আজকের দিনে উৎসব-আনন্দের সবচেয়ে পরিচিত এক অনুসঙ্গের নাম কেক। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীসহ সামাজিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা যে কোনো আনন্দ উপলক্ষ্যে কেক ছাড়া যেনো চলেই না। কেক কেবল নানান স্বাদের হলেই চলে না, মনের মতো ডিজাইনেরও হওয়া চাই। তাই প্রতিষ্ঠিত বড় বড় বেকারি শপের পাশাপাশি আজকাল ব্যক্তি উদ্যোগও গড়ে উঠেছে কেককে কেন্দ্র করে। ফারহানা হোসেন আশা এমনই একজন উদ্যোক্তা যিনি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নানান স্বাদের নান্দনিক সব কাস্টমাইজ কেক তৈরি করে পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের ঘর পর্যন্ত।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতু কথা বলেছেন ফারহানা হোসেন আশার সাথে। তার উদ্যোগ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা ইত্যাদি নানান বিষয়ে কথা বলেছেন তারা।
উদ্যোক্তাদের জীবন, কর্ম ও ভাবনা নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে পাঠকের জন্য আজ থাকছে রোজকার খবরের সাথে সফল উদ্যোক্তা আশার আলাপচারিতার প্রধান প্রধান অংশ।
রোজকার খবর : আপনার উদ্যোগ বিষয়ে বলুন।
আশা : আমার উদ্যোগের নাম Delicious food by asha.
রোজকার খবর : কেনো আপনি উদ্যোক্তা হলেন?
আশা : নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরির উদ্দেশ্যেই মূলত আমার এই উদ্যোগ।
রোজকার খবর : ছোটবেলা থেকে আপনার কী হওয়ার বা কী করার ইচ্ছা ছিল? সে ইচ্ছা কি পূরণ হয়েছে?
আশা : ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল পাইলট হবো। কিন্তু সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। বিয়ের পর সংসার আর বাচ্চা সামলাতে গিয়ে নিজের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই ছোটবেলার ইচ্ছে বদলে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আজকের উদ্যোক্তা জীবন তৈরি করা।
রোজকার খবর : আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে পারিবারিক সমর্থন এবং সহযোগিতা কেমন ছিল?
আশা : উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু আমার মা এবং আমার হাজবেন্ড আমাকে উৎসাহিত করেছে সবসময়।
রোজকার খবর : উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল? সেসব মোকাবেলা করেছেন কিভাবে?
আশা : উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে আসলে আমাদের নারীদের বেশি ভুগতে হয়। আমিও অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। ২টা বাচ্চা, পরিবার সব সামলিয়ে নিজের উদ্যোগকে সামনে নিয়ে আসতে আকাশ সমান পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেকের কটুকথা হজম করতে হয়েছে।
রোজকার খবর : আজকে আপনি যতটা সফল এর পেছনে ব্যর্থতার গল্প আছে কি? থাকলে সেসব জানতে চাই। ব্যর্থতাগুলো থেকে আপনার উপলব্ধি বা শিক্ষা কী ছিল? কিভাবে সেই ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে আজকের সফলতায় পৌঁছেছেন।
আশা : আজকে আমি যতটা সফল এর পেছনে ব্যর্থতারও গল্প আছে। আমি অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু হার মেনে নেইনি। আমি উপলব্ধি করেছি যে, চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবো । ধৈর্য্য ধরে, কাজের দিকে একনিষ্ঠভাবে মনোযোগী হয়ে, কে কী বললো তার তোয়াক্কা না করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমি এই পর্যন্ত এসেছি। স্বপ্ন আছে বহুদূর যাবার। চেষ্টা করছি, চেষ্টা করে যাবো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে, ইনশাআল্লাহ।
রোজকার খবর : পড়াশোনা করে চাকরি খোঁজা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে আপনি কতটা উৎসাহিত করবেন বা করেন?
আশা : চাকরি তো এখন একরকম সোনার হরিণ বলা চলে। তাই আমি মনে করি সবার এই হরিণের পিছনে না দৌড়ে নিজের একটা কিছু করা উচিত। উদ্যোক্তা হয়ে নিজের উদ্যোগকে সচল রাখা উচিত।
রোজকার খবর : নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কী কী বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করা উচিত? নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আশা : নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, হুজুগের বশবর্তী না হয়ে যে কাজে আপনি পারদর্শী এবং যে কাজটা আপনি পছন্দ করেন, ভালোবাসেন সেই কাজ শুরু করুন। আরে অমুক এই কাজ করে লাখোপতি, তমুক ওই কাজ করে কোটিপতি— এগুলো দেখে উদ্যোগ নেয়া যাবে না। মন স্থির করে আপনি কী চান সেটা আপনাকে বেছে নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
রোজকার খবর : আপনি উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে তো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আপনার এই উদ্যোগ বা কার্যক্রম দেশের বা সমাজের জন্য কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
আশা : আমি আমার উদ্যোগের মাধ্যমে আরও কিছু মানুষের বেকারত্ব দূর করতে চাই। এভাবেই দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চাই।
রোজকার খবর : নিজেকে এবং নিজের উদ্যোগকে ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে নিয়ে যেতে চান? সে লক্ষ্যে আপনার পরিকল্পনা কী?
