রাজধানীর মিরপুর ৬০ ফিট রোডের ইফা কনভেনশন সেন্টারে হয়ে গেল তিনদিন ব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলা। গত বুধবার (৬ মার্চ) সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শুক্রবার (৮ মার্চ) রাত ১০টায় শেষ হয় এই মেলা। দেশীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠান শিল্পপুরাণ এবং আরশিনগরের আয়োজনে তিরিশ জন এসএমই উদ্যোক্তা তাদের বৈচিত্র্যময় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন এখানে।
মেলায় সরাসরি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে শাড়ি, নানারকম গহনা, হিজাব, বিভিন্নরকম পোশাক, পিঠাপুলিসহ বিভিন্ন খাবার, ঘর সাজানো পণ্য, বই, স্টেশনারিজসহ ঈদ এবং বৈশাখের পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন ক্রেতারা। মেলায় সরেজমিনে দেখা গেছে, তিনদিনই আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দশনার্থী ও ক্রেতারা এসেছেন তাদের পছন্দের কেনাকাটা করার জন্য। বড়দের প্রয়োজনীয় এবং সৌখিন পণ্যের পাশাপাশি এখানে ছবি আঁকার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকায় শিশুদের বেশ আগ্রহ দেখা গিয়েছে। ক্রেতা দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বাঁশ-বেতের পণ্য, অর্গানিক শাক-সবজি শুকিয়ে প্রকৃয়াজাতকৃত করা খাবারসহ বিভিন্নরকম হোম-মেড খাদ্যসামগ্রী।
সমাপনী দিনে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে দিশা ক্যাটারিংয়ের সৌজন্যে তাদের স্টলে নারী দিবস থিম কেক কেটে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এসময় শিল্পপুরাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা জিতুসহ দিশা ক্যাটারিংয়ের উদ্যোক্তা ও কর্মীদল এবং ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ঈদ আনন্দ মেলায় তিন দিন ব্যাপী স্বাধীনতা সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার এই উৎসবে শিশুরা মনের মতো সাজি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। নানা বয়সী শিশুরা এদিন বিভিন্ন চরিত্রে সেজে এসে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কাজী নজরুল ইসলাম, শেখ হাসিনা, বৃদ্ধাশ্রমের মা, ফ্যাশন ডিজাইনার, দর্জি, খেলনার দোকানদার এবং পতাকাওয়ালা সেজে শিশুরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার শিশুদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং বুধবার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার সকল প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অংশগ্রহণকারী সকল শিশুকেই সনদপত্র দেয়া হয়েছে।
এখানে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা জানান, নিজেদের ব্র্যান্ডকে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পরিচিত করার সুযোগ তৈরিতে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি নতুন এবং পুরনো উদ্যোক্তারা এক ছাদের নিচে মেলায় অংশ নেওয়ায় পরস্পরের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগও এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, মিরপুর ৬০ ফিট রোডে এরকম মেলা এই প্রথম দেখছেন তারা। তাই মেলায় এসে তারা বেশ আনন্দিত। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এরকম মেলা এই এলাকায় আরও হবে এবং কমপক্ষে সাতদিন ব্যাপী মেলা হলে সবার জন্য আসার সুযোগ হবে এবং পছন্দের পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
শিল্পপুরাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা খানম জিতু বলেন, আমরা সবসময় চাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে। সেই লক্ষ্যেই শিল্পপুরাণ এবং আরশিনগর যৌথভাবে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে থাকে। এবার যেহেতু ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ খুব কাছাকাছি সময়ে, তাই আমরা চেয়েছি রোজার আগেই উদ্যোক্তাদের ঈদ এবং বৈশাখকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত পণ্যগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর একটা ব্যবস্থা হোক।
তিনি আরও জানান, ৮ই মার্চ নারী দিবস উপলক্ষ্যে মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আরশিনগরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান শোয়েব জানান, মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ভেতর থেকে বিভিন্ন বিবেচনায় তিনজন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তা বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন মাজেদা খানম বিথী, পণ্যের বৈচিত্র্য এবং নান্দনিকতা বিবেচনায় সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন ‘আলমারি’র উদ্যোক্তা পূর্ণিমা ফয়েজ এবং পণ্যের মান, ক্রেতা সন্তুষ্টি এবং নান্দনিকতা বিবেচনায় সেরা বিক্রেতা সম্মাননা পেয়েছেন সারাং মেকওভার বাই তারান্নুম-এর তারান্নুম জালালী যুথী।
ঈদ আনন্দ মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল লাকি কুপন ড্র। কেনাকাটার উপর পাঁচজন ক্রেতাকে লটারির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
ঈদ আনন্দমেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল সমকাল, উদ্যোক্তা বার্তা, এবং রোজকার খবর।
হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারে নতুন বছরের লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাসদীখ হাবীব।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসকর্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের চতুর্থ জেনারেল মেম্বারশিপ মিটিং (জিএমএম) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তার নাম ঘোষণা করা হয়। মিটিংয়ে ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মোল্লা, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ, ২০২৪ সালের মেন্টর এবং ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে মুনিব এবং ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি আহমেদ সহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের এলপিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন- এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন নবী হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ উসওয়াত ইমাম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. শরিফুল ইসলাম, জেনারেল লিগাল কাউন্সিল মোহতারিমা রহমান, ট্রেজারার পারভেজ, ডিজিটাল কমিটি চেয়ার আপেল মাহমুদ রিয়াদ, পিআর ও মিডিয়া কমিটি চেয়ার জোবায়ের ইসলাম, ডিরেক্টর দাবিরুল ইসলাম দীপু, ডিরেক্টর আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের নতুন বোর্ডের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. তাসদীখ হাবীব বলেন, “আমি পাইওনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সক্রিয় সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়াদকালে পাইওনিয়ারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এই বছর অনেক কিছু অর্জন করেছি, যা নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অর্জনকে আরও বড় সাফল্যে রূপান্তর করবে।”