বইয়ের খবর

বইয়ের খবর

বইমেলায় বনানী রায়ের ২ উপন্যাস

শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। ঔপন্যাসিক বনানী রায়ের দুইটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। ভাষাচিত্র প্রকাশ করেছে ‘শকুন্তলা’ এবং সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে এসেছে স্রোতস্বিনী জীবন-২।

শকুন্তলা :

সন্তানের আগমন সংবাদ স্বাভাবিক নিয়মে মা-বাবার সুখের কারণই হয়। দুঃখিনী শকুন্তলা, যার মাতৃগর্ভে আসার খবরে আনন্দিত হননি পিতা-মাতা কেউই। পিতা বিশ্বামিত্রের মনে পড়ে যায় প্রেমের ছলনা দ্বারা তপস্যাচ্যুত হওয়ার কথা। তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন শকুন্তলার মাতা অপ্সরা মেনকার দিক থেকে, যে দেবরাজ ইন্দ্রের আদেশে বিশ্বামিত্রের কঠোর সাধনা ভঙ্গের দায় নিতে বাধ্য হয়, নীরবে চলে যায় মেনকা।

জন্মের পর কন্যাকে মালিনী নদীতীরে প্রকৃতির কোলে শুইয়ে দিয়ে স্বর্গে ফিরে যায় মা মেনকা। জন্মের গ্লানি নীরবে বুকে লালন করে মালিনী নদী তীরবর্তী বনের একপাশে গড়ে ওঠা মহর্ষি কণ্বের আশ্রমে বড় হয় অপ্সরা কন্যা শকুন্তলা। অপরূপ রুপবতী এই নারীর সারল্য ও কোমল ব্যবহারে আকৃষ্ট হয় সকলে। বনের বৃক্ষ ও পশু-পাখি সবাই তার মায়ায় জড়িয়ে যায়।

একদিন সেই বনে শিকার করতে আসেন মহাপরাক্রমশালি রাজা দুষ্মন্ত। শকুন্তলা দর্শনে যিনি শিকার ভুলে প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েন। প্রেমের জোয়ার ভাসিয়ে নেয় শকুন্তলাকেও। সকলের অগোচরে বিয়ে হয় তাদের, একে অপরকে গ্রহণ করে তারা। শকুন্তলাকে রাণীর বেশে সসম্মানে রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যান প্রেমিক স্বামী দুষ্মন্ত।

তারপর…

দুর্বাসার অভিশাপে দুষ্মন্ত বিরহে কাটতে থাকে অভাগী শকুন্তলার দীর্ঘ প্রহর। অসম্মান আর অপমানের অনলে দগ্ধ হতে থাকে সে। প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে…

বনানী রায়ের ‘শকুন্তলা’ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ভাষাচিত্র প্যাভেলিয়নে (৩৩ নম্বর)।

স্রোতস্বিনী জীবন (২) :

একটি সুন্দর পারিবারিক আবহের মধ্য দিয়ে উপন্যাসটির শুরু। কেন্দ্রে রয়েছে চারুলতা, তাকে ঘিরে ডাক্তার স্বামী রূপ ও কিছু প্রিয় মানুষ এবং আরও কিছু চরিত্র। বিয়ের আগে স্বাধীনভাবে কিছু করার স্বপ্ন দেখত চারুলতা। তারই ধারাবাহিকতায় বিয়ের পর স্বামীর কর্মস্থলে স্থানীয় গরিব ও দুঃস্থ পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নেয় সে। আর তা করতে গিয়ে এলাকার কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের বাধা ও চক্রান্তের মুখোমুখি হতে হয় তাকে।

এ পর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে কিছুটা টানাপোড়েনের সৃষ্টি হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। উভয়ের গভীর প্রেমময় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ সে ভুল বোঝাবুঝিকে ভাসিয়ে নেয়। তবে কাহিনীর একেবারে শেষপ্রান্তে এসে একটি ঘটনার আকস্মিকতায় রূপ ও চারুর দাম্পত্য জীবন বড় রকম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, যখন চারু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে আত্মসম্মানবোধকে। প্রেমের জন্য যেখানে সে কিছুতেই আর আপোস করে না। এখানে এসে উপন্যাসটি অন্য এক মাত্রা বা ব্যঞ্জনা পায়।

উপন্যাসের নায়িকা চারু হয়ে ওঠে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক।

স্রোতস্বিনী জীবন (২) বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় সুবর্ণ’র স্টলে (২৪২-২৪৪ নম্বর)।

যারা বইমেলায় যেতে পারবেন না তারা যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাহিত্য আড্ডা