আশা : আমার কাজ বা উদ্যোগটা আসলে আমার কাছে সন্তানের মত। কাজ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা মাফিকই কাজ করছি। আল্লাহ হুকুম করলে সব হবে ইনশাআল্লাহ। সবার সহযোগিতা, ভালোবাসা কামনা করছি।
রোজকার খবর : বাংলাদেশের জন্য কী করতে চান বা কিভাবে অবদান রাখতে চান?
আশা : আমার মাধ্যমে যেনো আরো কিছু লোকের অর্থসংস্থান হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। দেশের বেকারত্বের হার যেন কিছুটা হলেও কমে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাকে দেখে আরো অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করুক, উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
রোজকার খবর : রোজকার খবরের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনার স্বপ্ন এবং উদ্যোগের সফলতার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখুন সেই কামনা করি। ভালো থাকবেন।
হোমমেইড আচার ব্র্যান্ড ‘পুত্রবধূ’র প্রতিষ্ঠাতা শারমিন সুলতানা একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী নারী। তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী এক গল্প।
রোজকার খবরের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা জিতুর কাছে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন শারমিন। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা ভাবনা। উদ্যোক্তাদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে শিল্পপুরাণ ও আরশিনগরের সৌজন্যে রোজকার খবরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ প্রকাশিত হল এই বিশেষ প্রতিবেদন।
শারমিনের উদ্যোগের নাম ‘পুত্রবধূ’ দেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিয়ের পর তিনি যখন তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন, তখন তিনি ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি তার ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘পুত্রবধূ’। গত সাড়ে তিন বছর ধরে অনলাইনে সুনামের সঙ্গে হোমমেইড আচার বিক্রি করছে ‘পুত্রবধূ’।
শারমিন বেড়ে উঠেছেন গ্রামের মুক্ত পরিবেশে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে হয়ে ঢাকায় এসে তাকে একটি নতুন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই সময়কার মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার সংবাদ দেখে তিনি ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজের অভাব এবং অবসর সময় ফেসবুকে কাটিয়ে তার মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল।
তখনই তার স্বামী তাকে অনলাইন বিজনেস শুরুর প্রস্তাব দেন। শারমিন গ্রামে থাকতে আচার বানাতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে শারমিনের স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। শাশুড়ি বলতেন, “তুমি আমার একমাত্র বউমা। তুমি আচার সেল করবা, সমাজের লোকজন তো হাসবে।” অন্যদিকে, তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করুন।
তবে শারমিন ও তার স্বামী পরিবারের সবাইকে অনলাইন ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বোঝাতে সক্ষম হন। আজ সেই শাশুড়ি এবং বাবার বাড়ির লোকজনও তার কাজে গর্ববোধ করেন এবং তাকে সমর্থন করেন।
শারমিনের জন্য পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যবসা শুরু করা সহজ ছিল না। কিন্তু তার স্বামীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরামর্শ তাকে এই পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। পেজ খোলা থেকে শুরু করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ, প্যাকেজিং– এসব বিষয়ে তার স্বামী তাকে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।
শারমিন মনে করেন, চাকরির আশায় বসে না থেকে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই ছোট পরিসরে কাজ শুরু করা উচিত। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি বলেন, ব্যবসা শুরু করতে বড় মূলধনের প্রয়োজন নেই। রিসেলার হিসাবে শূন্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেও সফল হওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে সেই লাভ থেকে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করা যেতে পারে।
শারমিনের স্বপ্ন, তার ‘পুত্রবধূ’ ব্র্যান্ডটি শুধু দেশের ৬৪ জেলাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম অর্জন করুক। তিনি চান দেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক। প্রয়োজনে তিনি তাদের আচার বানানোর কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শারমিন সুলতানার গল্প একটি প্রমাণ যে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে। তার মতো নারীরা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শারমিন বিশ্বাস করেন, নারীরা এগিয়ে গেলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।
জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারে নতুন বছরের লোকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাসদীখ হাবীব।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসকর্ট প্লেসে অনুষ্ঠিত জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের চতুর্থ জেনারেল মেম্বারশিপ মিটিং (জিএমএম) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে তার নাম ঘোষণা করা হয়। মিটিংয়ে ইলেকশন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ারের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মোল্লা, ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট আল শাহারিয়ার, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ, ২০২৪ সালের মেন্টর এবং ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে মুনিব এবং ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেফিন রাফি আহমেদ সহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের এলপিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন- এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন নবী হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ উসওয়াত ইমাম, সেক্রেটারি জেনারেল মো. শরিফুল ইসলাম, জেনারেল লিগাল কাউন্সিল মোহতারিমা রহমান, ট্রেজারার পারভেজ, ডিজিটাল কমিটি চেয়ার আপেল মাহমুদ রিয়াদ, পিআর ও মিডিয়া কমিটি চেয়ার জোবায়ের ইসলাম, ডিরেক্টর দাবিরুল ইসলাম দীপু, ডিরেক্টর আরিফুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের নতুন বোর্ডের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. তাসদীখ হাবীব বলেন, “আমি পাইওনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সক্রিয় সদস্যের অংশগ্রহণ বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফিলকুল আহমেদ নতুন নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমার মেয়াদকালে পাইওনিয়ারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এই বছর অনেক কিছু অর্জন করেছি, যা নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা আমাদের অর্জনকে আরও বড় সাফল্যে রূপান্তর করবে।”