বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য

দেশে প্রথমবারের মতো রোবটের মাধ্যমে পরানো হলো হার্টের রিং

চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল। দেশে প্রথমবারের মতো হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি বা রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরিয়েছে এই হাসপাতালটি।

রোববার দুইজন হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর শরীরে বিনামূল্যে এই রিং পরানো হয়।

এ সার্জারী পরিচালনা করেন হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তার বিশেষায়িত টিম। এটি উদ্বোধন করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন ও কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন উল্লুবি।

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিশ্বের ১৬০টি দেশে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি (রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানো) সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ছয়টি সেন্টার রয়েছে।

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি বর্তমান পৃথিবীতে হার্টের রিং পরানোর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কার্ডিওলজিস্টরা এখনো ক্যাথল্যাবে নিজেরা রোগীদের হার্টের রিং পরান। এর সর্বশেষ আবিষ্কার হলো রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি অর্থাৎ রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানো। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা দূরে থেকে নিখুঁতভাবে হৃদরোগীদের হার্টের ধমনীতে রিং পরান। এই রোবটের দুটি অংশ থাকে একটি হলো রোবটের একটি হাত যা ক্যাথল্যাবে থাকে। আরেকটি থাকে কন্ট্রোল সেকশন যেখান থেকে মূল কার্ডিওলজিস্ট পুরো কার্যক্রমটি দূর থেকে সম্পন্ন করে থাকেন।

রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি বা রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানোর তিন ধরনের সুবিধা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির প্রথম সুবিধা হল হার্টের রিং পরানোর জটিল প্রক্রিয়াটি রোবটের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে করা যায়। রোগীদের জন্য আরেকটি সুবিধা হল হৃদরোগ চিকিৎসকরা সরাসরি এনজিওপ্লাস্টি করতে গেলে যে সময় লাগে রোবটের মাধ্যমে কম সময়ে তা করা সম্ভব।

শেয়ার
বিষয়:
পরবর্তী খবর

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু 

সারাদেশের হাসপাতালে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি এই বছরের একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৪০ জন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যা ছিল বরিশাল বিভাগে।

এই বছরের শুরু থেকে, পহেলা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মোট ১৭৯ জন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার লক্ষ্য করা গেছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪১,৮৩১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি পুরুষ।

মোট আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে। কিন্তু মৃত্যুর হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই মারা গেছে ১০৭ জন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যেহেতু ডেঙ্গু এখনও আক্রমণ করছে, তাই সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজেকে বাঁচানো এবং যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি।

শেয়ার
পরবর্তী খবর

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ, যা জানা জরুরি

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

প্রশ্ন হলো— ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কীভাবে বুঝবেন, কী পরীক্ষা করাবেন, আর কীভাবে চিকিৎসা নিতে হবে?

ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর— যা ১০১ বা ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, এবং কখনো কখনো চামড়ায় লালচে র‍্যাশ। তবে এসব লক্ষণ না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ে কোনো জ্বরকেই অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

ডেঙ্গু হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পূর্ণ বিশ্রাম আর তরল জাতীয় খাবার। যেমন— ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস বা ওরস্যালাইন। তবে অতিরিক্ত পানি খাওয়ার দরকার নেই, বরং শরীরের প্রয়োজন মতো তরল খাবারই যথেষ্ট।

মনে রাখতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না। জ্বরে কেবল প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা অনুরূপ ওষুধ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।

ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। জ্বরের প্রথম দিকে করা যায় এনএস১ এন্টিজেন টেস্ট। পাঁচ দিনের পর করা হয় আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট। পাশাপাশি সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে প্লাটিলেট কাউন্ট ও হেমাটোক্রিট পর্যবেক্ষণ করা হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্লাটিলেট কাউন্ট নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সবচেয়ে জরুরি।

ডেঙ্গু রোগী তিন ধরনের হতে পারে— ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। বেশিরভাগ রোগী এ-ক্যাটাগরির, যাদের শুধু জ্বর থাকে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই।

বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা কিছুই খেতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

আর সি-ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। রোগীদের ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা বা আইসিইউ পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গুর মূল বাহক এডিস মশা সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যার আগে কামড়ায়। এ মশা স্বচ্ছ জমা পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই ঘরের ভেতর-বাইরে কোথাও তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না।

অতএব প্রতিরোধই এখানে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা— ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষার প্রধান উপায়।

মনে রাখতে হবে— সচেতনতা আর দ্রুত চিকিৎসা ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে পারে হাজারো জীবন।

শেয়ার
সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত