ভাবনা চিন্তা চলছে।

বিজেপির উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি কুয়াঁর বাসিত আলি বলছেন যে ইতোমধ্যেই কমিটির হাতে এক কোটি টাকা আছে।

অযোধ্যায় টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক আর্শাদ আফজল খান বলছিলেন, “ট্রাস্টের উচিত ছিল কাজ শুরু করে দেওয়া। তারপরে তারা মানুষের কাছে চাঁদা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারত।”

তবে মানুষের উৎসাহে যে কিছুটা ভাটা পড়েছে, সেটাও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিষয়:
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত