বিদেশ

বিদেশ

ইসরায়েলের ঠিকাদার ফাতাহ!

রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা ভৌগোলিক প্রভাব; উভয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে ফিলিস্তিনের এক মেরুতে ফাতাহ এবং আরেক মেরুতে থাকছে হামাস। আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) নেতৃত্বে ফাতাহ শুধু পশ্চিম তীরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে ফাতাহ হেরে যাওয়ার পরও পিএর নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। তবে ওই নির্বাচনে পরপরই গাজা থেকে তাদের বের করে দেয় হামাস।

গাজাকে কেন্দ্র করে গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও ইসরায়েলের চলতি সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে উঠেছে, হামাসকে হটিয়ে গাজায় পিএ তথা ফাতাহর শাসন শুরু হতে যাচ্ছে কি না। তবে ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নে ফাতাহর ভূমিকা এবং শাসনতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে পিএর কর্মকা- ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে পরিচালিত পিএ প্রশাসনের আপসমূলক আচরণ এখন ফিলিস্তিনিদের মুখে মুখে ফেরে।

পশ্চিম তীরের বিরজেইত বিশ^বিদ্যালয়ের লেকচারার আবোদ হামায়েল বলেন, ফাতাহ কিংবা পিএর কৌশল হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতায় থাকা; অন্যদিকে হামাসের কৌশল সামরিক। মতাদর্শগতভাবে বিচার করলে, হামাস যেখানে সশস্ত্র উপায়ে স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে, সেখানে ফাতাহ নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংকট সমাধানের পক্ষপাতী। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া হচ্ছে, সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে গাজায় ফাতাহ তথা পিএ ফিরে আসুক। আর ইসরায়েলের চাওয়া হচ্ছে, গাজায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা। শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল হামাসকে আপাত অর্থে নির্মূল করতে সমর্থ হওয়ার পর যদি ওয়াশিংটন এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের কথামতো গাজায় পিএর শাসন শুরু হয়; তাহলে পরিস্থিতি সহজ হবে না। কারণ ফিলিস্তিন সংকটের রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা পিএর কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে যেখানে দুর্নীতি, আপস ও নানা অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন নিয়ে তাদের কড়া অবস্থান দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নব্বইয়ের দশকে ফাতাহ নেতা ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক রবিনের মধ্যে সই হওয়া অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমেই গড়ে ওঠে পিএ। ওই সময় ফাতাহ এই চুক্তিকে ভবিষ্যতের স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার পথনকশা হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়েছে এবং পশ্চিম তীরে সাত ইহুদির অবৈধ বসতি তৈরি হয়েছে।

হামাস ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান নিষ্পেষণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। এ বিষয়ে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রাশেক বলেন, ‘পশ্চিম তীরে দখলদারদের অব্যাহত সহিংসতা ও অব্যাহত দখলদারি গত ৭ অক্টোবরের আক্রমণের অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ নিয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারা শোনেনি।’ গাজা উপত্যকায় ফাতাহর সীমিত প্রভাব রয়েছে। সেখানে দলটির অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশ মাহমুদ আব্বাসের অনুসারী। আরেক অংশ দলটির সাবেক নেতা মোহাম্মেদ দাহলানের অনুগত যিনি গত ১০ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) নির্বাসিত। তাকে আব্বাস বহিষ্কার করেছিলেন।

ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস পশ্চিমা বিশে^র সঙ্গে দেন-দরবার করে অবৈধ বসতি বন্ধ, ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রশ্নে কিছুই করতে পারেননি। এর থেকেও গুরুতর হলো, গাজা ও পশ্চিম তীর নির্বিশেষে হতাশাগ্রস্ত ফিলিস্তিনিরা পিএর ভূমিকাকেই সন্দেহের চোখে দেখে। ব্যাপক অংশের ফিলিস্তিনিরা পিএ প্রশাসনকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলের নিয়োগ করা ‘সহকারী ঠিকাদার (সাব-কন্ট্রাক্টর)’ মনে করে। এমন মনোভাবের কারণ হলো, সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণকেই বিচারিক কাঠামোতে হয়রানি করে পিএ। ‘লয়ার্স ফর জাস্টিস’ নামের একটি সংগঠন জানায়, গত বছর পিএ ইসরায়েলবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার করে।’ এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের অনেকে বলছেন, আগামী দিনে তৃতীয় দফার ইন্তিফাদায় (ফিলিস্তিনিদের গণজাগরণ) পিএ প্রশাসনের পতন হবে।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সহিংসতা সারা বছর ধরেই চলতে থাকে। সেখানে তরুণরা ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে যাচ্ছে এবং তারা একেই শ্রেয়তর মনে করে। হামাসের প্রভাব যে শুধু গাজায় রয়েছে তা নয়, বরং পশ্চিম তীরে জনপ্রিয়তার ভিত্তি তৈরি করেছে। ইসরায়েলি বর্বরতা পশ্চিম তীরে যতগুণ বাড়ছে, হামাসের ভিত্তি তত শক্ত হচ্ছে। এর উল্টোদিকে ফাতাহ তথা পিএ প্রশাসনের জনপ্রিয়তার রাশ আলগা হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ফাতাহ-সমর্থিত সংগঠনকে হারিয়ে হামাস-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ইসলামি ওয়াফা ব্যাপক বিজয় অর্জন করে।

সম্প্রতি ‘প্যালেস্টিনিয়ানস সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ’ একটি জরিপ পরিচালনা করে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধের আগেই এ জরিপ পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি পিএ প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত মনে করে। ফিলিস্তিনের ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করে, পিএ প্রশাসনের সম্পদের তুলনায় দায়দেনা বেশি। গাজা শাসন করার মতো বাস্তবতায় যে পিএ কিংবা ফাতাহ নেই তাতে একমত ইয়াসির আরাফাতের ভাগ্নে নাসের আল-কুদওয়া যাকে একসময় পিএর ভবিষ্যৎ ভাবা হতো। তার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি, এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় প্রধান দায়িত্ব পালন তো দূরে থাক; বিদ্যমান কর্তৃপক্ষ, এর বর্তমান কাঠামো এবং যারা এর নেতৃত্ব গাজায় পা রাখতে সক্ষম নন।’

এ অবস্থায় যুদ্ধের পর গাজা কিংবা পুরো ফিলিস্তিন প্রশ্নে সম্ভাব্য আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিত্বের ওপর জোর দেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাফি জাবারি। গাজায় ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল বা অন্য কাউকেই গ্রহণ করবে না, এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হামাস ফিলিস্তিনি সমাজদের অংশ। তাদের নির্মূল করা যাবে না। হামাস গেলে, আরেক হামাস জন্ম নেবে। ইসরায়েলের ট্যাংকে চেপে কেউ গাজায় প্রবেশ করতে চাইলে তা কখনই গ্রহণ করবে না ফিলিস্তিনিরা।’

এসবের বাইরে ৮৮ বছর বয়সী আবু মাজেন তথা আব্বাস বস্তুত ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে হাস্যকর প্রতিমূর্তি অর্জন করেছেন। চার বছর মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় বসে তিনি ১৮তম বছর পার করছেন। ২০১০ সালে ভোট হওয়ার কথা বলা হলেও তা স্থগিত হয়। পিএ প্রশাসনের যত শাখা-প্রশাখা রয়েছে, তার কারও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক রায় নেই। এর মধ্যে আব্বাসের স্থান দখলের প্রতিযোগিতাও দৃষ্টিকটুভাবে উন্মোচিত হয়। হুসেইন আল-শেইখ যিনি পিএলওর কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব। তাকে যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে এবং তিনি পদ দখল করতে চান। তিনি নাকি ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সঙ্গেও বেশ পরিচিত। আরেকজন হলেন মাওয়ান বারঘোতি। ধারণা করা হয়, ২০২১ সালের বাতিল হওয়া পিএ নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে পারতেন। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা আব্বাসের পদে আসতে মরিয়া। ফিলিস্তিনের মুক্তি নিয়ে তাদের আগ্রহ কতটা, তাও সন্দেহের বিষয়।

