দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন ফরম কিনলেন চিত্রনায়িকা সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার পর মনোনয়ন ফরম কেনেন এই অভিনেত্রী।
এদিন ১০টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়।
শাহনূর বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বিরোধী দলের আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলাম। আমি নিজেও সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করলে আমি তার কথা অনুসারে কাজ করতে চাই। নারীদের জন্য কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।
এর আগে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আরেক অভিনেত্রী সোহানা সাবা।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। আজ থেকে শুরু হওয়া ফরম সংগ্রহ ও জমা চলবে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত ৬২ জন সংসদ সদস্য তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নিজ দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে মোট ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় চার মাস পর, বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে টেলিফোনে বক্তব্য দেবেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। এর আগে ইউরোপের দুটি দেশে একইভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
ফোনালাপ ফাঁসের পর জন জনসম্মুখে বক্তব্যের গুরুত্ব
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল। যদিও সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে ফোনালাপে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া শোনা গেছে। এসব ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডগুলোকে বাদ দিলে, ৫ আগস্টের পর এবারই আগাম জানান দিয়ে শেখ হাসিনা জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের মাঝে শেখ হাসিনার সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি তার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। তবে খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনীতিতে সক্রিয়। নতুন করে ফিরে আসার কিছু নেই।’
নিউইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে এবং তার ও তার বোন শেখ রেহানাকে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যা বলছেন, তা দেশের স্বার্থে বলছেন। দেশকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করা আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা
এদিকে শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যও নিষিদ্ধ ছিল, যদিও চলতি বছরের আগস্টে হাইকোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বাক স্বাধীনতা হরণ’ বলে সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রাজনীতি বিশ্লেষক, লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ‘ফাঁকা আওয়াজ’ এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনা বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিদ্বেষমূলক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মন্তব্য করেছেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার দল রাজনৈতিক নৈতিকতা হারিয়েছে, আর তাদের এসব বক্তব্য বিভ্রান্তিকর।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি শেখ হাসিনাকে ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য ভারতের রচনা করা চিত্রনাট্যের অংশ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এক্সিস্টিং পলটিক্যাল পার্টির জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হবে তখন, যখন তারা কাউন্টার করতে না পারে। এটি নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার ওপরে। তারা যদি সক্ষম হতে পারে, তাহলে তারা কাউন্টার প্রোপাগান্ডা দিয়ে ওটা সামাল দিবে। তাদের যদি সেই সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তারা কিসের রাজনীতি করে? আমার কথা হল, আওয়ামী লীগ বিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরও নাকি বিদেশে শাখা আছে। এখন তারা কী কাউন্টার প্রোপ্যাগান্ডা করছে, তা আমরা দেখতে চাই। সব তো এক তরফা হওয়ার কথা না।’
শেখ হাসিনার বিদেশে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার রাজনৈতিক অবস্থান, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
সূত্র : বিবিসি
চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
একই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
এতে শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। একজন আইনজীবী তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিল, আর তাকে এভাবে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা সন্ত্রাসী। তারা যেই হোক না কেন শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
তিনি বলেন, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী ইউনূস সরকার যদি এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাকেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দেশবাসীর প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান ক্ষমতা দখলকারীরা সর্বক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের উপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইসব নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানাই।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের একজন শীর্ষ নেতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। চট্টগ্রামে মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে মসজিদ, মাজার, গির্জা, মঠ এবং আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি আক্রমণ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার পরে চলছে হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে হয়রানি। আমি এসব নৈরাজ্যবাদী ক্রিয়াকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।