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় কবি বঙ্গ রাখাল প্রতিষ্ঠিত গোলাম রসুল স্মৃতি পাঠাগারে ‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার গোলক নগরে গোলাম রসুল স্মৃতি পাঠাগারে আয়োজিত সভায় কবি বঙ্গ রাখালের সভাপতিত্বে বরেণ্য লোককবি মোঃ হাসানুজ্জমান, কবি রণভী শের, লেখক সুজন বিপ্লব, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোঃ আশরাফ আলী, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া বাংলা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল গফফার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ইমাম মেহেদী ও লোককবি আব্দুল মজিদ পঞ্চ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফিরোজ আহমেদ, ইউপি সদস্য আলম রায়হান খান, কবি আমিনুর রহমান, কবি কবির হোসেন, কবি অনীক সিদ্দিকী প্রমুখ কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনা করেন।

কবি বঙ্গ রাখালের সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে এই অবরুদ্ধ সময়ে কবি বঙ্গ রাখালের পাঠাগার আন্দোলন ও সাহিত্যচর্চা সমাজ পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা হয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। কূপমণ্ডূকতা, কুসংস্কার ও সামন্ত গোষ্ঠীতন্ত্রের বিপরীতে মৌলবাদবিরোধী, অসম্প্রায়িক, গণতান্ত্রিক, বিজ্ঞানমুখী ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের অনবদ্য ভাষ্য ‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ পাঠককুলে সমাদৃত হবে বলে আলোচকগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিষয়:
পরবর্তী খবর

বইমেলায় বঙ্গ রাখালের কবিতার দুই বই

এবারে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে কবি বঙ্গ রাখাল-এর দুইটি নতুন কবিতার বই— ‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ এবং ‘জন্মান্ধ ঘোড়া’।

‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদশিল্পী মঈন ফারুক। অমর একুশে বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর ২৩৯ নম্বর স্টলে। বইটির মলাট মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।

‘জন্মান্ধ ঘোড়া’ কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদশিল্পী তৌহিন হাসান। বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে অনুপ্রাণন প্রকাশনীর ৮৫-৮৬ নম্বর স্টলে। ‘জন্মান্ধ ঘোড়া’র মলাট মূল্য ২০০ টাকা।

কবি বঙ্গ রাখাল-এর কবিতা সম্পর্কে কবি ও গবেষক সুমন শামস বলেন- কলহমোহনীয় কোনো উর্বশীর মতো ঠোঁটকাটা সুন্দর তাঁর কবিতা। জোয়ানী রোদে পেশি ফুলিয়ে অক্ষর জ্বেলে তারা বাঁচে। স্বঘোষিত মহারাজার মতো তাঁর কবিতার মাস্তান হয়ে ওঠেন তিনি নিজেই। যখন বলেন, ‘আমি আসলে ঝিনাইদহের ছেলে। বিশাল পৃথিবীর এককোণে ঝুলে থাকে ঝিনাইদহ–মুখের ওপর বলতে পারি না। মেজাজটা আজ খারাপ তাই কাউকে কুত্তা-মাগীর ছা বলতেও ছাড়ি না।’

অক্ষরের শরীরহীন মুণ্ডু হাতে নিয়ে তিনি লেখেন শ্বাপদ ঠেঙানো কবিতা। রাজনীতি আর স্তনফোলা ক্ষমতার মাঝখানে শতাব্দীর ধারালো চাকু বসিয়ে দেন তিনি। নির্মোহ নির্দয় এক্ষেত্রে তাঁর কবিতার স্বরাট। প্রেম বিলাসেও খুব সন্তর্পণে তিনি ক্ষমতা ও রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলেন।

পাঠে একটা সুখদায়ক আরামের অনুভূতি থাকে তাঁর কবিতায়। খুব অবলীলায় প্রান্তিক ভাষাকে তিনি জুড়ে দেন কবিতার সাহেবিআনার সাথে। তাতে কবিতার ভাষা মধ্যবিত্ত অহমিকায় নিটোল দাঁড়িয়ে থাকে। সহজের ভেতরে একটা কী যেন অনির্বচনীয়তা ঠুকে দিতে পারেন তিনি। তখন তাঁর কবিতাকে মনে হয় প্রিয়তমার অপার্থিব মুখ। কোনো মোনালিসা নয়; রাজিয়া, রোজিনা অথবা আফরোজা; কিংবা বিনিদিতা তারা।

কবি বঙ্গ রাখালের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা, ২০২০), কবিতার করতলে (প্রবন্ধ, ২০২০), অন্ধ যাজক (কবিতা-২০২১), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ-২০২১), জন্মান্ধ ঘোড়া-২০২৩।

তিনি পেয়েছেন— আবুল মনসুর আহমদ পুরস্কার (প্রবন্ধ-২০২০), ডেইলি স্টার, ঢাকা। জলধি সাহিত্য সম্মাননা (কবিতা-২০২১), ঢাকা। সাহিত্য সম্মাননা-২০২২ (মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা) শেরপুর সংস্কৃতি পরিষদ, শেরপুর, বগুড়া।

নিহারণ, শঙ্খধ্বনি, শব্দকুঠি, দোতারাসহ সম্পাদনা করেছেন বেশকিছু ছোট কাগজ।

বিষয়:
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত