নতুন বছরে শুরুতেই নতুন নাটক নিয়ে মঞ্চে আসছে নবরস। অপু মেহেদীর রচনা ও সৈয়দা শামছি আরা সায়েকার নির্দেশনায় ‘উনপুরুষ’ দিয়ে নাট্যযাত্রা শুরু করছে দলটি। আগামী ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি (মঙ্গল ও বুধবার) রাজধানীর নাটক সরণির (বেইলি রোড) মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে প্রদর্শনী হবে নাটকটির। প্রদর্শনী শুরু হবে সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নবরস নৃত্য ও নাট্যদল। প্রতিষ্ঠার পর বেশ সময় নিয়েই দলটি মঞ্চে আনছে তাদের প্রথম প্রযোজনা ‘উনপুরুষ’। এটি একজন আত্মনির্ণয় বিপন্ন মানুষের গল্প। আমাদের তথাকথিত সমাজের নিয়মের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে এক সংকটময় পথে চলতে থাকে তার অনিশ্চিত জীবনযাত্রা।
এ প্রসঙ্গে নাট্যকার অপু মেহেদী বলেন, ‘শুধুমাত্র জন্মসূত্রে প্রাপ্ত লিঙ্গ পরিচয় দিয়েই মানুষের আত্মনির্ণয় ঘটে না। এক্ষেত্রে জেন্ডার বা সামাজিক লিঙ্গ একটা বড় ভূমিকা রাখে। আমাদের সমাজ মানুষের সামাজিক পরিচয়ের কিছু ছকবাধা পরিচয় নির্ধারণ করে রেখেছে। সমাজের এসব নির্ধারিত পরিচয়ের বাইরেও মানুষের পরিচয় রয়েছে। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মানুষ তার অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠা অনুভূতি দিয়েই ঠিক করে নিতে চায় তার সামাজিক পরিচয়। এই পরিচয় বা আত্মনির্নয়ে যখন বাধা এসে দাঁড়ায় তখনই সে হয়ে ওঠে বিপন্ন। আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য বিপন্ন মানুষ রয়েছে। তাদের কেউ কেউ পরিচয়ের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয় আবার কেউ কেউ সমাজের ঘৃণিত রূপ দেখার ভয়ে আমৃত্যু আড়াল করে রাখে নিজেকে। আমাদের সমাজের এই আত্মনির্ণয় বিপন্ন মানুষদের গল্প বলার প্রয়াসই উনপুরুষ’।
নির্দেশক সামছি আরা সায়েকা বলেন ‘সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। সমাজের যেমন ভালো রূপ আছে তেমনি আছে খারাপ রূপও। সেই খারাপ রূপগুলো দেখার ভয়ে মানুষ নিজেকে বদ্ধ করে রাখে অন্ধ কুঠুরির মধ্যে। তাতে কিন্তু খারাপ রূপের শক্তি বাড়তেই থাকে। সমাজের এই খারাপ রূপ মুছে দিতে হলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হয়। সমাজের মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় অসংগতিগুলো। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই নাটকটি করা। নাটকটি দর্শক হৃদয়ে ভিন্নমাত্রার দাগ কাটবে। কেননা এই ধরণের গল্প নিয়ে বাংলাদেশের মঞ্চে তেমন কাজ হয়নি। এই নাটকের গল্প নাটকের অন্যতম মূলশক্তি।’
দলের সভাপতি সাইফ মাহমুদ বলেন, ‘উনপুরুষ নবরসের প্রথম প্রযোজনা। অধিকাংশ নবীন শিল্পীদের নিয়েই কাজটি করেছি। সে হিসেবে এই নাটক মঞ্চায়ন আমাদের কাছে একধরণের চ্যালেঞ্জ। আশাকরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দর্শকদের সমর্থনে আমরা এই চ্যালেঞ্জকে উতরে যেতে পারবো।’
‘উনপুরুষ’ নাটকের কলাকুশলী হিসেবে আছেন— আলো ও মঞ্চ পরিকল্পনা-সাইফুল ইসলাম, পোষাক উপদেষ্টা-ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সঙ্গীত পরিকল্পনা-এবি সিদ্দিক, প্রযোজনা অধিকর্তা-সাইফ মাহমুদ।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন— ওয়াজিদ, কাশিফ আলফি আহমেদ, নূর-এ-খোদা মাশুক সিদ্দীক, সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা, জিসান আদিত্য জয়, নুসরাত জাহান বন্যা, সাদিকা মালিহা শখ, সবুজ খান, সুকন্যা সাকিরা, গোলাম মোর্শেদ, সানি, বন্যা, শখ প্রমুখ।
নাটকটির দর্শনীর মূল ১০০০, ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা। প্রদর্শনীর দিন কাউন্টার ছাড়াও ০১৭১১৮৯২৩০৯ ও ০১৭৮১১৬৬৫৯৮ নাম্বারে যোগাযোগ করে নেয়া যাবে অগ্রিম টিকিট।
দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘ফেরেশতে’। ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম পরিচালিত ছবিটি ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হবে।
প্রান্তিক মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করা এই অভিনেত্রী ব্যক্তিগত কাজ শেষে এই সপ্তাহেই ঢাকায় ফিরবেন। এরপর ছবির প্রচারণায় অংশ নেবেন তিনি।
জয়া বলেন, ‘আমাদের দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভেতরের সংগ্রামী ও সাহসী চরিত্রের একজনকে ফুটিয়ে তোলা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে পুরো টিমের সহযোগিতায় কাজটি ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
‘ফেরেশতে’ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত হয়েছে। ছবিটি ফজর চলচ্চিত্র উৎসবে মানবিক বার্তার জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছে। এছাড়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪-এর উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ছবির প্রধান অভিনেতা ও প্রযোজক সুমন ফারুক বলেন, ‘এই চলচ্চিত্রে সমাজের প্রান্তিক মানুষের গল্প উঠে এসেছে, যা সহজে উচ্চবিত্তরা উপলব্ধি করতে পারে না। আশা করছি, দেশীয় দর্শকও ছবিটিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবেন।’
চলচ্চিত্রটিতে জয়া আহসান ও সুমন ফারুক ছাড়াও অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ আলী, রিকিতা নন্দিনী শিমু, শাহীন মৃধা ও শিশুশিল্পী সাথী। চিত্রনাট্য লিখেছেন মুমিত আল-রশিদ, আর ফারসি ও বাংলা অনুবাদ করেছেন ফয়সাল ইফরান।

বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য এ ছবিটি একদিকে হবে সামাজিক বার্তাবহ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা।
অভিনয়ে নিয়মিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব উপস্থিতি বজায় রেখেছেন লাক্সকন্যা শবনম ফারিয়া। শুধু শোবিজ ইস্যুই নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়েও খোলামেলা মতামত দিয়ে আসছেন এই অভিনেত্রী। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে তিনি বললেন, রাজনীতি নয়, বরং সোশ্যাল অ্যাকটিভিজমকেই ভবিষ্যতে বেছে নিতে চান তিনি।
শবনম ফারিয়ার ভাষায়, ‘ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি একজন শিল্পী, সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের অংশ হতে চাই। রাজনীতি আমার মঞ্চ নয়। ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ, চোরকে চোর আর চাঁদাবাজকে চাঁদাবাজ বলাই আমার নীতি।’
ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন সময় পার করা প্রসঙ্গেও খোলামেলা ছিলেন তিনি। বললেন, ‘অপ্রয়োজনীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার ইচ্ছে আমার কখনোই ছিল না। তা না হলে অভিনয়ের পাশাপাশি চাকরি না করে টিকটকে নাচতাম, জিম করতাম, কিংবা মিরর সেলফি দিতাম। এই দেশে অ্যাটেনশনের জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না, আমিও জানি, আপনারাও জানেন।’
রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতেও দৃঢ় ভাষায় বক্তব্য রাখেন ফারিয়া। তার স্পষ্ট ঘোষণা— ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব রাজনৈতিক দল আছে বা সম্প্রতি নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের কারোর সঙ্গেই আমার কোনো সমর্থন নেই। আমার ফেসবুক পেজ পাবলিক। সেখানে যেমন কালা মাগুর কমেন্ট করতে পারে, তেমনি নীল তিমি, কাউয়া কিংবা টিয়াও পারে। এতে আমার রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিফলিত হয় না। আমি কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নই।’
অভিনয়ে অনিয়মিত হলেও নিজের অবস্থান, চিন্তাভাবনা আর খোলামেলা বক্তব্যের জন্যই শবনম ফারিয়া আলোচনায় থাকেন প্রায়ই। রাজনীতির বাইরে থেকেও তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর সেই পরিবর্তনের লড়াইয়েই সক্রিয় থাকতে চান তিনি।