শেয়ার
বিষয়:
পরবর্তী খবর

বালক সম্রাটের সমাধিসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর চালু মিশরে, কী আছে সেখানে

প্রাচীন বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের একটি— মিশরের ‘দ্য গ্রেট পিরামিড অব খুফু’র পাশেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’ বা জিইএম।

এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বলা হচ্ছে। এখানে রাখা হয়েছে এক লাখেরও বেশি প্রত্নসামগ্রী। প্রাক-রাজবংশীয় সময় থেকে শুরু করে গ্রিক ও রোমান যুগ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার বছরের ইতিহাস এই জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে।

বিখ্যাত মিশরবিদদের মতে, এই জাদুঘর চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদেশে থাকা মিশরের প্রত্নসম্পদ ফেরত আনার দাবি আরও জোরালো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত বিখ্যাত ‘রোসেট্টা স্টোন’।

তবে জিইএম সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে প্রাচীন মিশরের বালক রাজা তুতেনখামুনের অক্ষত সমাধি থেকে পাওয়া সব প্রত্নসামগ্রী একসঙ্গে প্রদর্শনের কারণে। ব্রিটিশ মিশরবিদ হাওয়ার্ড কার্টার ১৯২২ সালে এই সমাধি আবিষ্কার করার পর এটাই প্রথমবার, যখন তার পুরো সংগ্রহ একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এই প্রদর্শনীতে রয়েছে তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ, সিংহাসন, রথসহ নানা মূল্যবান সামগ্রী।

আন্তর্জাতিক মিশরবিদ সমিতির সভাপতি ও জিইএমের সাবেক প্রধান ড. তারেক তওফিক বলেন, ‘কীভাবে এই প্রদর্শনীকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়েছে। কারণ সমাধিটি আবিষ্কারের পর এর সাড়ে পাঁচ হাজার প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে আগে মাত্র ১ হাজার ৮০০টি প্রদর্শিত হয়েছিল। আমি চেয়েছি পুরো সংগ্রহই প্রদর্শন করতে— যেন কেউ শত বছর আগে হাওয়ার্ড কার্টার যেভাবে তা দেখেছিলেন, আজও তেমনভাবেই দেখতে পারেন।’

প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই জাদুঘর বছরে অন্তত ৮০ লাখ দর্শনার্থী আকর্ষণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি মিশরের পর্যটন শিল্পে নতুন গতি আনবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

গিজা পিরামিড এলাকার একজন অভিজ্ঞ গাইড আহমেদ সেদ্দিক বলেন, ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম মিশরবিদ্যা ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের নতুন সোনালি যুগের সূচনা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

তুতেনখামুনের প্রদর্শনী এবং খুফুর প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পুরনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নৌকা বাদে জাদুঘরের অধিকাংশ গ্যালারি ইতোমধ্যেই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

গাইড আহমেদ আরও বলেন, ‘আংশিক খোলা থাকার সময়েও আমি বহু ট্যুর আয়োজন করেছি। এখন এটি গৌরবের শিখরে পৌঁছাবে। যখন তুতেনখামুনের পুরো সংগ্রহ উন্মুক্ত হবে, তখন মনে হবে যেন পুরো পৃথিবী ফিরে এসেছে— কারণ এই রাজা শুধু মিশরের নয়, ইতিহাসেরই এক আইকনিক ফারাও।’

লন্ডন থেকে আগত এক পর্যটক স্যাম বলেন, ‘আমরা মিশরের এই নতুন জাদুঘর দেখতে আর প্রত্নসম্পদগুলো উপভোগ করতে মুখিয়ে আছি।’

আরেকজন ব্রিটিশ পর্যটক জানান, তিনি এর আগে কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে অবস্থিত পুরনো মিশরীয় জাদুঘরে তুতেনখামুনের কিছু প্রত্নসামগ্রী দেখেছিলেন।

নতুন জাদুঘরটি প্রায় পাঁচ লাখ বর্গমিটার আয়তনের— যা প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান। জাদুঘরের দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় লিপি। অ্যালাবাস্টার পাথরে তৈরি ত্রিভুজাকার দেয়াল আর পিরামিড আকৃতির প্রবেশদ্বার এটিকে দিয়েছে এক অনন্য স্থাপত্যরূপ।

এখানে রয়েছে ৩২০০ বছর পুরোনো এবং ১১ মিটার উচ্চতার রামেসিস দ্য গ্রেটের মূর্তি— যাকে মিশরের অন্যতম বিখ্যাত ফারাও হিসেবে ধরা হয়। ২০০৬ সালে কায়রো রেলস্টেশনের কাছ থেকে এই মূর্তিটি সরিয়ে এনে এখানে স্থাপন করা হয়।

জাদুঘরের বিশাল সিঁড়ির পাশে রয়েছে প্রাচীন রাজা-রানীদের ভাস্কর্য। উপরের তলার বড় জানালা দিয়ে দর্শনার্থীরা সরাসরি গিজা পিরামিডের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

এই জাদুঘর নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয় ১৯৯২ সালে, আর কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। অনেকের মতে, এটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় পিরামিড নির্মাণের সমান।

তবে এই প্রকল্প বারবার স্থগিত হয়েছে রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত, পরবর্তী সময়ের অশান্তি, কোভিড মহামারি ও আঞ্চলিক সংঘাতের সময় কাজ থমকে যায়।

দেশটির সাবেক পর্যটনমন্ত্রী ও বিশিষ্ট মিশরবিদ ড. জাহি হাওয়াস বলেন, ‘এটা ছিল আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আজ এই জাদুঘর পুরোপুরি চালু হতে দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি দুটি বিষয় চাই— প্রথমত, বিশ্বজুড়ে জাদুঘরগুলো যেন চুরি করা প্রত্নবস্তু কেনা বন্ধ করে। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা রোসেট্টা স্টোন, ফ্রান্সের লুভ জাদুঘরে থাকা ডেনডেরা জোডিয়াক, এবং জার্মানির বার্লিন জাদুঘরে থাকা নেফারতিতির মূর্তিটি যেন ফেরত আসে।’

রোসেট্টা স্টোন হায়ারোগ্লিফিক লিপি পাঠোদ্ধারের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে পরিচিত। এটি ১৭৯৯ সালে ফরাসি সেনারা আবিষ্কার করেছিল, পরে ব্রিটিশরা যুদ্ধের পর দখল করে নেয়।

অন্যদিকে, ডেনডেরা জোডিয়াক একটি প্রাচীন মিশরীয় আকাশ মানচিত্র, যা ১৮২১ সালে ফরাসিরা মন্দির থেকে কেটে নিয়ে যায়। মিশরের দাবি, জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিকরাও আখেনাতেনের স্ত্রী নেফারতিতির মূর্তি পাচার করে নিয়েছিল।

ড. হাওয়াস বলেন, ‘ওই তিন দেশ থেকে এগুলো ফিরিয়ে আনা উচিত সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবে। মিশর বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়েছে, এখন তাদেরও কিছু ফেরত দেওয়া সময় এসেছে।’

তবে ব্রিটিশ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে মিশরের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পায়নি।

শেয়ার
পরবর্তী খবর

খাগড়াছড়ির সহিংসতা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যে নয়াদিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়া

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্যকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এ প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং নিয়মিতভাবে সেই দায় অন্যের ওপর চাপানোর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরও মন্তব্য করেন, সরকারের উচিত হবে আত্মসমালোচনা করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় উগ্রপন্থীদের সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখলের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা।

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাগড়াছড়িতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ভারতের ইন্ধন থাকার অভিযোগ করেছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, একটি মহল অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে এবং ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

খাগড়াছড়িতে সহিংসতার সূত্রপাত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়ি এক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের পর। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ সংগঠনের ডাকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। অবরোধ চলাকালে গত রোববার গুইমারা উপজেলায় সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এ সময় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় অনেকে আহত হন।

ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের পর ঢাকার কূটনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তেজনা দুই দেশের সম্পর্কেও অস্বস্তির ছাপ ফেলতে পারে।

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত