অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নতুন কোচ আর তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দল নিয়ে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে উদ্বোধনী দিনেই তারা পেয়েছিল নেপালকে। সেখানে সফল বাংলাদেশের মেয়েরা।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটিতে নেপালকে তারা হারায় ৩-১ গোলে। বাংলাদেশের হয়ে মোসাম্মাৎ সাগরিকা দুটি ও মুনকি আক্তার একটি গোল করেন। নেপালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন সুকরিয়া মিয়া।
ম্যাচের শুরু থেকেই নেপালের ওপর চাপ তৈরি করে রাখে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল। খেলার ৫ম মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। গোলটা প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু স্বপ্না রানির পাস থেকে পূজা দাস ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন।
এর কিছুক্ষণ পরই গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ম্যাচে জোড়া গোল করা সাগরিকা। ১০ মিনিটের মাথায় আফিদার একটি শট বারে লেগে ফিরে আসে। ১৪ মিনিটে পূজা দাসের বাঁকানো শট অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ২০তম মিনিটে পূজা দাসের আরও একটি শট অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ৩৯তম মিনিটে ইতি একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করার পর বাংলাদেশের হতাশা কাটান সাগরিকা। একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে বল ধরে সাগরিকা নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে পরাস্ত করেন। এতে লিড পায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। প্রথম গোলের তিন মিনিট পরই স্কোরলাইন ২-০ করেন মুনকি। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ইতি খাতুনের পায়ে বল তুলে দেন নেপাল গোলরক্ষক। নেপালের গোলপোস্ট তখন ফাঁকা। ইতির বাড়ানো বল পেয়ে যান বক্সে থাকা মুনকির দিকে। ঠান্ডা মাথায় চিপ শটে নেপাল গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল পোস্টে পাঠান মুনকি।
বিরতির আগে বাংলাদেশ ৩-০ গোলের লিড নিতে পারত। যোগ করা সময়ে সাগরিকাকে বক্সে ফেলে দেন নেপালের সিমরান রায়, রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আফিদা। কিন্তু সেই শট আটকে যায় ক্রসবারে। ফিরতি বলে সাগরিকা শট নিলেও হার মানানো যায়নি নেপাল গোলরক্ষককে।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ গোলরক্ষক স্বর্ণা রানীর ভুলে ব্যবধান কমায় নেপাল। ৫৪তম মিনিটে বাংলাদেশের বক্সে বল বাড়ান নেপাল অধিনায়ক সারাহ বজ্রচারিয়া। স্বর্ণা সামনে এগিয়ে আসেন বল গ্লাভসে নেয়ার জন্য। বল তার গ্লাভসে যাওয়ার আগেই আচমকা টোকায় জালে জড়িয়ে দেন সুকরিয়া মিয়া।
এরপর ম্যাচে নেপালকে সমতায় ফেরার সুযোগ না দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন সাগরিকা। ৫৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ইতির লম্বা করে বাড়ানো বল গিয়ে পড়ে সাগরিকার পায়ে। গায়ে লেগে থাকা নেপালি ডিফেন্ডার মায়া মাসকের বাধা পেরিয়ে, গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল তুলে নেন সাগরিকা।
প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিকের দেখা পেতে পারতেন সাগরিকা। ৮৯তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে একাই বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। বক্সে তখন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে বদলি খেলোয়াড় নবীরন খাতুন। নবীরনকে সুযোগ না দিয়ে নিজেই কোনাকুনি শট নেন সাগরিকা, কিন্তু নেপাল গোলরক্ষকের গায়ে লেগে সেই শট প্রতিহত হলে হ্যাটট্রিক পাওয়া হয়নি তার।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপ জিতেছে। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারার পর টানা জিতে চলেছিল ভারত। তবে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির হলেও বাংলাদেশ তার শক্তিশালী ব্যাটিং ও বোলিংয়ের মাধ্যমে ভারতের দাপটকে ভেঙে দিয়েছে। ফাইনালে বাংলাদেশ ১৯৮ রান তুলে ভারতকে ১৩৯ রানে গুটিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের ইনিংসে শিহাব জেমস (৪০) ও রিজান হোসেন (৪৭)-এর গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস ছিল। উইকেটকিপার ফরিদ হাসানও ৩৯ রান করে দলের স্কোর বাড়াতে সহায়তা করেন। বাংলাদেশ দলের পেসাররা, বিশেষ করে ইকবাল হোসেন ইমন (১৩ উইকেট) ও আল ফাহাদ (১২ উইকেট), পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়েছেন। ফাইনালে ইমন তিনটি উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের ভিত গুঁড়িয়ে দেন।
ভারতের পক্ষে কোনো ব্যাটসম্যান ৩০ রান পেরোতে পারেননি। ১৩৯ রানেই ভারত শেষ হয়ে যায়।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। গত বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল।
জাঁকজকমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইয়ং টাইগার্স অনূর্দ্ধ-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২৪-২৫ (বিভাগীয় পর্যায়) উদ্বোধন করা হয়। রোববার শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়ামে বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন, জেলা ক্রিকেট কোচ রোকনুজ্জামান রাহাত প্রমুখ।
উদ্বোধনী খেলায় পঞ্চগড় জেলা টিম জয়লাভ করে। ৫০ ওভারের খেলায় টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চগড় টিম। ব্যাটিংয়ে লালমনিরহাট টিম ২০ ওভার ৩ বল খেলে ১০ উইকেটে ৫২ রান করে। জবাবে পঞ্চগড় জেলা টিম ১৭ ওভার ২ বল খেলেই ৩ উইকেটেই জয় নিশ্চিত করে ৭ উইকেটে জয়লাভ করে।
উল্লেখ্য, টুর্নামেন্টটি বিভাগীয় ২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও ভেন্যুতে মোট ৪টি টিম অংশগ্রহণ করছে। টিমগুলো হলো পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী টিম। অপরদিকে লালমনিরহাট ভেন্যুতে ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম টিম অংশগ্রহণ করছে।