অর্থ ও বাণিজ্য

অর্থ ও বাণিজ্য

বসুন্ধরা পেপার সেক্টর সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ : নতুন দিগন্তের সূচনা

বাংলাদেশ কাগজ শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড (BPML) এবং বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (BMPIL) স্বীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম সাস্টেইনেবিলিটি রিপোর্ট উন্মোচন করেছে। এই রিপোর্টে পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সুব্যবস্থাপনার (ESG) প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। ১৫ই জানুয়ারি ২০২৪- এ বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টার-২ এ উন্মোচিত এই প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের টেকসই ও দায়িত্বশীল ব্যবসায় পরিচালনার প্রতি গুরুত্বের প্রতিফলন ফুটে উঠেছে।

রিপোর্ট বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, এফসিএ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন তৌফিক হাসান, বিভাগীয় প্রধান-মার্কেটিং, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এবং সাসটেইনেবিলিটি, সেক্টর-সি, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং এম মাজেদুল ইসলাম, কোম্পানি সেক্রেটারি, সেক্টর সি, বসুন্ধরা গ্রুপসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগন। তারা এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ব্যবসাক্ষেত্রে সাসটেইনেবিলিটি উদ্যেগগুলি প্রচারের ব্যাপারে বসুন্ধরা গ্রুপের মূখ্য ভূমিকার উদাহরণ তুলে ধরেন।

এই বিস্তারিত প্রতিবেদনটি তৈরিতে ইএসজি রিপোর্টিং-এর বিষয়গুলি নিরূপণের জন্য ‘ডাবল ম্যাটেরিয়ালিটি’ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এই নীতি অনুযায়ী, আর্থিক এবং অ-আর্থিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোম্পানির সাস্টেইনেবিলিটি বিষয়ে ঝুঁকি এবং সুযোগ বিবেচনা করা হয়েছে। এবং এই দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গির ফলে কোম্পানির স্থায়িত্বেএকটি ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থাপনা নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের জন্য এই সাস্টেইনেবিলিটি রিপোর্ট একটি যুগান্তকারী নথি হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। এটি বিশ্বব্যাপী অনুসৃত সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (SDG) এর সাথে মিল রেখে এবং গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই) স্ট্যান্ডার্ড এর নির্দেশিকা অনুযায়ী তৈরি হয়েছে। তাই এটি যে শুধু বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর আর্থসামাজিক এবং পরিবেশের প্রতি অবদানের কথা বলে তাই না, বরং সাস্টেইনেবিলিটি বা টেকসই উন্নয়নে তাদের দৃঢ়তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

এই প্রতিবেদনটির মূল লক্ষ্য হলো, পেপার সেক্টর-এর কাঁচামাল সংগ্রহ, পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরনের সর্ব ক্ষেত্রেই সাস্টেইনেবিলিটি প্রাকটিস এর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে এই শিল্পে এর গুরুত্ব প্রচার এবং প্রসার করা। এই প্রতিবেদনে কোম্পানি দুটির উদ্যোগের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব ফেলেছে বলে প্রমাণিত।

এই রিপোর্টে, ২০৩০ সাল অবধি লক্ষ্য ধার্য করে এবং এটি অর্জনের করণীয় সকল পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জীবনভিত্তিক বিভিন্ন কেস স্টাডি এবং নানামুখী সাস্টেইনেবিলিটি ক্যাম্পেইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ এর প্রাক-কভিড সময় থেকে শুরু করে ২১-২২ সালের সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে এই রিপোর্টে স্থান দেয়া হয়েছে।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তিতে সফলতার এক অদম্য যাত্রী ‘সোমা’

গফরগাঁওয়ের এক অধ্যাপকের স্বপ্ন ছিল প্রশাসক হওয়া। কিন্তু জীবন তাকে ভিন্ন পথে নিয়ে গেছে— তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বহু আগে থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন পথচলা। আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী। N S P House নামে গড়ে তুলেছেন নিজের বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবন ও ভাবনা জানিয়েছেন জুলেখা খাতুন সোমা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অর্থনীতি পড়ানোর পাশাপাশি তিনি আইসিটি বিষয়েও শিক্ষকতা করতেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনেক আগেই বুঝতে পারেন। তাই এইচএসসি পাস করার পরই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর ২০০৬ সালে নিজেই একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল, তবু এখান থেকেই তার ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনার শুরু।

এরপর ধীরে ধীরে তিনি ইট-বালুসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। ব্যবসার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য অফলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে থাকেন, যাতে একসময় বড় উদ্যোক্তা হতে পারেন।

২০১৪ সালে তিনি ফেসবুকে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন গ্রুপে লেখালেখির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং তৈরি করেন, যা পরবর্তী সময়ে তার ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০১৮ সালে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি একটি শপ খোলেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তার চেয়েও বেশি সফলতা পেতে থাকেন। ঠিক এই সময়েই তিনি পরিচিত হন ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে, যা তার উদ্যোক্তা জীবনকে আরও গতিশীল করে তোলে।

তবে পথচলা সহজ ছিল না। প্রথমদিকে পরিবার থেকেও কোনো সমর্থন পাননি, বরং একাই পথ চলতে হয়েছে। পরে তার বড় সন্তান পাশে দাঁড়ায় এবং ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সমর্থন দিতে বাধ্য হন।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতেই তিনি এক বড় সংকটের মুখোমুখি হন। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অনলাইন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পেলেও হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি কেবল একটি ছোট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে নিজের অবস্থান তৈরি করবেন।

এই কঠিন সময়ই তাকে আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তিনি নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান এবং আজ তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা একসময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারাই একসময় ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু তিনি নীরব থেকে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।

এ শুধু একজন নারী উদ্যোক্তার সফলতার কাহিনি নয়, বরং এটি এক অদম্য মানসিকতার গল্প। প্রতিকূলতাকে জয় করে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, তা তিনি নিজেকে দিয়েই প্রমাণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোই তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া।

তার ভাষায়, ‘নারীরা যদি নীরব হয়ে যায়, পৃথিবীতে বড় পরিবর্তন ঘটে—আমি তারই প্রমাণ।’ তার এই নিরবতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার বার্তা। যারা তাকে থামাতে চেয়েছিলেন, তারা পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছেন, তারা আসলে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, যার প্রতিটি অর্জন তার কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় সংকল্পের ফসল।

পরবর্তী খবর

নারী এগিয়ে গেলে সমাজ এগিয়ে যাবে : শারমিন সুলতানা

হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।

রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণআরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।

শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।

শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।

তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।

তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।

শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।

শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।

শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।

 

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত